ফ্রুট ব্যাগিং এক ধরণের প্রযুক্তি। গাছে ফল আসলে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা বয়সে বিশেষ ধরণের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে ফ্রুট ব্যাগিং বলে। অর্থাৎ, ব্যাগিং করা হয় গাছে ফল আসার পর থেকে ফল সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত। নতুন ধারণা থেকে “আমের রাজধানী” খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিনব এ পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয় ২০১৫ সালে। যার আকাশচুম্বী সফলতা আসে মাত্র এক বছরেই।
ফ্রুট ব্যাগিং এর উপযুক্ত সময়
প্রত্যেক ফলের জন্য ব্যাগিং করার সময় একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। যেমন-আমের ক্ষেত্রে ব্যাগিং করা হয় যখন গুটির বয়স ৪০-৫৫ দিন হয়। এই সময়ে আম আকারে মার্বেল বা এর চেয়ে একটু বড় হয়ে থাকে। তবে আমের নাবী জাত যেমন- ফজলি, হাড়িভাঙ্গা এবং আশ্বিনা ইত্যাদি আমের ক্ষেত্রে গুটির বয়স ৬৫ দিন হলেই ব্যাগিং করা যাবে।
আমের ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিনটি স্প্রে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন-প্রথমবার আম গাছে মুকুল আসার আনুমানিক ১৫-২০ দিন পূর্বে, দ্বিতীয়বার মুকুল আসার পর অর্থাৎ আমের মুকুল যখন ১০-১৫ সেমি লম্বা হবে তখন এবং আম যখন মটর দানারমতো হবে তখন একবার। সুতরাং, এর পরপরই আমে স্প্রে করে ব্যাগিং করতে হয়।
ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা
ছাদকৃষিতে পারিবারিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আম গাছ লাগানো হয় এবং যেহেতু অনেকেই রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে করেন না বা সম্পূর্ণ জৈবিক উপায়ে আম চাষ করেন তাই প্রতি বছরই তাদের গাছের ফলকে পোকা ও রোগের কারণে অধিকাংশ আম নষ্ট হয়ে যায়।
শহরে বা যে সকল এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হয় এবং দেরীতে পাকে সে সকল আমের জাতগুলো বিবর্ণ বা কালো রং ধারণ করতে না পারে তাই ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, বাগানে ঘন করে গাছ লাগানোর কারণে কিংবা সময় মত ডালপালা ছাঁটাই না কারণে ঝোপালো হয়ে থাকে। যার ফলে গাছের ভিতরে সূর্যের আলো পৌছায় না বা খুব কম আলো প্রবেশ করে । সে সকল গাছে মাছি পোকার আক্রমনের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি যা ফলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে কোনটিতেই এই পোকাটি শতভাগ দমন করা সম্ভব নয় বরং আক্রমণের হার কিছুটা কমিয়ে রাখা যায়। মাছি পোকার আক্রমণ থেকে ফলকে রক্ষা করতে ফ্রুট ব্যাগিং অপরিহার্য।
আরও পড়ুনঃ আম গাছের জোড় কলম পদ্ধতি
ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির সুবিধা
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে শতভাগ নিরাপদ, বিষমুক্ত প্রাকৃতিকভাবে রঙ্গিন ও গুণগত মানসম্পন্ন আম উৎপাদন সম্ভব। ব্যাগিং করা আম সংগ্রহের পর ১০-১৪ দিন পর্যন্ত ঘরে রেখে খাওয়া যায়। কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের কিনতে বাড়তি খরচ অনেকটা কমে যায়। দেশের এক কৃষি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাগিং প্রযুক্তিতে ৭০-৯০ ভাগ স্প্রে খরচ কমানো সম্ভব।
ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের নিয়মকানুন
সঠিক সময়ে (আমের বয়স ৪০-৫৫ দিন) ব্যাগিং করার জন্য সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যাগ সংগ্রহ করা। আম ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা যাবে না অর্থাৎ রৌদ্রোজ্জল দিনে ব্যাগিং করা ভালো। দুইটি আম একত্রে থাকলে একসাথে ব্যাগিং করা যাবে তবে বড় জাতের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে ব্যাগিং করতে হবে।
ব্যাগের উপরের অংশ দুইপার্শ হতে ভাঁজ করতে করতে মাঝ বরাবর আসতে হবে। এরপর সংযুক্ত তার দ্বারা ভালভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে। কোন অবস্থায় যেন পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করতে না পারে। ব্যাগ সংগ্রহ করার সময় হাতে কলমে ব্যাগিং করা দেখে নেওয়া ভাল।
অবশ্যই করতে হবে যেগুলো-
ক) রঙিন আমের জন্য একস্তর বিশিষ্ট সাদা ব্যাগ এবং যে কোন আমের জন্য দুইস্তর বিশিষ্ট বাদামি রঙ এর ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। (বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে দুইস্তর যুক্ত বাদামি রঙ এর ব্যাগ যে কোন আমকে রঙিন অর্থাৎ হলুদ করতে পারে।)
খ) ব্যাগিং করার পূর্বে আমগুলিকে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করা ( বিকেল বেলায় ব্যাগিং করতে চাইলে সকাল বেলায় স্প্রে করতে হবে অথবা ব্যাগিং করার কমপক্ষে ২ ঘন্টা পূর্বে স্প্রে করতে হবে। তবে স্প্রে করার পরের দিনও ব্যাগিং করা যাবে যদি বৃষ্টিপাত না হয় )
গ) আমের গায়ে মরা ও শুকনা আম, উপপত্র, মুকুলের অংশবিশেষ লেগে থাকলে বা ব্যাগিং করতে অসুবিধার সৃষ্টি করলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ পদ্ধতি
ব্যাগের ব্যবহার শেষ হলে সেটি পুড়িয়ে ফেলুন অথবা পানিতে ডুবিয়ে রেখে নষ্ট করুন। যাতে পরিবেশ পরিছন্ন থাকে। আশা করছি, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ও জৈব উপায়ে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করবেন এবং পরিবারের সকলেই উপভোগ করতে পারবেন ফলের অতুলনীয় পুষ্টি।
ফ্রুট ব্যাগ কিনতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন- ০১৫৫৬৬২৮৮৩০
- কার্তিক মাসের কৃষি - October 19, 2020
- আশ্বিন মাসের কৃষি - September 19, 2020
- ভাদ্র মাসের কৃষি - August 23, 2020