Skip to content

ঘরেই তৈরি করুন পটিং মিক্স

প্রতিটি গাছেরই ঠিকমতো সুস্থ ও স্বাভবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য মাটি প্রয়োজন। গাছের মূল মাটির নিচে থাকে। এই মূলের মাধ্যমেই গাছ ঠিকভাবে গড়ে ওঠে। তাই গাছের বেড়ে উঠা সম্পূর্ণ নির্ভর করে মাটির উপর। আমরা যারা শহরে বাস করি এবং ছাদ বাগান করতে চাই তাদের ক্ষেত্রে চাই হালকা ওজন, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা সম্পন্ন মাটি। শুধু বাইরে থেকে মাটি এনে তাতে গাছ লাগালাম আর গাছ বেড়ে উঠবে তা কিন্তু সঠিক নয়।

গাছের পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে এবং বিভিন্ন রোগ যাতে না হয় আর আগাছামুক্ত গাছের বৃদ্ধির জন্য পটিং মিক্স একটি মিডিয়া। এই পটিং মিক্স কি, কেন প্রয়োজন, কিভাবে ঘরেই তৈরি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

পটিং মিক্স ছাদ বাগান বা ঘরের আঙিনায় টবে লাগানো  গাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্রমবর্ধমান মিডিয়াম। কর্ণেল ইউনিভার্সিটিতে ১৯৬০ সালে জেমস কুডলি ও তার টিম কর্ণেল মিক্স নামে একটা মিক্স উদ্ভাবন করেন যা পটিং মিক্স হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন দেশে পটিং মিক্সের উপাদান স্থানীয় উৎস অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমনঃ আমেরিকাতে প্রধানত পিট মস, কম্পোস্ট, পারলাইট, ভার্মিকুলাইট ইত্যাদি মিক্স করে পটিং মিক্স তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে পিট মসের বদলে কোকোপিট বা কোকোডাস্ট এবং পারলাইট- ভার্মিকুলাইটের বদলে ঝামা ইটের টুকরা ব্যবহার করে পটিং মিক্স তৈরি করা যায়। এ ধরনের তৈরিকৃত মাটি যেমন গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে তেমনি পানি নিষ্কাশন ভাল হওয়ায় পানি জমে গাছের মারা যাওয়ার ভয় থাকে না।

পটিং মিক্স কেন প্রয়োজন

খরচ বাঁচাতে

মাটিসহ সার প্রয়োগ করা খুব বেশি খরচের হয়ে থাকে। কিন্তু বাসায় এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে খরচ তুলনামূলক কম হয়।

সময় বাঁচাতে

কম সময়ে গাছের চারা বৃদ্ধি পায়।

What Should a Good Potting Mix Do? - DIY Potting Mixes
Source: Fix.com

নিরাপদ উপাদান

এই প্রক্রিয়াটিতে কোনো প্রকার অজৈব উপাদান থাকে যা গাছের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।

ওজনে হালকা

আমরা যারা শহর অঞ্চলে বাগান করি ছাদ বাগান কিংবা বাড়ির আঙিনায় বা বারান্দায় তাদের জন্য গাছের পরিচর্যায় অবশ্যই টবটি হালকা হওয়া জরুরি। পটিং মিক্স ওজনে হালকা হওয়ার কারণে টবের ওজন কম হয় তাতে করে গাছের টব এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় নেয়া যায় খুব সহজে।

পরিবেশ বান্ধব

পটিং মিক্স এ সম্পূর্ণ জৈব উপাদানে তৈরি যা পরিবেশের জন্য নিঃসন্দেহে পরিবেশবান্ধব।

দীর্ঘস্থায়ী

পটিং মিক্স দীর্ঘ দিন পর্যন্ত গাছের পুষ্টি সরবরাহ করে।ফলে মাটি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না।

রোগমুক্ত রাখতে

বীজ সহজে অঙ্কুরিত হতে সাহায্য করে। বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ( যেমনঃ গোড়া পঁচা, শিকড় পঁচা ইত্যাদি), মাটিবাহিত রোগ( যেমনঃ চারা ঢলে পড়া, চারা পঁচে যাওয়া ইত্যাদি) থেকে রক্ষা করে।

পটিং মিক্স তৈরিতে প্রয়োজনীয়  উপকরণ

ক) একটি পরিমাপের পাত্র
খ) একটি প্লাস্টিকের বা ফোমের পাত্র কোকোপিট আগে থেকে ভিজিয়ে নেয়ার জন্য
গ) একটি বড় পাত্র অথবা বালতি যাতে সকল উপাদান মিশানো যায় এমন
ঘ) সিভ বা ছাকনি
ঙ) একটি ছোট ফোর্ক বা কর্নিক( trowel)

পটিং মিক্সের উপাদান

(১) কোকোপিট বা কোকোডাষ্ট

মাটির সাবস্টিটিউট হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও কোকোপিটের বদলে পিট মসও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কোকোপিট মূলত নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি হয়। ৫ কেজি/৫০০ গ্রাম এমন বড় বড় হালকা ওজনের কোকোপিটের ব্লক হিসেবে পাওয়া যায় যা দেখতে চারকোণা ইটের মতো।

Why Make Your Own Potting Soil - DIY Potting Mixes
Source: Fix.com

কেন কোকোপিটের প্র‍য়োজন?

ক) এটি হালকা হওয়ার কারণে টবের ওজন কম হয় তাই ছাদে অতিরিক্ত চাপ পরে না। টব সহজেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করা যায়।

খ) মাটির থেকে বেশি পানি ধারণ ক্ষমতা এবং নিষ্কাষণ ক্ষমতাও মাটি থেকে বেশি।

গ) অনেক সময় টবের মাটিতে দলা সৃষ্টি করলে সেটির হাত থেকেও রক্ষা করে।

ঘ) পানি সমভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয় এমনকি পানির পরিমাণ কম হলেও গাছের পানির অভাব হয় না।

ঙ) আগাছামুক্ত থাকে।

চ) সাধারণ মাটির তুলনায় কোকোপিটে  গাছের শিকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই গাছ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়।

কোকোপিট
কোকোপিট

ছ) উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

জ) মাটির তাপমাত্রা ঠিক রাখে।

ঝ) অধিকবার ব্যবহারযোগ্য।

ঞ) এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন রয়েছে।

ট) পিএইচ ৫.৫-৬.৫ যা গাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।

(২) ভার্মিকম্পোস্ট

ভার্মিকম্পোস্ট একটি জৈব সার যা উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এক মাসের বাসি গোবর বা তরি-তরকারির ফেলে দেওয়া অংশ, ফলমূলের খোসা, উদ্ভিদের লতাপাতা, পশুপাখির নাড়িভুঁড়ি হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ছোট ছোট করে কাটা খড়কুটো খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। এ সার সব ধরনের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। এটি পৃথিবীতে অধিক ব্যবহৃত জৈব সারের অন্যতম, পরিবেশবান্ধব সার।

ভার্মিকম্পোস্ট
ভার্মিকম্পোস্ট

ভার্মিকম্পোস্ট কেন পটিং মিক্সে ব্যবহার করা হয়

ক) ভার্মিকম্পোস্ট মাটিতে পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

খ) মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় বিধায় কেঁচো সার ব্যবহারে সেচের পানি কম লাগে।

গ) ক্ষারীয় লবণাক্ত মাটিতেও চাষাবাদ সম্ভব।

ঘ) রোগ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়।

ঙ) আগাছার ঝামেলা কম হয়।

চ) ফসলের বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে।

ছ) রাসায়নিক সারের চাইতে খরচ অনেক কম হয় এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।

Make Your Own Potting Soil - DIY Potting Mixes
Source: Fix.com

ঘরোয়া উদ্ভিদে ব্যবহার করা যেতে পারে পটিং মিক্স

(৩) পার্লাইট

দেখতে সাদা নুড়ি পাথরের মতো। এর বদলে ভার্মিকুলাইট অথবা ইটের গুঁড়া বা ছোট পাথরের টুকরা ব্যবহার করা যায়।

পার্লাইট মূলত আগ্নেয়শিলা থেকে আসে। একে ভল্কানিক রক বা ভল্কানিক গ্লাসও বলা হয়। আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে একে সংগ্রহ করা হয়। এরপর একে ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করে ৮৫০°- ৯০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। ফলে ছোট ছোট এয়ার পকেট তৈরি হয় যার যেকারণে এটার সত্যিকারের সাইজ থেকে ১৫ গুণ বড় হয়। এজন্য খুবই নিমিষেই আঙুল দিয়ে গুড়ো করা যায়।


পার্লাইট কেন পটিং মিক্সে ব্যবহার করা হয়?

ক) বাতাস ধারণ করে।

খ) পানি ধারণ করে।

গ) তাপমাত্রা ঠিক রাখে।

ঘ) অণুজীবের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

পার্লাইট ও ভার্মিকুলাইট
পার্লাইট ও ভার্মিকুলাইট

ঙ) মাটি ঝুরঝুরে থাকে।

চ) ওজনে হালকা।

ছ) শিকড় বৃদ্ধি পায়।

জ) pH ৬.৫-৭

ঝ) অতিরিক্ত পানি নিষ্কাষণ করে দেয় ফলে পানি বাহিত রোগ  সৃষ্টি হয় না।

পটিং মিক্স তৈরিতে সতর্কতা অবলম্বন

ক) যখন অর্গানিক বা জৈব পদার্থ নিয়ে কাজ করা হবে তখন মুখে মাস্ক পড়ে নিতে হবে।

খ) উপাদান গুলো মিশানোর সময় অবশ্যই হাতে গ্লোভস বা দস্তানা পরা উচিৎ।

গ) চোখকে  নিরাপদ রাখতে চশমা পরা উচিৎ।

ঘ) ডাস্টযুক্ত উপাদানের জন্য স্প্রে বোতল ব্যবহার করতে হবে।

ঙ) ঝড়ো আবহাওয়ায় পটিং মিক্স তৈরি থেকে বিরত থাকা।

চ) কাজ শেষে খুব ভালো করে হাত ধোঁয়া।

পটিং মিক্স তৈরির পদ্ধতি

~ ৬০% কোকোপিট
~ ২০% ভার্মিকম্পোষ্ট
~ ১৫% পার্লাইট
~ ৫% নিম মিক্স

প্রথম ধাপ

একটি বড় প্লাস্টিকের পাত্রে কোকোপিটের ব্লক নিয়ে তা ছোট টুকরো করে গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে।ফলে কোকোপিট সম্পূর্ণ পানি টেনে নিয়ে ছোট্ট থেকে বড় হয়ে যাবে। হাত দিয়ে পরে তা ঝুড়ঝুড়ে করে দিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ

আলাদা আর একটা বড় পাত্র বা বালতিতে কোকোপিটের গুড়ো এবং ভার্মিকম্পোস্ট মিশিয়ে নিতে হবে। ভার্মিকম্পোস্ট মিশানোর আগে অবশ্যই সিভ বা চালুনি দিয়ে কম্পোস্ট চেলে নিতে হবে যাতে কোনো দলা না থাকে।

Potting Soil
পটিং মিক্স তৈরি

তৃতীয় ধাপ

এরপর এতে পার্লাইট যোগ করতে হবে।

চতুর্থ ধাপ

খুব ভালোভাবে উপাদান গুলো মিশিয়ে নিতে হবে হাতের গ্লোভস পরে।

প্রয়োজনীয় টিপস

ক) পটিং মিক্স তৈরির ক্ষেত্রে বড় কন্টেইনার নিতে হবে। অথবা ছাদে প্লাস্টিকের পেপার বিছিয়ে  নিয়েও পটিং মিক্স তৈরি করা যায়।

খ) কোকোপিট দ্রুত ভিজানোর জন্যে গরম পানি ব্যবহার করা উচিত।

গ) ডাস্টের মধ্যে মাইক্রোস্কোপিক সিলিকা থাকে ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণে বাধা দেয়।তাই অবশ্যই বাসায় পটিং মিক্স তৈরির সময় মুখে মাস্ক পরে নিতে হয়।

ঘ) যদি বাইরে থেকে পটিং মিক্স কেনা হয় তাহলে লক্ষ্য করতে হবে প্যাকেটের গায়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস মার্ক( AS 3743) আছে কিনা।

এরকম আরো মূল্যবান লেখা পেতে আজই সাবস্ক্রাইব করুন

[mc4wp_form id=”713″]

Suriya Jaman Barsha
Follow Me

1 thought on “ঘরেই তৈরি করুন পটিং মিক্স”

    Advertisements
  1. Pingback: গার্ডেনিং টিপস – অর্কিড চাষ |

Comments are closed.