বছর ঘুরে চলে এলো ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রাণের উৎসব ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহাকে কোরবানীর ঈদও বলা হয়। কারণ এই দিনে মুসল্লিরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আত্নীয় স্বজন এবং গরিব-দুঃখী-অসহায়দের মাঝে বণ্টন করার পরও একটা অংশের গোশত থেকে যায় যা পরিমাণে বেশি হলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া লাগে। কিন্তু সঠিক ভাবে সংরক্ষণের অভাবে অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে গোশতগুলো।
রেফ্রিজারেটরে গোশত সংরক্ষণ
গোশত সংরক্ষণের কথা বললেই সাধারণভাবে আমাদের মাথায় আসে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু সংরক্ষণ পদ্ধতিতে ছোটখাটো কিছু ভুলের জন্যেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে গোশতগুলো। ফলে স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিষক্রিয়ারো সৃষ্টি হতে পারে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়া জরুরী।
রেফ্রিজারেটরে গোশত ভালো রাখার ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে
- যে রেফ্রিজারেটরে গোশত সংরক্ষণ করা হবে তা খুব ভালো করে পরিষ্কার করে রাখতে হবে যাতে আগে থেকেই কোন ব্যাক্টেরিয়া সৃষ্টি হতে না পারে।
- গোশতগুলো -১৮ থেকে -২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ এই তাপমাত্রায় গোশতর মধ্যে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে পারে না।
- কাঁচা গোশত না ধুয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। পশু কুরবানীর পরপর ই রেফ্রিজারেটরে না রেখে কিছুক্ষণ বাইরে বাতাসে রেখে তারপর রাখতে হবে। গোশত থেকে রক্ত পড়তে থাকলে রক্ত পরিষ্কার করে তারপর সংরক্ষণ করতে হবে।
Photo by mali maeder on Pexels.com
- গোশত সাধারণ পলিথিনে না রেখে জিপলক ব্যাগে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে এতে ব্যাগে বাতাস ঢুকতে পারবে না ফলে দীর্ঘদিন গোশত ভালো থাকবে।
- চেষ্টা করতে হবে গোশতগুলো স্লাইস করে টুকরা করতে, এতে দীর্ঘদিন গোশত স্বাদ গুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।
- ছোট ছোট প্যাকেট করে সংরক্ষণ করতে হবে। অর্থাৎ একবারে যতোটুকু পরিমাণ রান্না করা হবে সেই পরিমাণে প্যাকেট এ রাখতে হবে কারণ বড় প্যাকেটে রেখে বার বার পানিতে ভিজিয়ে আবার ফ্রিজে গোশতর গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়।
- যদি বেশি পরিমাণ গোশত ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয় তবে চেষ্টা করতে হবে একদিন ফ্রিজ না খোলার, এতে গোশতগুলো খুব ভালো করে জমাট বেঁধে যাওয়ার সুযোগ পায়।
- যতোদূর সম্ভব চর্বি বাদ দিয়ে গোশত সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ চর্বি যেমন একদিক থেকে শরীরের জন্য খারাপ অন্যদিকে গোশতর সাথে চর্বি রাখলে সহজেই নষ্ট যেতে পারে গোশতগুলো।
- কলিজা আলাদা করে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ কলিজা দ্রুত নষ্ট হয়।
আরও পড়ুনঃ ঘাস-খাওয়া বনাম দানাদার শস্য-খাওয়া গরুর মাংস – পার্থক্য কী?
তবে গরুর গোশত ৪-৮ মাস, খাসির গোশত ৪-৬ মাস এবং মুরগির মাংস ৩-৬ মাসের বেশি সংরক্ষণ করা উচিত না। কারণ অধিক সময় সংরক্ষণ করে রাখলে গোশতর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার গোশতকে কিমা বানিয়ে বা কুচি করে রাখলে ৪ মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যাবেনা। তবে পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করলে ১ মাসের মধ্যে গোশত খেয়ে ফেলা ভালো।
Photo by Ave Calvar Martinez on Pexels.com
রান্না করা গোশত সংরক্ষণ
অনেকের বাড়িতেই ফ্রিজ থাকে না। আবার ফ্রিজে গোশতর আধিক্য দেখা দিলে অনেক সময় জায়গাও থাকে না। এক্ষেত্রে রান্না করেও খুব সহজে গোশত সংরক্ষণ করা যায়। রান্না করার মাধ্যমে গোশত দুইভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে-
- সব মশলা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে অর্থাৎ খুব ভালো মতো রান্না করে সংরক্ষণ করা যায়।
- হলুদ ও লবণ মেখে জ্বাল দিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
তবে রান্না করা গোশত দীর্ঘদিন ভালো রাখবার জন্য ডিপ ফ্রিজেও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই এয়ার টাইট বক্সে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে ২-৩ মাস ধরে গোশত সংরক্ষণ করা যায়।
গোশতর শুঁটকি বানিয়ে সংরক্ষণ
গোশত ছোট ছোট টুকরা করে কেটে লবণ, হলুদ, শুকনা মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে তার বা চিকন কোন কাঠিতে গেঁথে রোদে কয়েকদিন ভালো মতো শুকিয়ে নিতে হবে। এতে গোশতর মধ্যে থাকা পানি একদম শুকিয়ে যাবে ফলে গোশত আর পঁচার ভয় থাকবে না। এই শুঁটকি বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। এভাবে শুঁটকি বানিয়ে একদিকে যেমন দীর্ঘদিন গোশত সংরক্ষণ করা যায় আবার খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহণও করা যায়।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- ঘরোয়া রেসিপিতে আম সংরক্ষণ - July 13, 2021
- ঘরোয়া উপায়ে আম সংরক্ষণ - July 4, 2021