Skip to content

ঘরোয়া পরিবেশে প্রস্তুত করুন জৈব কীটনাশক – পর্ব ১

সবজি ও ফলমূল চাষে কীটনাশক একটি পরিচিত নাম। রোগ-বালাই ও কীটপতঙ্গ মুক্ত খাদ্য নিশ্চিন্তে কীটনাশক অপরিহার্য নাম। তবে সেটি যদি রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ হয়ে থাকে, তবে এর ব্যবহার ও খাদ্যে সংমিশ্রণ নিয়ে ঝুঁকি থেকেই যায়। অনেক সময়ই কীটনাশক প্রয়োগকারীর সঠিক জ্ঞানের অভাবে খাদ্যে যুক্ত হয়ে যেতে পারে বিষাক্ত কেমিক্যাল। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে জৈব কীটনাশকের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কৃষি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আজকের পর্বে আমরা আমাদের হাতের নাগালেই থাকা দুটি উদ্ভিদ দিয়ে খুবই প্রয়োজনীয় দুটি জৈবনাশকের প্রস্তুত-প্রণালী, ব্যবহার ও উপকারিতা জানব।

জৈব কীটনাশক – নিম পাতা

প্রধান উপকরণ

১) পরিষ্কার পাত্র,

২) পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি, 

৩) বাটা কাঁচা নিম পাতা, 

৪) সাবান/ সাবান গুঁড়া/ তরল সাবান ( সাধারণ সাবান, কাপড়ধোয়ার সাবান, থালা-বাসন পরিষ্কার করার শুকনো/ তরল সাবান, শ্যাম্পু, হ্যান্ডসোপ ইত্যাদি)।      

প্রণালী

ক) একটি পরিষ্কার পাত্রে ২.৫লিটার পানি নিয়ে তাতে ২৫০গ্রাম বাটা কাচা নিম পাতা ২৪ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর মিশ্রণ ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে। 

খ) ছাঁকন শেষে যেই মিশ্রণ পাওয়া যাবে তার সাথে ৩চা-চামুচ সাবান গুঁড়া ভালোভাবে ঝেঁকে ও মিশে নিতে হবে।

এভাবেই প্রস্তুত হয়ে গেল নিম পাতার জৈব কীটনাশক। এখন সাথে সাথেই এটি বাগানে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগের সময়

সন্ধ্যেবেলা। 

জৈব কীটনাশক - নিম পাতা

নিমের রস

ব্যবহার ও উপকারিতা

এক কাপ করে বাগানের প্রতিটি গাছের গোঁড়ায় দিলে পিঁপড়া, মাটির নিচে অবস্থানকারী কাটুইপোকা, উরচুঙা ও সাদাকীড়া, পাতার রস শোষনকারী জাবপোকা, থ্রিপস, ছাতরা পোকা, স্কেল পোকা, পাতা সুরঙ্গকারী পোকা, গাছ ফড়িং, পাতা ফড়িং ও সাদা মাছি, পাতা মোড়ানো পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা, বিছা পোকা, ফ্লি বিটল, চ্যাপার বিটল, কপির সরুই পোকা (ডায়মন্ড ব্যাক মথ) এবং শামুক ইত্যাদি গাছকে আক্রমণ করে না বা নিজেদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

ক) নির্দিষ্ট পোকা দমন করা যায়, নির্দিষ্ট প্রজাতির পোকা ছাড়া অন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা কম থাকে।

খ) রাসায়নিক কীটনাশক থেকে কম ক্ষতিকর। 

গ) পরিবেশে সহজে ভেঙে যায় (biodegradable) বা নষ্ট হয়ে যায় তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় না। পরিবেশ বান্ধব।

ঘ) রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার না করেই স্বাস্থ্যকর ও শতভাগ জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়।

সতর্কতা

ক) যেহেতু জৈবিক প্রক্রিয়ায় বা প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক তৈরী করা হচ্ছে সেহেতু মাটির পাত্র ব্যবহার করলে ভালো হয়। 

খ) বিশুদ্ধ পানিতে কোনোরুপ ক্ষতিকর পদার্থ, অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা আয়ন দ্রবীভুত থাকবে না।

গ) সাবান গুঁড়া যেন ভালোভাবে পানির সাথে মিশে যায় তাই আগেই অল্প পরিমাণ পানিতে গুলিয়ে নিতে হবে।

ঘ) স্প্রেয়ারের স্প্রে নলের ছিদ্রপথে যেন আটকে না যায় তাই মিশ্রণ খুব ভালোভাবে ছেঁকে তারপর স্প্রেয়ারে ব্যবহার করা।

ঙ)  সন্ধ্যাবেলা ছাড়া দিনের অন্য সময়এই জৈব কীটনাশক প্রয়োগ করলে এর কার্যকারিতা আশানুরূপ হয় না।

চ) ফুল ফোটার পর প্রয়োগ করা উচিত নয়।

জৈব কীটনাশক – পাতি লেবুর রস

প্রধান উপকরণ

১) পরিষ্কার পাত্র,

২) পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি, 

৩) পাতি লেবুর রস

৪) কাঠের কয়লার গুঁড়ো ছাই (রান্নার উনুন থেকে সংগ্রহ করে)

৫) পরিষ্কার কাপড় ( ছাঁকনি হিসেবে ব্যবহারযোগ্য)

প্রস্তুত প্রণালী

ক) একটি ছোট পরিষ্কার বাটিতে পাতি লেবু চিপে রস বের করে নিতে হবে।

খ) রান্নার উনুন থেকে কাঠ কয়লা সংগ্রহ করে তা মিহিগুঁড়ো বা পাউডার ছাই বানিয়ে আরেকটি পরিষ্কার পাত্রে নিতে হবে।

গ) একটি পরিষ্কার পাত্রে ১ লিটার পানি নিয়ে তাতে ৫০ মিলিলিটার পাতিলেবুর রস ও ৫০গ্রাম উনুনের কাঠকয়লার মিহিগুঁড়ো ছাই ভালোভাবে ঝেঁকে মিশিয়ে নিবেন।

ঘ) এরপর মিশ্রণটিকে ভালোভাবে কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। 

ঙ) ছাঁকন শেষে তরলটি জৈব কীটনাশকরূপে প্রস্তুত হয়ে যাবে। এটি সাথে সাথেই বাগানে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগের সময়

প্রখর রোদ ছাড়া যেকোনো সময়।

জৈব কীটনাশক - পাতি লেবুর রস

পাতি লেবুর রস

ব্যবহার ও উপকারিতা

ক) বাগানের প্রতিটি গাছে ভালোভাবে স্প্রে করলে ক্ষতিকর বিটলস, এফিড (জাবপোকা), ক্ষতিকর মাকড় দূর হয়।

খ) নির্দিষ্ট পোকা দমন করা যায়, নির্দিষ্ট প্রজাতির পোকা ছাড়া অন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা কম থাকে।

গ) রাসায়নিক কীটনাশক থেকে কম ক্ষতিকর।

ঘ) পরিবেশে সহজে ভেঙে যায় (biodegradable) বা নষ্ট হয়ে যায় তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় না। পরিবেশ বান্ধব।

ঙ) রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করেই স্বাস্থ্যকর ও শতভাগ জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়।

আরও পড়ুনঃ পরোপকারী লেবু

সতর্কতা

ক) যেহেতু জৈবিক প্রক্রিয়ায় বা প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক তৈরী করা হচ্ছে সেহেতু মাটির পাত্র ব্যবহার করলে ভালো। 

খ) বিশুদ্ধ পানিতে কোনোরুপ ক্ষতিকর পদার্থ, অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা আয়ন দ্রবীভুত থাকবে না।

গ) স্প্রেয়ারের স্প্রে নলের ছিদ্রপথ যেনে আটকে না যায় তাই মিশ্রণ খুব ভালোভাবে ছেঁকে তারপর স্প্রেয়ারে ব্যবহার করা।

ঘ) প্রখর রোদে এই জৈব কীটনাশক প্রয়োগ না করাই ভালো।

Imtiaj Alam Rimo
Follow Me

Leave a Reply