Skip to content

খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি

আমরা গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলে বসবাস করি। ফলে অতিরিক্ত গরমের সময় আমাদের মুখে নানান ধরণের সমস্যায় ভুগে থাকি। তার মধ্যে অন্যতম হলো খোলা লোমকূপে উদ্ভূত সমস্যা। আমাদের নাকের চারপাশে, গালে, থুতনিতে, কপালে এরকম ছিদ্র বা লোমপকূপ দেখা যায়। অনেক কম মানুষ রয়েছে যারা লোমকূপজনিত সমস্যায় পরে নি।

খোলা লোমকূপ কি?

লোমকূপ অর্থাৎ ছিদ্র যা আমাদের দেহের একটি অংশ। আমাদের মানবদেহের ত্বকে এই ছিদ্রগুলি প্রায় ০.০২ থেকে ০.০৫ মিলিমিটার হয়ে থাকে যা তেল এবং ঘাম নিঃসরণ করে। এগুলি আমাদের হেয়ার ফলিকলের সাথে সংযুক্ত। আমাদের দেহে প্রায় ৫০ লক্ষ রোমকূপ আছে এবং মুখে আছে ২০ হাজার। যখন এই পোরস একটু বড় হতে শুরু করে তখন আমরা একে খোলা লোমকূপ বলে থাকি।

মুখের খোলা লোমকূপ

মুখের খোলা লোমকূপ

লোমকূপের প্রকারভেদ

লোমকূপ ২ ধরণেরঃ

তৈলাক্ত লোমকূপ

এই ধরণের ছিদ্র তেল গ্রন্থির সাথে সংযুক্ত থাকে। আপনার হাতের তালুতে এবং আপনার পায়ের তালুগুলি বাদে আপনার সম্পূর্ণ ত্বকের পুরো পৃষ্ঠের উপরে রয়েছে। এই তৈলাক্ত লোমকূপ যা পরে পোরস হিসেবে আমাদের বেশিরভাগ মনোযোগ আকর্ষণ করে কারণ এগুলি দেখতে যথেষ্ট বড় হতে পারে। সাধারণত খোলা লোমকূপ বলতে আমরা এই তৈলাক্ত ছিদ্রকে বুঝি।

সোয়েট পোরস বা ঘাম ছিদ্র 

আপনার পুরো ত্বকে ঘাম ছিদ্রও রয়েছে। ঘাম ছিদ্র অতি ক্ষুদ্র। সাধারণত খালি চোখে এই ছিদ্র দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু যখন অত্যধিক সংবেদনশীল হয়, এই ছিদ্রগুলি হাইপারহাইড্রোসিসের কারণে (অতিরিক্ত ঘাম) হতে পারে।

খোলা লোমকূপের ধরণ

ওপেন পোরস বা খোলা লোমকূপ বিশেষত আমাদের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। এই খোলা লোমকূপের জন্য আমাদের অনেককে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর জন্য আমরা অনলাইনে নানান ধরনের ভিডিও বা গুগোলে ঘেটে যা সমাধান পাচ্ছি, তাইই আমাদের মুখে লাগাতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা না জেনেই এই খোলা কোমকূপের উপর যত পারছি তত শ্রম দিয়ে যাই। গ্লু থেকে শুরু করে টুথপেষ্ট, ডিমের সাদা অংশ, কিসব না দিচ্ছি! কিন্তু সবার জানা উচিত আমাদের মূলত তিন ধরণের ছিদ্র (তৈলাক্ত লোমকূপ) রয়েছে। সর্বাধিক উপযুক্ত চিকিত্সা করার জন্য আপনার কোন ধরণের রোমকূপ রয়েছে তা সনাক্ত করতে পারলে ভাল হয়। তাই খোলা লোমকূপের সমস্যা সমাধান সন্ধানের আগে, আপনার কি ধরণের পোরস আছে তা বুঝতে কিছুটা সময় নিন।

আমাদের দেহে ৩ ধরনের খোলা লোমকূপ রয়েছে-

(১) ও-আকারের (O)
(২) ইউ-আকারের (U) এবং
(৩) ওয়াই-আকারের (Y)

“ও”, “ইউ” এবং “ওয়াই” কেন? এই বর্ণগুলি আপনার মুখের খোলা লোমকূপের আকৃতির অবস্থা জানান দিয়ে থাকে।

এই “ও”, “ইউ” এবং “ওয়াই” আকারের রোমকূপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে!

O- আকৃতির লোমকূপ

ও-আকৃতির লোমকূপ সাধারণত আমাদের মুখের টি-জোনে ঘটে। আপনার যদি তৈলাক্ত ধরণের ত্বক হয়ে থাকে, বা যদি আপনার পিম্পল বা ব্রণের মত সমস্যা থাকে, তবে আপনার মুখে এই ধরণের রোমকূপ দেখা দিতে পারে। এই পোরসগুলির বাইরের দিকটা বৃত্তাকার আকারের দেখে এর এমন নামকরণ। এটি মুখের লোম গ্রন্থিকোষগুলিতে অতিরিক্ত তেল জমা হওয়ার কারণে হয়। সময়ের সাথে সাথে, এই লোমকূপগুলো আরও প্রসারিত হয়।

O আকৃতির লোমকূপ

O আকৃতির লোমকূপ

ও-আকৃতির লোমকূপগুলি অবশ্যই যত্ন নেয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত তেল (যা আপনার ছিদ্রগুলি আটকে দেয়) আশেপাশের ধুলিকণা এবং ময়লার সাথে আমাদের মৃত কোষগুলির সাথে মিশে ব্ল্যাকহেডসে পরিণত করে। এবং ব্ল্যাকহেডস লোমকূপকে আরও বড় করতে সাহায্য করে।

আমাদের অনেকেরই পরে তাদের বের করে দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তবে আপনি যদি এগুলিকে বেশি বের করেন তবে আপনার ত্বকের ডার্মাল অংশের কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ফলে আপনার লোমকূপকে আরও বড় করে তুলে।

U- আকৃতির লোমকূপ

ইউ-আকৃতির লোমকূপ সাধারণত যাদের ডিহাইড্রেটেড ও শুষ্ক ত্বক দেখা যায় । U- আকারের ছিদ্রগুলি ঠিক “U” অক্ষরের মতো দেখতে লাগে না তবে ডিম্বাকৃতি হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ইউ-আকারের লোমকূপ শুষ্ক ত্বকে ২৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ বা মহিলাদের মুখে বেশি দেখা যায়। এই ধরণের খোলা লোমকূপ ময়শ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ঠিকমত প্রয়োগ না করার ফলে হয়ে থাকে।

U আকৃতির লোমকূপ

U আকৃতির লোমকূপ

আমাদের মুখের ত্বকের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে কোলাজেন। ধীরে ধীরে কোলাজেন হ্রাসের কারণেও এই ধরণের লোমকূপ দেখা দিতে পারে।

Y-আকৃতির লোমকূপ

ও-আকৃতির লোমকূপগুলি যেমন বৃত্তাকার আকারের হয় তার বিপরীত দেখতে ওয়াই আকারের লোমকূপ।এই ধরণের ছিদ্র পানির ফোটার মতো দেখায় এবং সাধারণত গালের উভয় পাশে ছড়িয়ে থাকে। বার্ধক্যের সাথে সাথে ওয়াই-আকৃতির লোমকূপগুলি হতে পারে।

Y আকৃতির লোমকূপ

Y আকৃতির লোমকূপ

আমাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে, কোলাজেন ধীরে ধীরে আমাদের শরীর এবং ত্বক থেকে হারাতে থাকে। এটি আমাদের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করতে পারে যা আমাদের মুখের লোমকূপকে আরো বড় করে তোলে।

আপনার এখন কোন ধরণের পোরস রয়েছে? তা খুঁজে বের করুন।

খোলা লোমকূপ হওয়ার মূল কারণ

আমাদের মুখে পোরস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি কারণ হল-

বংশগত

প্রত্যেকের মুখে লোমকূপ থাকে তবে বংশগত কারণে আমাদের লোমকূপগুলির আকার একে অপরের থেকে পৃথক হয়, তাই কিছু লোকের মুখের লোমকূপ অন্যের চেয়ে কম থাকে। এছাড়াও, প্রাকৃতিকভাবে, পুরুষদের সাধারণত মহিলাদের চেয়ে বড় এবং আরও সুস্পষ্ট লোমকূপ হয়ে থাকে।

অতিরিক্ত তৈলাক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার

ক্লিনজিং এর পর ময়েশ্চারাইজার লাগানো সবার জন্যই দরকার। কিন্ত কেউ যখন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অতিরিক্ত তৈলাক্ত লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করছে তাদের জন্য বলি এটি লোমকূপের আকার অনেক গুণ বড় করতে সাহায্য করছে। ফলে আপনার ত্বকে জন্ম নিবে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস।

তৈলাক্ত ত্বক

অত্যধিক সিবাম (প্রাকৃতিক তেল) নিঃসরণের ফলে তৈলাক্ত ত্বক হয়ে থাকে। আপনার যখন প্রাকৃতিকভাবে তৈলাক্ত ত্বক থাকে তখন আপনার লোমকূপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বার্ধক্য জনিত কারণ

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের কোলাজেন হ্রাস পায় ফলে ইলাস্টিসিটি এবং টাইটেনিং কমতে থাকে যার ফলে লোমকূপ বড় হয়ে যায়।

কমেডোজেনিক পণ্য ব্যবহার

কসমেটিকস বা স্কিনকেয়ার পণ্যগুলি সাধারণত কমেডোজেনিক পণ্য ব্যবহার করা উচিত।আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি অনুসারে, কমেডোজেনিক পণ্যগুলিতে এমন উপাদান রয়েছে যা লোমকূপকে বন্ধ করে দেয় এবং ব্রণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ কমডোজেনিক মেকআপে বিশেষত লোমকূপের মধ্যে যাতে আটকে না পরার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ব্রণ বা সেন্সিটিভ ত্বকের জন্য ভালো।

লোমকূপ সিবামের অতিরিক্ত নিঃসরণ থেকে তৈরি হয়। সুতরাং, যদি আপনি তৈলাক্ত ত্বক এবং ব্রণ এর ঝুঁকিতে পড়ে থাকেন তবে কমেডোজেনিক পণ্যগুলি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মি

আপনার যদি বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পরে কিন্ত সানস ক্রিম না লাগিয়ে সূর্যের আলোতে চলাফেরা করেন তবে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। কারণ সূর্যের অতিবেগুনী (ইউভি) বিকিরণ ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়াগুলিকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং যার ফলে আমাদের ত্বকে লোমকূপের সৃষ্টি হতে পারে।

খোলা লোমকূপকে প্রাকৃতিকভাবে দূর করুন

আমরা কখনই আমাদের খোলা লোমকূপকে  একেবারেই গায়েব করে দিতে পারব না। কিন্তু তা ছোট করা সম্ভব। আমাদের প্রকৃতিতেই এমন অনেক কিছু রয়েছে যা আমাদের লোমকূপকে ছোট করতে সাহায্য করে থাকে।

বরফের কিউব

বরফ কখনই পোরসকে পুরোপুরিভাবে ছোট করে দিতে পারে না তবে মেকআপের আগে যদি বরফ দিয়ে ঘষা যায় তবে পোরস সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা ছোট হয়।

হলুদ

হলুদ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসঁছে। এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরী জাতীয় উপাদান আছে যা ত্বকের যেকোনো প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে।

টমেটো

টমেটো মূলত এসিডিক। অর্থাৎ আমাদের মুখে উৎপন্ন সিবাম বা তেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া মুখে পিগমেন্টেশন কমায়। একটা পাকা টমেটো থেকে ভিতরের রস নিয়ে তা মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিটের মত অপেক্ষা করে মুখটা ধুয়ে ফেলুন।

পেঁপে

মূলত পাকা পেঁপে আমাদের মুখের ত্বকের লোমকূপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি মুখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করায় ভূমিকা রাখে।

শসার রস

শসাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা লোমকূপকে ছোট করে তুলে এবং এটি ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি ও অ্যান্টি-এজিং এর জন্য সাহায্য করে। শশা ব্লেন্ডারে রস করে তা বরফ করে মুখে আলত করে ঘষে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।

গ্রীন টি

গ্রীন টিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমানে রয়েছে। কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষণ গ্রীণ টি ফুটিয়ে তা কিছুটা ঠান্ডা করে মুখে লাগাতে পারেন। এটি টোনার হিসেবেও কাজ করে। আর টোনারই মুখের পোরসকে ছোট করতে সাহায্য করে।

কলার খোসা

কলার খোসাও পোরসকে ছোট করতে সাহায্য করে। কলার খোসার ভিতরের অংশটি মুখে কিছুক্ষণ ঘষতে হবে। পরে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়া কলার খোসা মুখ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

গোলাপ জল

গোলাপের পাপড়ি মুখের ত্বকের জন্য খুব ভালো কাজ করে। মুখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে, ত্বককে কোমল করতে অনেক আগে থেকেই মেয়েদের রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুখটা ভালো করে ক্লিনজিং করে টিস্যু বা কটন বলের সাহায্যে আলতোভাবে পুরো মুখে গোলাপ জল দিয়ে দিতে হবে। তারপর গোলাপ জল শুকিয়ে গেলেই কোনো একটা ভালো ময়েশ্চারাইজার ক্রিম দিতে হবে।

লেবু

লেবু অনেকের এলার্জি হতে পারে। তাই মুখে দেয়ার আগে ঘাড়ে দিয়ে একটু চেক করে নিতে হবে যে এলার্জি আছে কিনা। শসাকে গোল গোল পাতলা করে কেটে কয়েক ফোটা লেবুর রস নিয়ে মেখে, শসার স্লাইসগুলি মুখে বিছিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

Suriya Jaman Barsha
Follow Me