করোনার মতো অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে হাত পরিষ্কার করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলেই প্রতিদিন প্রচুর হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহার করছি করোনা ভাইরাস মহামারির এই সময়ে। আমরা এটি কাছের মুদি দোকান থেকে কিনে থাকি যা ব্যক্তিগত যত্নের পণ্যগুলি বিক্রি করে। কিন্তু স্টোর থেকে কেনা হ্যান্ড ওয়াশ সত্যিই কি বর্তমান সময়োপযোগী? স্টোর থেকে কেনা হ্যান্ড ওয়াশগুলিতে কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি এবং সেগুলি আপনার ত্বকের জন্য ভাল নাও হতে পারে। তবে আমরা এসব তেমন একটা চিন্তা করি না। কেন? কারণ যত্ন নেওয়ার যে পরিমাণ হ্যান্ড সাবান ব্যবহৃত হয় তা কখনই আমাদের উদ্বেগ করে না। তো, ঘরে বসে কীভাবে হ্যান্ড ওয়াশ তৈরি করবেন? ঘরে তৈরি লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ কেমিক্যাল মুক্ত হবে এবং আপনি এটি সহজেই তৈরি করতে পারেন।
ঘরে তৈরি লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশের উপকারিতা
ঘরে তৈরি লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি পণ্য কেনার চেয়ে অধিকতর শ্রেয়। বাণিজ্যিক পণ্যগুলির সাথে তুলনা করলে দেখা যায় ঘরে তৈরি হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহারের কয়েকটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে।
১) বিভিন্ন ত্বকের ধরণগত সমস্যা
যদি আপনার শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বক হয় এবং দোকান থেকে কেনা লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহার করেন, এটি আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি পণ্যগুলির উপাদান আপনার সংবেদনশীল হাতকে আরও খারাপ করে দিতে পারে। কিছু বাণিজ্যিক পণ্যগুলিতে সিক্রেট কিছু উপাদান বা কেমিক্যাল থাকে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, তবে ঘরে আপনার নিজের বানানো লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ সবসময় আপনাকে এইসব চিন্তা থেকে বিরত রাখবে। আপনি যখন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেন তখন আপনাকে ত্বকের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
২) সাশ্রয়ী
আপনি বাড়িতে নিজের লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ তৈরি করতে পারেন যা দোকান থেকে কেনা লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ এর তুলনায় প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করবে।
৩) হাতের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে
এসেনশিয়াল অয়েলগুলি যখন তরল ক্যাসটিল সাবান, প্রোবায়োটিক সাবান বারগুলির মতো প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে মিলে আপনার হাতকে নরম, নমনীয় এবং ত্রুটিহীন ত্বক দিতে পারে। আপনার হাত আর খসখসে মনে হবে না। এসেনশিয়াল অয়েল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ দোকান থেকে কেনা পণ্যগুলির তুলনায় মৃদু হয় যা আপনার ত্বকের ক্ষতির কারণ হবে না।
DIY লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশে কী আছে?
হ্যান্ড ওয়াশ তৈরির জন্য আপনার যা দরকার তা হল পানি এবং তরল ক্যাসটিল সাবান। এই প্রাকৃতিক হ্যান্ড ওয়াশ এর রেসিপিটি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১) ১/২ কাপ পানি
২) ১/২ কাপ ক্যাসটিল সাবানঃ
ক্যাস্টিল সাবান একটি চমত্কার উদ্ভিজ্জ ভিত্তিক সাবান, এতে বিভিন্ন সুগন্ধ উপাদান থাকে। ক্যাসটিল সাবানটি প্রাকৃতিক ডিশ লিকুইড, লন্ড্রি সাবান, হ্যান্ড সাবান এবং আরও অনেকরকম পরিচ্ছন্নকারী উপাদান তৈরিতে ব্যবহার হয় যা বিষাক্ত কেমিক্যালমুক্ত। ক্যাসটিল সাবান আপনার মুখ এবং শরীরের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে!
৩) ২০ ফোঁটা লেমন এসেনশিয়াল অয়েলঃ
লেবু এবং লেবুর রস প্রাকৃতিক পরিষ্কারক জিনিস হিসেবে এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত। লেবু প্রাকৃতিক অম্লতা দাগ দূর করতে সহায়তা করে এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ গ্রিজের বিরদ্ধে যুদ্ধ করে।
৪) ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েলঃ
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
৫) ভিটামিন ই ক্যাপ্সুল ১ টেবিল চামচ বা ৩/৪ পিস
৬) স্প্রে বোতল
পদ্ধতি
খাঁটি তরল ক্যাসটিল সাবান টেবিল চামচ দিয়ে স্প্রে বোতলের মধ্যে ঢালুন। অবশিষ্ট অংশ পানি দিয়ে পূরণ করুন। এরপর এসেনশিয়াল অয়েল ও অলিভ অয়েল এবং ভিটামিন-ই মিশিয়ে ভালভাবে ঝাঁকুন এবং ব্যবহার করুন।
আরও পড়ুনঃ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যা খাবেন
সবচেয়ে সহজ রেসিপি
১) যেকোনো পছন্দমতো অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল সাবান – ০১টি
২) গ্লিসারিন ১ টেবিল চামচ
৩) সবজি কাটার
৪) পানি ২ কাপ
পদ্ধতি
প্রথমে সবজি কাটার দিয়ে সাবান কুচি করে নিতে হবে। এরপর চুলায় পানি ও সাবান কুচি দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। যখন মিশ্রণটি গলে যাবে তখন গ্লিসারিন দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর ঠান্ডা করে স্প্রে কন্টেইনারে রেখে ব্যবহার করুন।
টিপস
ক) বাড়িতে লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ তৈরির সময় কয়েকটি জিনিস আপনার জানা উচিত।আপনি যদি কোনও কাস্টমাইজড লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ বানাতে চান তবে যেকোনো ব্রান্ডের সাবান বার ব্যবহার করুন। আপনি যদি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত হাত ধোয়ার তরল হ্যান্ড সোপ চান তবে একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান বার ব্যবহার করুন। আপনার যদি শুষ্ক ত্বক থাকে তবে আপনি অ্যালমন্ড বা অলিভ অয়েল বা গ্লিসারিন দিতে ভুলবেন না।
খ) আপনার তরল সাবানটি বিশেষ কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
গ) এক বছর বা তারও কম সময়ে এগুলি ব্যবহার করাই শ্রেয়। তবে তারা বেশ কিছু সময় পর্যন্ত ব্যবহারোপযোগী থাকতে পারে।
প্রাকৃতিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার
আমরা খুব সহজেই পানিবিহীন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারি এবং যখনই বাইরে থাকি, হাত ধোয়ার বিকল্প হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেছে নিই।
প্রাকৃতিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর সুবিধা
ক) বাইরের কেনা হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অনেক উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়, বাণিজ্যিক স্যানিটাইজারগুলিতে প্রায়শই শুকানো অ্যালকোহল থাকে যা বাচ্চাদের পক্ষে ব্যবহার করা যায় না তাই নিজের তৈরি করার সুন্দর ব্যাপারটি হল, বাচ্চাদের ব্যবহারের জন্য এবং বড়দের ব্যবহার করার জন্য দুইরকম সংস্করণই তৈরি করে নিতে পারবেন।
খ) ট্রাইক্লোসান বা অন্যান্য অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্টগুলির পরিবর্তে, এসেনশিয়াল অয়েলগুলি ব্যবহার করতে পারেন যা ব্যাকটিরিয়াকে প্রাকৃতিকভাবে বাধা দেয় এবং বাচ্চাদের জন্যেও নিরাপদ।
উপকরণ
১) ৭০% রাবিং অ্যালকোহল = ৩/৪ কাপ
২) ১/২ চামচ গ্লিসারিন (ঐচ্ছিক)
৩) ১/৪ কাপ অ্যালোভেরা জেল
৪) টি ট্রি অয়েল = ২ টেবিল চামচ
৫) এসেনশিয়াল অয়েল = ১০ ফোটা (কেবল সুগন্ধের জন্য)
পদ্ধতি
ক) একটি ছোট পাত্রে অ্যালোভেরা জেল, ৭০% রাবিং অ্যালকোহল, গ্লিসারিন এবং টি ট্রি অয়েল ও মেশান।
খ) আপনার পছন্দের সুগন্ধী আছে এমন এসেনশিয়াল অয়েলের মধ্যে কয়েক ফোঁটা লেমনগ্রাস, কমলা, ল্যাভেন্ডার এবং লেমন অয়েল ফ্লেভার পছন্দ অনুযায়ী যোগ করতে পারেন।
গ) ভালভাবে মিশ্রিত করুন এবং অল্প করে প্রায় ১ টেবিল চামচ পাতিত পানি যোগ করুন।
ঘ) স্প্রে বা পাম্প করা যায় এমন বোতলগুলিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্থানান্তর করতে একটি ছোট ফানেল বা ড্রপার ব্যবহার করুন। বাহিরে চলতে ব্যবহারের জন্য এটি ছোট সিলিকন টিউবেও সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
টিপস
ক) মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির ক্ষেত্রে সবসময়- ২ ভাগ অ্যালকোহল এবং ১ ভাগ অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে।
খ) বিশেষত বাচ্চাদের বা আপনার যদি কোনও মেডিকেল কন্ডিশন থাকে তবে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করার আগে সর্বদা চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
গ) টাটকা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারিক প্রয়োগে স্থিতিশীল নয়; তাই ভালমানের বাণিজ্যিক অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন।
ঘ) আর যদি টাটকা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করেন তবে তা ১ সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করুন। এটা বাচ্চাদের জন্য ভীষণ উপকারী।
আরও পড়ুনঃ ঘরেই বানান ভিটামিন স্মুদি
- খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি - May 4, 2020
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় বাগানের কার্যকারিতা - April 22, 2020
- বাসা-বাড়ি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় - April 12, 2020