Skip to content

ধানের নেক ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে করণীয়

ধানের নেক ব্লাস্ট রোগটি বর্তমানে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক রোগের একটি। কারণ এই রোগের জন্য সরাসরি পুষ্পমঞ্জরিকে আক্রান্ত করে। এই রোগের ফলে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয় খুব বেশি। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগটি শনাক্ত করা যায় না। সাধারণত যখন রোগটি শনাক্ত করা হয় তখন জমির ফসলের অধিক ক্ষতি হয়ে থাকে।

নেক ব্লাস্ট রোগ কি?

এটি এক ধরণের ছত্রাকজনিত মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ। Magnaporthe oryzae নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগটি হয়ে থাকে। সাধারণত বোরো ও আমন মৌসুমে এই ব্লাস্ট রোগটি হয়ে থাকে। এই ছত্রাকটি উদ্ভিদগুলির স্থলভাগের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত ধানের ফুল আসার পর থেকে এই রোগ দেখা যায়। চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকার আগ পর্যন্ত রোগটি দেখা দিতে পারে।

নেক ব্লাস্ট

ধানের নেক ব্লাস্ট

লক্ষণ

এই রোগটি ধানের পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট নামে পরিচিত।

পাতা ব্লাস্ট

ধানের আক্রান্ত পাতায় প্রথমে ছোট ছোট কালচে বাদামী দাগ দেখা যায়। আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয়ে লম্বাটে হয় এবং দাগের মাঝখানে সাদা ও কিনার বাদামী রঙ ধারণ করে। একাধিক দাগ মিশে গিয়ে এক পর্যায়ে পাতাটি শুকিয়ে মরে যায়।

গিট ব্লাস্ট

ধানের গিট আক্রান্ত হলে কালো ও দূর্বল হয়ে যায়। তবে প্রবল বাতাসে আলাদা হয়ে যায় না।

নেক বা শীষ ব্লাস্ট

শিশির বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সময় ধানের শীষের গোড়ার সংযুক্ত স্থানে পানি জমে। ফলে উক্ত স্থানে ব্লাস্ট রোগের জীবাণু আক্রমণ করে। ফলে আক্রান্ত স্থানে বাদামী বা কালো রঙের দাগ পড়ে। এক পর্যায়ে ধানের শীষের গোড়ায় পচন ধরে। গাছের গোড়া পচে যাওয়ার জন্য গাছের খাবার ঠিকমতো শীষে যেতে পারে না তাই শীষ ভেঙে যায়। ধানের পরিপুস্ট হওয়ার আগে এই রোগ হলে শীষের সব ধান চিটা ধান হয়ে যায়।যদি ধান গাছের মিল্ক স্টেজে রোগটি দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে চিটা ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু যদি অনেক পরে আক্রান্ত হয় তবে নিম্নমানের ফসল পাওয়া যাবে।

নেক ব্লাস্ট রোগ কি?

গিট ব্লাস্ট

ব্লাস্ট রোগটি হওয়ার কারণঃ (অনুকূল পরিবেশ)

ক) দিনের বেলায় গরম (২৫°-২৮° সেন্টিগ্রেড), রাতে ঠান্ডা (২০°-২২° সেন্টিগ্রেড)

খ) অধিক আদ্রতা(শতকরা ৮৫ ভাগ বা তার বেশি)

গ) শিশির ভেজা দীর্ঘ সকাল

ঘ) মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়ো আবহাওয়া

ঙ) গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি

আরও পড়ুনঃ বাগানে রেড লেডি পেঁপে চাষ

রোগের বিস্তার

বাতাসের মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগের জীবাণু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়ায়। আর যেখানেই অনুকূল পরিবেশ পায় সেখানেই জীবাণু পড়ে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বীজের মাধ্যমেও রোগটি ছড়ায় তবে তা তুলনামূলকভাবে কম।

দমন ব্যবস্থা

ক) প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ দমনের জন্য জমিতে প্রতিরোধী জাতের উদ্ভিদের বীজ বপন করতে হবে। এই ধরণের প্রতিরোধী জাতের বীজ পেতে হলে স্থানীয় কৃষি অফিসের নিকট যোগাযোগ করতে হবে।

খ) সঠিক সময়ে রোপণ করতে হবে।বর্ষাকাল শুরু হওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজ বপন করতে হবে।

গ) দুই বা ততোধিক বার নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে সারের অত্যধিক ব্যবহার ব্লাস্ট রোগের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই সার প্রয়োগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ঘ)  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাঠে অধিক পরিমাণে সেচ দেয়া।

ঙ) নেক ব্লাস্ট রোগ হোক বা না হোক প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে, ধানের শীষ বের হওয়ার আগেই প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ব্লাস্টিন (৭৫ ডাব্লিউ ডি জি) ৬ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে সপ্তাহে ২ বার স্প্রে করতে হবে।

চ) জমিতে সিলিকন সার (ক্যালসিয়াম সিলিকেট) প্র‍য়োগ করতে হবে,এই সার ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করে। যেহেতু এই ধরণের সারের দাম বেশি তাই খুব দক্ষতার সাথে সার প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া সিলিকন সারের বিকল্প হিসেবে শুষ্ক খড়কুটো ব্যবহার করা যায়।

ছ) সিস্টেমেটিক ফাঞ্জিসাইড হিসেবে ট্রিয়াজোলস, স্ট্রোবিলুরিন্স দিয়ে ব্লাস্ট রোগ দমন করা যেতে পারে।

Suriya Jaman Barsha
Follow Me