আপনার ফেসবুক পোস্টগুলি এবং ইন্সটাগ্রামে ছবিগুলির মধ্যে আপনি দেখতে কতটা সুন্দর, চমৎকার, দুর্দান্ত তার দ্বারা আপনার জীবনটি বিচার করে এমন একটি বিশ্বের সর্বদা আপনার সেরাটি দেখতে সবসময় প্রত্যাশিত। সবাই স্বনির্ভর প্রস্তুত হতে চান, তবে একটি মূল্য আসে।তাই নিজেকে অন্যের কাছে সুন্দর করে তুলতে দিন দিন মেকাপের চাহিদা বাড়ছে। মেকআপ ইন্ডাস্ট্রি কয়েক বছর ধরে নারীদের বলছে কিভাবে সামান্য ফাউন্ডেশন, কন্সিলার, চোখের শ্যাডো এবং মাস্কারা ড্যাশ আপনার মুখে অবিলম্বে প্রাণবন্ত হতে পারে। যার ফলে প্রতিদিন মেকআপ প্রয়োগ আপনার ত্বক এবং শরীরের উপর বিভিন্ন ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। দেখা যায় এখন মেকাপ ছাড়া কেউই বের হতে চান না। আর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হচ্ছে চুলের সমস্যা, ব্রণ, ত্বকে এলার্জি, বন্ধ্যাত্ব, অকাল বার্ধক্য, হরমোনে ভারসাম্যহীনতা, ক্যান্সার, চামড়া বিবর্ণতা ইত্যাদি। তাই শত ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে সুন্দর রাখতে রূপচর্চা করা জরুরী। এর জন্য ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা উচিৎ।
প্রাচীন কাল থেকে রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে রূপচর্চায় সবজি ও ফলের ব্যবহার খুব একটা বেশি দিনের নয়। আধুনিক কালে শীত ও গরম এই দুই মৌসুমেই রূপচর্চায় সবজি ও ফল ব্যবহার হয়ে আসছে।শীতকালে শুষ্ক ও রুক্ষ বাতাসে ত্বক হয়ে ওঠে সজীবতাহীন। এ সময় তাই ত্বকের অনেক বেশি যত্ন নিতে হবে। তবে শীতকালের বিরাট সুবিধা হলো বাজারে বিভিন্ন রকমের টাটকা সবজি ও ফল পাওয়া যায়। বাসায় ত্বক পরিচর্যা করতে চাইলে প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে নিন বা কাচা দুধে তুলা ভিজিয়ে মুখের অতিরিক্ত ময়লা মুছে নিন।
পেঁপে
আমাদের বাসায় এমন অনেক উপকরণ রয়েছে যা নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম। সেগুলোর মধ্যে পেঁপে হচ্ছে একটি। পেঁপে যেমন ফল হিসেবে খাই, তেমনি কাঁচা পেঁপে ভাজি হিসেবেও জনপ্রিয়। পেঁপে দিয়ে ডাল রান্না করেও খাওয়া হয়। ইন্টারনেটে ঘাটলেই পেপের দারুনসব রেসিপি পাওয়া যায়। ভিটামিন এ, সি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টসে সমৃদ্ধ এই ফলটি শারীরিক বিভিন্ন উপকারের পাশাপাশি রূপচর্চায়ও সমান প্রশংসার দাবিদার। পেঁপে একটি বারোমাসী সবজী। বাংলাদেশের সর্বত্রই এটি সারাবছর ধরে ফল দেয়। শীতকালে আমাদের রুক্ষ ত্বকে পেঁপের গুণাগুণ আলোচনা করতেই একে শীতকালীন সবজি হিসেবে ধরা হয়েছে। পেঁপের আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী।
স্ট্রবেরি নিয়ে পড়ুন চতুর্থ পর্বে
পেঁপের অনেক উপকারিতা
ক) পেঁপেতে পাপাইন নামক এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যা মুখের মরা কোষ দূর করে ত্বকে দীপ্তিময় আভা নিয়ে আসে। এটি মুখের ত্বককে নরম এবং মসৃণ করতে খুব কার্যকর। পাকা পেঁপেতে রয়েছে বেটা হাইড্রক্সি এসিড (BHA) যা খুব ভালো এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এটি লোমকুপের ভেতরে জমে থাকা ময়লা এবং তেল বের করে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করে যার ফলে ব্রণের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
খ) অনেকেরই একটা কমন সমস্যা হচ্ছে মুখের অসমান স্কিনটোন। পেঁপে এই সমস্যা থেকে দূর করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত পেঁপের ব্যবহারে ব্রণ বা মুখের কালো দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে মুখের স্কিনটোন সমান হয়। সানবার্ন দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর।
গ) পেঁপে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি তে সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি হচ্ছে এমন এক ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলস এর পরিমাণ কমিয়ে এনে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও পেঁপেতে থাকা ফ্ল্যাভনয়েডস ত্বকে কোলাজেন এর প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয় যার ফলে ত্বক নরম এবং নমনীয় হয়ে উঠে।
এবার পেঁপের কিছু ফেইস মাস্ক সম্বন্ধে জেনে নিই-
১) পেঁপে এবং মুলতানি মাটির ফেইস মাস্ক
ক) একটি পাকা পেঁপে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন।
খ) এক চামচ স্যানডালউড পাউডার বা মুলতানি মাটি নিয়ে এর সাথে মিশান। তবে যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মুলতানি মাটি দিবেন না। কারণ মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে আনে যার ফলে শুষ্ক ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে।
গ) এর সাথে ১ চা চামচ মধু যোগ করুন। মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক ময়েশচারাইজার এবং এটি স্কিন হাইড্রেটেড করতে সাহায্য করে।
ঘ) এখন সবকিছু একসাথে ভালো মতো মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।
ঙ) মিশ্রণটি মুখে এবং ঘাড়ে ভালো মতো লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি মুখের ত্বক টানটান করে তোলে এবং এন্টি এজিং মাস্ক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।
২) পেঁপে এবং মধু ফেইস প্যাক
ক) পেঁপে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে এর সাথে ২ চা চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিন।
খ) ১ চা চামচ মধু এবং সব উপকরণ ভালো মত মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
গ) এবার মিশ্রণটি মুখে এবং ঘাড়ে ভালো মতো লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সাথে সাথে পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। ত্বক নরম এবং কোমল হবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য এই মাস্কটি বেশ উপকারী।
৩) পেঁপে এবং লেবুর ফেইস প্যাক
লেবু ত্বক উজ্জ্বল করতে খুব কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এতে রয়েছে ব্লিচিং প্রপার্টিস যা ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করে একে উজ্জ্বল করে তোলে। তাই স্কিনটোন উজ্জ্বল করার জন্য এই মাস্কটি ব্যবহার করুন।
ক) কয়েক টুকরা পেঁপের সাথে ১ চা চামচ লেবুর রস মেশান।
খ) এরপর এর সাথে ১ চা চামচ মধু যোগ করে সব কিছু ভালো মতো মিশিয়ে নিন।
গ) মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন এবং এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ময়েশ্চারাইজার
স্কিন পরিষ্কার, টোনারের পর আসে স্কিনের কোমলতার ব্যাপারটি। এক্ষেত্রে স্কিনের কোমলতার পাশাপাশি উজ্জ্বলতা বাড়াতে পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। ১০ মিনিট পর ধুতে হবে।
চুলের প্যাক
উপকরণঃ
১। পেঁপে
২। দুধ/টক দই
ব্যবহারবিধি
পাকা পেঁপের বড় বড় চার টুকরা ব্লেন্ড করে তা চার টেবিল চামচ দুধ দিয়ে মিশিয়ে নিন। পরে সম্পূর্ণ মাথায় লাগিয়ে নিন।৪০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন। দেখবেন কতটা চুলে শাইনিং করে।
পরবর্তী টিপসগুলো মিস করতে না চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
- খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি - May 4, 2020
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় বাগানের কার্যকারিতা - April 22, 2020
- বাসা-বাড়ি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় - April 12, 2020