একটু টক আমাদের সবারই প্রিয়। সাদা ভাতের সাথে কিংবা খিচুড়ীর সাথে লেবু না হলে আজকাল জমেইনা। ছোট একটি ফল এই লেবু, গাছও খুব একটা বড় নয়। লেবু গাছ লাগাতে পারেন আপনার শৌখিন বেলকোনি কিংবা আপনার বাড়ির ছাদে। এই ছোট ফলটিতে রয়েছে শত পুষ্টিগুন।
লেবুতে রয়েছে ৬ ভাগ সাইট্রিক অ্যাসিড, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৫, বি-৩, বি-১, বি-২, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট এবং প্রোটিন ইত্যাদি। লেবুর একটা প্রধান উপকারিতা হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির তৈরি করা রোগ বালাই দূরীকরণ এবং শরীরের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
আরেকটি বড় উপকারিতা হষ এটি ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে। নিয়মিত সকালে খালি পেটে এক কাপ পাকা লেবুর রস মেশানো উষ্ণ জল খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। আর যদি সাথে যোগ করেন মধু, তাহলেতো জাদু! লেবুর কত গালভরা নাম কাগজি লেবু, পাতি লেবু, কমলা লেবু, মোসাম্বি লেবু, গন্ধরাজ, বাতাবি লেবু ও গোড়া লেবু ইত্যাদি।
এবার আসুন জেনে নেই, ১০০ গ্রাম লেবুর রসে যে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে
১) শক্তি ৪৮ কিলো ক্যালরি
২) কার্বোহাইড্রেট ৯.৩২ গ্রাম
৩) প্রোটিন ১.১০ গ্রাম
৪) কোলেষ্টেরল ০০ গ্রাম
৫) মোট আশ ২.৮০ গ্রাম
৬) ফোলিয়েট ১১ মাইক্রো গ্রাম
৭) নিয়ামিন ১৫ মাইক্রো গ্রাম
8) রেটিনল সমতুল্য প্যানথোটিক এসিড .১৯০ মাইক্রো গ্রাম
৯) পাইরিডক্সিন .০৪০ মাইক্রো গ্রাম
১০) ক্যালসিয়াম ০৫ মিঃগ্রাঃ
১১) লৌহ ০.৭ মিঃগ্রাঃ
লেবুর উপকারিতা
ক) লেবুতে আছে ক্যান্সার বিরোধী ২২ প্রকারের যৌগ। লেবু ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
খ) লেবুর রস ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে নিয়মিত সকালে পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি হ্রাসে দারুণ ভূমিকা রাখে।
গ) লেবু আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ঘ) লেবু বুকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করে।
ঙ) লেবু অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
চ) লেবুতে বিদ্যমান ইলেকট্রোলাইটস (পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি) আপনাকে সর্বদা হাইড্রেট রাখে, শরীরে যোগান দেয় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মত প্রয়োজনীয় উপাদানের।
ছ) লেবুতে বিদ্যমান ফ্ল্যাবোনয়েড শরীরের ভাইরাস প্রতিরোধ করে, এটি শরীরকে ফিট রাখে। শরীরের পিএইচ লেভেল উন্নত করে। পিএইচ লেভেল যত উন্নত, শরীর রোগের সাথে লড়াই করতে তত সক্ষম। তাঁর মানে করোনা প্রতিরোধে লেবু খেতে পারেন।
জ) যাঁরা দীর্ঘদিন লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত লেবু খাবেন। উষ্ণ কিংবা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সকালে নাশতা করার আধা ঘণ্টা আগে খেয়ে নিলে দারুন উপকার পাবেন।
ঝ) লেবুর সাইট্রিক এসিড আপনার হজম-তন্ত্রকে উন্নত রাখে। এটা মেটাবলিজম বা হজমশক্তি বাড়ায়। দারুন খানাপিনার পর লেবু খেয়ে নিলে সহজেই হজম হয়ে যাবে।
ঞ) লেবুতে থাকে পেকটিন-ফাইবার যা আপনার খিদে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে ওজন দ্রুত কমবে।
ট) স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁতের আঘাতজনিত ব্যথা কমায়।
ঠ) লেবু শরীরের বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
ড) লেবু আপনার নার্ভাস-সিস্টেমে দারুণ কাজ করে। লেবুর পটাশিয়াম আপনার বিষণ্ণতা দূর করতে সহায়ক।
ঢ) লেবু শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
ণ) যাঁদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত খাবার গ্রহণের পূর্বে এক চামচ লেবুর রস খেলে দারুণ কাজে লাগবে। এইজন্যে করোনা প্রতিরোধে অনেকে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
ত) গর্ভবতী নারীদের জন্য লেবু পানি বেশ উপকারী । লেবুপানি শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না, বরঞ্চ গর্ভের শিশুরও অনেক উপকার করে। লেবুর ভিটামিন ‘সি’ ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।
থ) পেট পরিষ্কার ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে সহায়তা করে।
দ) এটি শরীরের রক্তবাহী ধমনী ও শিরাগুলিকে পরিষ্কারে কার্যকরী।
ধ) লেবু রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
আরও পড়ুনঃ সিলেটের প্রসিদ্ধ সাতকরার আদ্যোপান্ত
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ক) ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে অনেকেই খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়ে কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য পুষ্টির অভাবে ভোগে। ফলে লেবু পানি পান শুরু করলে শরীরে ক্লান্তিভাব চলে আসে।
খ) অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হয়। পেট ফাঁপাসহ নানা ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
গ) লেবুর শরবত বেশি পান করাও অনুচিত, দূর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
ঘ) লেবুর শরবত বেশি পান করলে শরীর থেকে অনবরত বিষাক্ত পদার্থ বের করে। এতে অস্বাভাবিক রকমের বাথরুমে যাওয়া আসা লাগতে পারে যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ অস্বস্তিকর।
- পরোপকারী লেবু - March 16, 2019
- জয়ফল বিচিত্রা - February 8, 2019
- ছাদবাগানে চাষ করুন অধিক পুষ্টিসম্পন্ন মাইক্রোগ্রিন - January 27, 2019
Pingback: লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 200 | HealthinfoBD
Pingback: লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা | HealthinfoBD
Comments are closed.