বর্তমান সময়ে দুনিয়া কাঁপানো সবচেয়ে আলোচিত এবং সকলকে আতঙ্কিত করার বিষয় হচ্ছে করোনা ভাইরাস। এটি এমন একটি মারাত্মক সংক্রমণ ভাইরাস যা কিনা সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে মানুষে মানুষে।
করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১৯৮ টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হয়েছে ৬ লক্ষাধিক (১৮ ই জুলাই পর্যন্ত) মানুষের। (তথ্যসূত্রঃ Worldometer)
করোনা ভাইরাসকে এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা “করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯”-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
করোনা ভাইরাসের উপসর্গ
এই রোগ সাধারণ জ্বর বা ঠান্ডা কাশি, হাচির মত হলেও তা ধীরে ধীরে রূপ নেয় মৃত্যুতে। এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে একজন মানুষের খুব ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করবে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রন্তদের মৃত্যু হার ১৫ ভাগ। খুব শক্তিশালী ইম্যিউনতন্ত্র না হলে এই ভাইরাস মোকাবেলা করা বেশ সহজ হবে না।
আমাদের দৈনিক খাদ্যাভাসে যদি একটু সতর্ক থাকি তাহলে আমরা আমাদের শরীরে খুব ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে পারব। সাম্প্রতিক সময়ে Newyork Times ও Healthdigezt এর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু খাদ্য তালিকা প্রণয়ন করে যা নিয়মিত খেলে এই ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারেঃ
কালোজিরা
প্রথমেই কালোজিরার কথা না বললেই নয়। বলা হয়ে থাকে, মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষুধ কালোজিরা। স্থুলতা, ক্যান্সার ও হৃদরোগ সব কিছুর বিরুদ্ধেই শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই কালোজিরা। এ ছাড়া সাধারণ সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, জ্বর সারাতে কালোজিরা বেশ উপকারি।
মধু
মধুর উপকারিতাও এ ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মধুর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিন এক চা চামচ মধু ও লেবু পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ভিটামিন
সাধারণত অনেক ভিটামিনই পানির সাথে মিশে যায়। এগুলো শরীরের ভিতরে জমা থাকে না। ডাক্তারদের মতে, প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি এবং সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এই ভিটামিনগুলো পানিতে মিশে যাওয়ার কারণে ইউরিনের সাথে বেরিয়ে যায়।
শরীরের নার্ভের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই দুই ধরণের ভিটামিন কাজ করে। এই ভিটামিন সি এর মূল উৎস হলো ফল। ফলের ভেতরে বেদানা, পেয়ারা, আঙুর, লেবু, আমলকি, কমলা, বাতাবিলেবু, জাম ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কারণ, এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। শরীরের ভেতরে বিক্রিয়ার কারণে যেসব সেল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেগুলো সারিয়ে তুলতে কাজ করে ভিটামিন সি। দুধ এবং কালোজিরার মধ্যে ভিটামিন বি আছে।
দই
শরীরের ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের সমতা বজায় রাখতে দই খাওয়া উচিত। নিয়মিত দই খেলে শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ে। হজম শক্তির ভালো হয়, টক দই ওজন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য দই খাওয়া ভীষণ উপকারী।
ফ্ল্যাভয়েডস
সাধারন ঠান্ডা কাশি থেকে ৩৩% এর বেশি সুরক্ষিত রাখে এই ফ্ল্যাভয়েডস। এদের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙ্গুর, বিভিন্ন বেরী জাতীয় ফল, পিয়াজ, কোকো, গ্রিন টি ইত্যাদি। এসব খাদ্য আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তোলে।
সজনে
সজনে ডাঁটা ও সজনে ফুল ভাইরাস ঠেকাতে সক্ষম। সজনে ডাটা আমাদের দেশে ডালের সাথে খাওয়া হয়। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
খাদ্যতালিকায় রাখুন কপি
ফুলকপি, বাঁধাকপি এসব সবজি বিশেষ করে আমাদের যকৃৎ ভালো রাখতে সাহায্য করে। সুস্থ যকৃৎ শরীরের মাঝে থাকা বিষাক্ত পদার্থকে বের করে দেয়। এ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এসব কপি খেয়ে যকৃৎ সুস্থ রাখাটা খুবই জরুরী। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সব তাজা সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। যতটা সম্ভব তাজা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় এসব সবজিতে।
ব্রোকলি
ব্রোকলি শরীরের অনাক্রম্যতা ক্ষতিপূরণ করতে সহায়তা করে। এই গাঢ় সবুজ সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এছাড়া ক্যাবেজ পরিবার থেকে আসা ফুলের মতো দেখতে এই খাবারটিতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং ই যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও আয়রন রয়েছে । আয়রন এমন একটি খনিজ উপাদান যা লোহিত রক্তকণিকা উত্পাদনের জন্য জরুরি তো বটেই, এটা রক্তস্বল্পতাও প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধের কোষ বৃদ্ধির জন্য উপযোগী।
গ্রিন টি
সব ধরনের হার্ব জাতীয় চায়েই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তবে গ্রিন টি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষভাবে সমাদৃত। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপাদান রয়েছে।
হলুদ ক্যাপসিকাম
সব প্রজাতির মরিচেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তবে সকল ক্যাপসিকাম এর চেয়ে হলুদ ক্যাপসিকামে ২১৮.৪ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়া এতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী উপাদান যা ভাইরাস মোকাবেলায় সাহায্য করে। ক্যাপসিকামের আরও উপকারিতা জানতে এখানে যান।
রসুন
রসুনকে ভেষজ গুণের রাজা বলা হয়। রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো কর্মক্ষম করে তোলে বহু গুণে। এতে রয়েছে অ্যালিকিন যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে লড়ে। রসুন ঠান্ডা ও ফ্লু জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে।
হলুদ
বাতের চিকিতসায় হলুদ ভীষণ উপকারী। মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাতে মোটা হবার প্রবণতা থেকে শুরু করে ক্যান্সার – সবকিছুর বিরুদ্ধেই লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহও সারিয়ে তোলে। এছাড়া এটি জ্বর, ঠাণ্ডা ও ফ্লু-এর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
আদা
আদা হচ্ছে অ্যান্টি ক্যান্সার, অ্যান্টি- ডায়বেটিক্স এবং ওজন হ্রাস করার খাদ্য। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি কাশি এবং ঠাণ্ডার সমস্যা দ্রুত সারিয়ে তোলে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ প্রতিরোধেও আদার তুলনা নেই। আদাকে বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া সম্ভব যেমনঃ মিষ্টি আলুর ও আদার স্যুপ, আদা চা ইত্যাদি।
কাঠবাদাম
কাঠবাদামে আছে ভিটামিন ই যা খুবই শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ঠাণ্ডার সমস্যা ও কাশি প্রতিরোধ করে। এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি প্রদান করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বজায় রাখে এবং ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান থেকে রক্ষা করে। তথ্যসূত্রঃ Healthdigezt
এছাড়াও
ক) বেশি বেশি সবুজ শাক-সবজি বেশি খান যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি পূরণে সহায়তা করে।
খ) ফ্রিজে রাখা খাবার ভালভাবে রান্না করে খাবেন, কেননা ভাইরাস ফ্রিজের তাপমাত্রায়ও অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারে।
গ) লাল ও কালো চালের ভাত খেতে পারেন।
ঘ) প্রতি দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত পানি পান অপরিহার্য।
ঙ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সতর্কতা দিয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে পালন করুন।
চ) নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করুন।
- খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি - May 4, 2020
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় বাগানের কার্যকারিতা - April 22, 2020
- বাসা-বাড়ি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় - April 12, 2020