আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের ব্যস্ততার কারণে নিজের শরীরের যত্ন নিতে ভুলে যাই। আর তাছাড়া এই প্রচন্ড গরম আবহাওয়ায় কিংবা রোদ ঝলসানো দুপুরে আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। প্রতিদিনকার ব্যস্ততা ও করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্যে নিয়ম করে পার্লারে বা উইমেন স্যালুনে যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না সবার।
কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যক্তি বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রসাধনীতে হ্মতিকর রাসায়নিক পদার্থ (প্যারাবেন্স, ফ্যাথলেটস, সালফেটস, খনিজ তেল, পেট্রোকেমিক্যালস, ইথোক্সাইলেটেড ইত্যাদি) মিশিয়ে থাকেন যা আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থযুক্ত প্রসাধনী আমাদের সকলকে এড়িয়ে চলা উচিৎ। এগুলো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে আমরা আমাদের ঘরে থাকা বিভিন্ন জৈবিক পদার্থ দিয়ে আমাদের ত্বকের যত্ন করতে পারি। ঘরোয়া উপাদান দিয়ে রূপচর্চা করার ফলে আমাদের ত্বক থাকবে সতেজ ও সুন্দর এবং ত্বকের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাবও ফেলবে না। তাই আমাদের ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপাদানের কার্যকারিতা অনেক। চলুন কিছু ঘরোয়া উপাদান দিয়ে মাস্ক তৈরির রেসিপি জেনে নেই।
১) বেসন এবং কফি মাস্ক
উপকরণ
১) ২ টেবিল চামচ কফি পাউডার
২) ১ টেবিল চামচ বেসন
৩) ১ টেবিল চামচ মধু
৪) কয়েক ফোটা লেবুর রস
৫) ১ টেবিল চামচ টকদই
একটি বাটিতে ২ চামচ কফি পাউডারের সাথে ১ চামচ বেসন,টকদই, মধু এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখ এবং ঘাড়ে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য শুকাতে দিন।তারপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা যাবে।
বেসন এবং কফি ত্বকের অতিরিক্ত তেল,ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে ত্বককে করে পরিষ্কার।টকদই ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।মধু এবং লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
২) অ্যালোভেরা এবং কফি মাস্ক
উপকরণ
১) ২ টেবিল চামচ কফি
২) ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা
একটি বাটিতে ২ চামচ কফির সাথে ২ চামচ অ্যালোভেরা মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।মুখে মাস্কটি লাগিয়ে হালকাভাবে বৃত্তাকার স্ট্রোকের সাথে ম্যাসাজ করুন, তারপর মাস্কটিকে শুকাতে দিন।মাস্কটি শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কফি পাউডারে থাকা ক্যাফিন মুখে পিগমেন্টেশন এবং গাড় দাগ হালকা করবে। আর অ্যালোভেরা শুকনো ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার হ্মেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।
৩) বেসন, হলুদ এবং টকদইয়ের মাস্ক
উপকরণ
১) ৩-৪ টেবিল চামচ বেসন
২) ১ টেবিল চামচ হলুদ
৩) ১ টেবিল চামচ মধু
৪) ১ টেবিল চামচ টকদই
৫) কয়েক ফোটা লেবুর রস
একটি বাটিতে ৩-৪ টেবিল চামচ বেসনের সাথে ১ টেবিল চামচ হলুদ,টকদই,মধু এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য শুকাতে দিন। তারপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এই মাস্কটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা যাবে।
বেসন ত্বকের অতিরিক্ত তেল,ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে ত্বককে করে পরিষ্কার।টকদই এবং মধু ত্বককে নরম এবং ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।হলুদ ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৪) টকদই, অলিভ অয়েল এবং কফি মাস্ক
উপকরণ
১) ১ টেবিল চামচ কফি পাউডার
২) ১ টেবিল চামচ টকদই
৩) কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ কফি পাউডার এবং টকদইয়ের সাথে কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে হালকাভাবে বৃত্তাকার স্ট্রোকের সাথে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন, তারপর মাস্কটিকে শুকাতে দিন।মাস্কটি শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা যাবে।
এই মাস্কটি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করবে।এবং এই মাস্কটি ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ সৌন্দর্য্য চর্চায় পেঁপে
৫) গ্রিন টি এবং টকদইয়ের মাস্ক
উপকরণ
১) ২ টেবিল চামচ গ্রিন টি
২) ২ টেবিল চামচ টকদই
একটি বাটিতে ২ টেবিল গ্রিন টি এবং টকদই মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে হালকাভাবে বৃত্তাকার স্ট্রোকের সাথে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন, তারপর মাস্কটিকে শুকাতে দিন।মাস্কটি শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করা যাবে।
এই মাস্কটি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করবে।গ্রিন টি ত্বকের পিগমেন্টেশন,গাঢ় দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং টকদই ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৬) দুধ এবং হলুদ এর মাস্ক
উপকরণঃ\
১) ১ টেবিল চামচ হলুদ
২) ২ টেবিল চামচ দুধ
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ হলুদের সাথে ২ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য শুকাতে দিন। তারপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে ৫-৭ দিনই ব্যবহার করা যাবে।
হলুদ ত্বকের ময়লা দূর করে ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া হলুদ ত্বকের গাঢ় দাগ হালকা করতে সহায়তা করে। দুধ ত্বককে নরম ও ময়েশ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করে। হলুদ এবং দুধ উভয়ই ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৭) মসুর ডালের মাস্ক
উপকরণ
১) ১ টেবিল চামচ মসুর ডাল গুড়া
২) ২ টেবিল চামচ নারকেলের পানি
বাটিতে ১ টেবিল চামচ মসুর ডালের গুড়ার সাথে ২ টেবিল চামচ নারকেলের পানি মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য শুকাতে দিন। তারপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা যাবে।
মসুর ডালের গুড়া ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।নারকেলের পানি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
৮) চালের গুড়া ও দুধের মাস্ক
উপকরণ
১) ১ টেবিল চামচ চালের গুড়া
২) ১ টেবিল চামচ দুধ
বাটিতে ১ টেবিল চামচ চালের গুড়ার সাথে ১ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে হালকাভাবে বৃত্তাকার স্ট্রোকের সাথে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন, তারপর মাস্কটিকে শুকাতে দিন।মাস্কটি শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা যাবে।
এই মাস্কটি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করবে।তাছাড়া ত্বকের কালো দাগ ও পিগমেন্টেশন দূর করবে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ সৌন্দর্য্য চর্চায় কলা
৯) চন্দন পাউডার, হলুদ ও টকদইয়ের মাস্ক
উপকরণ
১) ১ টেবিল চামচ চন্দন পাউডার
২) ১ টেবিল চামচ হলুদ
৩) ১ টেবিল চামচ টকদই
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ চন্দন পাউডারের সাথে ১ টেবিল চামচ হলুদ ও টকদই মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন।তারপর মাস্কটি শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা যাবে।
এই মাস্কটি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের কালো দাগ ও পিগমেন্টেশন দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে।
১০) হলুদ, দারুচিনি, মধু এবং কফির মাস্ক
উপকরণ
১) ১ টেবিল চামচ কফি পাউডার
২) ১/২ টেবিল চামচ নারকেল তেল
৩) ১/২ টেবিল চামচ দারুচিনি অথবা হলুদ
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ কফি পাউডারের সাথে ১/২ টেবিল চামচ হলুদ অথবা দারুচিনি ও নারকেল তেল মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য শুকাতে দিন। তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কফি একটি দূর্দান্ত এক্সফোলিয়েটর যা ত্বকের মৃত কোষগুলোকে দূর করে যা ব্রণ বা অন্যান্য সমস্যার কারণ হয়। অন্যদিকে নারকেল তেল ত্বকক নরম ও কোমল রাখে।দারুচিনি এবং হলুদ ত্বকের ব্যাকটেরিয়াগুলোর বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।ব্রণযুক্ত ত্বকের জন্য দারুচিনি এবং হলুদ অনেক কার্যকর।
আরও পড়ুনঃ সৌন্দর্য্য চর্চায় গাজর
- ঘরোয়াভাবে প্রাকৃতিক মাস্ক তৈরির ১০ টি উপায় - August 30, 2020
- বিভিন্ন জাতের গোলাপ চিনুন - August 10, 2020
আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো আশা করি এগুলো ব্যবহার করলে উপকৃত হবো