পেঁপে( বৈজ্ঞানিক নাম Carica papaya), এটি Caricaceae পরিবারের সদস্য। একটি ফল যা মানুষ কাচা তথা সবুজ অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খেয়ে থাকে। পেঁপে অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি ও ফল। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগ উপশমে পেঁপের ব্যবহার হয়ে আসছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে যা থাকে তা নিম্নরূপ:
উপাদান | পরিমাণ |
আমিষ | ০.৬ গ্রাম |
স্নেহ | ০.১ গ্রাম |
খনিজ পদার্থ | ০.৫ গ্রাম |
ফাইবার | ০.৮ গ্রাম |
শর্করা | ৭.২ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৫৭ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৬.০ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৬৯ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.৫ মিলিগ্রাম |
খাদ্যশক্তি | ৩২ কিলোক্যালরি |
এছাড়াও পেঁপের কিছু গুনাগুণ চলুন জেনে নেই-
- হজমে সহায়তা করে।
- পেঁপেতে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ক্রিমি বিনাশের ক্ষেত্রে পেঁপে এটি ফলপ্রদ ওষুধ।
- রুপচর্চায় বহুল ব্যবহৃত ।
- চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল।
- কাঁচা পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্যের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
এই পর্বে আমরা পেঁপে পাতার ভাইরাসজনিত ও কুঁচকানো রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
পেঁপের ভাইরাসজনিত পাতা কুচকানো রোগ
লক্ষণ
এ রোগ হলে গাছে কুচকানো ও কোঁকড়ানো পাতা দেখা দেয়। পাতা নিচের দিকে বা ভেতরের দিকে গুটিয়ে যায়। শুরুর দিকে উপরের পাতায় এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়।পাতা খসখসে হয়। গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়।
বাহক
মূলত সাদা মাছি এই রোগের জন্য দায়ী।এই মাছি ভাইরাস বহন করে এক গাছ থেকে অন্য গাছে গিয়ে খুব দ্রুত রোগের বিস্তার ঘটায়।
![পেঁপের রোগবালাই ও এর দমন ব্যবস্থা - পর্ব ১ 2 Leaf curl diseases of papaya 1](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/10/Leaf-curl-diseases-of-papaya-1.jpg)
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
১) জাব পোকাও সাদা মাছি এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
২) বীজবপনের সময় মাটিতে কার্বোফিউরান ব্যবহার করা।
৩) জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (সাদা মাছির বংশবৃদ্ধি সীমিত করা)
প্রতিরোধ্মূলক ব্যবস্থাপনাঃ
১) ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা।
২) ভাইরাসমুক্ত বীজ বা চারা ব্যবহার করা।
৩) রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা।
৪) উপকারী পোকামাকড় রক্ষা করা।
রিংস্পট বা মোজাইক রোগ
লক্ষণ
১) এ রোগ হলে আক্রান্ত গাছের পাতায় সবুজ ও হলুদ রংয়ের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃতির ও আকারে ছোট হয়।
২) ক্লোরোপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে পাতায় হলদে-সবুজ মোজাইকের মতো দাগ পড়ে ।
৩) কান্ড পাতার বোঁটা ও ফলে তৈলাক্ত বা পানি সিক্ত গাঢ় সবুজ দাগ সৃষ্টি হয়।
৪) অপেক্ষাকৃতো কম বয়সের পাতায়ই রোগের লক্ষণ প্রথম প্রকাশ পায় ।
৫) আক্রমণ বেশী হলে পাতায় বহুল পরিমানে মোজায়িক সৃষ্টি হয়,পাতা আকৃতিতে ছোট ও কুকড়ে যায়,গাছের মাথায় বিকৃত আকৃতির ক্ষুদ্রাকায় কিছু পাতা লক্ষ্য করা যায়।অন্যান্য পাতা ঝরে পড়ে। কখনো কখনো পাতার কেবল শিরাগুলো থাকে।
বাহক
জাব পোকা ও সাদা মাছি দ্বারা পেঁপে গাছে পেঁপের রিংস্পট রোগের ভাইরাস সংক্রমিত হয়।কোন আক্রান্ত উদ্ভিদ থেকে জাব পোক খাদ্য গ্রহণ করলে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ভাইরাস পোকার দেহে চলে আসে এবং সাথে সাথে কোন সুস্থ উদ্ভিদে বসলে উহা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়।
![পেঁপের রোগবালাই ও এর দমন ব্যবস্থা - পর্ব ১ 3 Ringspot of Papaya 1](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/10/Ringspot-of-Papaya-1.jpg)
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
১) জমিতে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাথে সাথেই রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২) জাল দিয়ে পুরো জমি ঢেকে ফেলতে হবে যেন এফিড নামক পতঙ্গ দ্বারা নতুন গাছ আক্রান্ত না হতে পারে ।
৩) চারা লাগানোর প্রথম থেকেই নিয়মিত পেস্টিসাইড স্প্রে করলে এফিড পতঙ্গ দ্বারা রোগ ছড়ায় না।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
উন্নত জাতের চারা ব্যবহার করতে হবে। রোগের জীবাণু ধারণ করে এমন ফসল চাষ থেকে বিরত থাকতে হবে । ক্রপ রোটেশন অনুসরণ করতে হবে। রোগাক্রান্ত যেকোনো অংশই অপসারণ করে ফেলতে হবে।প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি ও হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ উৎস ও উপকারিতা - October 15, 2020
- পেঁপের রোগবালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - October 6, 2020
- ফুল কথন - March 25, 2019