Skip to content

বাগানে রেড লেডি পেঁপে চাষ

তীব্র গরমে পেঁপের জ্যুস কে না খাই আমরা! এক গ্লাস ঠান্ডা পেঁপের জ্যুস নিমিষেই হৃদয়কে ঠান্ডা আর মনকে করে দেয় চাঙ্গা। আর সাথে যে এক্সিঅক্সিডেন্ট নিচ্ছি, তাঁর উপকারিতা বলে শেষ করার জো নেই। পেঁপে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। কাঁচা অবস্থায় পেঁপে সবজী হিসেবে বিভিন্নরকম সুস্বাদু রান্নায় ব্যবহার করি আমরা। দেশে বর্তমানে পেঁপের বাজার বেশ গরম। পথে-ঘাটে পেঁপের জ্যুস হিসেবে মানুষ অহরহ খাচ্ছে এর জ্যুস। কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য আছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে চাষ করা পেঁপের একটি জনপ্রিয় জাত রেড লেডি ভ্যারাইটি।

রেড লেডি হাইব্রিড পেঁপে জাতের বৈশিষ্ট্য

ক) রেডলেডি জাতের প্রত্যেকটি গাছই উপযুক্ত পরিবেশে পেঁপে দেয়।

খ) এটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল খাটো প্রজাতির পেঁপে গাছ।

গ) রেডলেডি জাতের পেঁপে গাছ উচ্চতায় ১০ ফিট পর্যন্ত হতে পারে।

ঘ) ৬০-৮০ সেমি উচ্চতা বিশিষ্ট হলেই ফল ধরা শুরু হয়।

ঙ) প্রতিটি রেড লেডি জাতের পেঁপে গাছে ৬০-১৩০ টি পর্যন্ত ফল ধারন করতে পারে।

চ) ফলের রং লাল-সবুজের মিশ্রণে হয়ে থাকে।

ছ) আকারে এরা বেশ বড় হয়।

জ) ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঝ) ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে।

ঞ) এর ভক্ষাংশ পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদে বেশ মিষ্টি।

ট) ফল সুগন্ধযুক্ত।

ঠ) কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই বাজারজাত করা যায়।

ড) পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলে দূর দুরান্তে বাজারজাত করা যায়। ফর্মালিনযুক্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

ঢ) এই জাতের পেঁপে রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা আছে।

ণ) এই জাতের জীবন কাল ২ বছরের অধিক হয়।

Papaya benefits

পেঁপের বীজেও আছে নানবিধও ঔষধি গুণ

বীজ সংগ্রহ

চায়না ও তাইওয়ান দুই ভ্যারাইটির রেড লেডি বীজ পাওয়া যায়। তবে তাইওয়ানের বীজের ফলাফল এখন পর্যন্ত ভাল। অনেক সময় নার্সারীতে ভুল জাতের বীজ রেড লেডি পেঁপের বীজ বলে বিক্রি করা হয়। তাই অভিজ্ঞদের নিয়ে বীজ কেনাই ভাল।

প্রতি গ্রামে বীজের সংখ্যা ৬০-৭০টি। হেক্টর প্রতি ৭০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। সে হিসেবে ৩০০০-৩২০০ চারা দিয়ে ১ হেক্টর জমিতে পেঁপে চারা লাগানো যায়। বাগানে করতে চাইলে ছোট প্যাকেটের বীজ ক্রয় করাই শ্রেয়। এই জাতের পেঁপে গাছ ছাদবাগানে বড় ড্রামেও চাষ করা খুবই সহজ।

আরও পড়ুনঃ সৌন্দর্য্যচর্চায় পেঁপে

চারা তৈরি

বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভেজানোর পর ছোট পলিতে করে আবাদ ট্তেরে চারা তৈরি করতে হয়। পলি ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৬ সেঃ মিঃ আকারে ব্যাগে সম পরিমাণ বেলে দোআঁশ মাটি, পটিং মিক্স ও কম্পোস্ট বা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে পলি ব্যাগে ভর্তি করে নিতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্যে ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে একটি এবং পুরাতন বীজ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। একটি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিৎ নয়।

ড্রামে বা জমিতে চারা রোপন

১.৫ থেকে ২ মাস বয়স হলে চারা রোপন করতে হবে। জমির ক্ষেত্রে ২ মিটার দূরে ৬০X৬০X৬০ সেমি আকারে গর্ত করে রোপনের ১৫ দিন পূর্বে গর্তের মাটির সার মিশাতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ২ সারির মাঝখানে ৫০ সেঃ মিঃ নালা রাখতে হবে।

ছাদবাগানে রোপনের ক্ষেত্রে মাঝারী সাইজের ড্রাম অর্ধেক করে কেটে দুটি পাত্র তৈরি করে নিতে হবে। মাটি ভর্তি করার আগেই ড্রামের নিচে দুই-তিনটি ছিদ্র করে রাখতে হবে। এরপর ৫০-৫০ ভাগ পটিং মিক্স, ভার্মিকম্পোস্ট দিয়ে ড্রাম পূর্ন করে নিতে হবে। এরপর সেখানে চারা রোপন করতে হবে।

সার প্রয়োগ

চারা রোপনের সময়

চারা লাগানোর পর নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ হবে। শেষ ফল সংগ্রহের পূর্বেও সার প্রয়োগ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ঢেঁড়সের অনন্য স্বাস্থ্যগুণ

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে। গাছের গোড়া মাটি নিড়ানি দিয়ে হালকা করে দিতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল ধরলে কিছু ফল পেরে নিয়ে হালকা করে দিলে বাকি ফলগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। পেঁপে গাছে বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগ করে বেশ সুফল পাওয়া যায়।

ফল সংগ্রহ

পেঁপে গাছে সাধারণত ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে। পুষ্ট হওয়ার সময় কোন কোন ফলে হলুদ রং ধারন করবে। পুষ্ট ফলে কিছু দিয়ে খোচা দিলে থেকে পানির মত তরল আঠা বের হবে। অপুষ্ট ফল থেকে দুধের মত ঘন আঠা বের হবে।

ফলন

রেডলেডি জাতের পেঁপে থেকে ৫০-১২০ টি ফল পাওয়া যায়।

Ahmed Imran Halimi
Follow Me