সিরামিকস, কাঠ বা টেরাকোটার পাত্রে অদ্ভুদ সুন্দর সুন্দর গাছ দেখলে আমরা কে না পছন্দ করি? অনেকে অনেক দাম দিয়ে সেগুলো কিনে এনে সাজিয়ে রাখেন ঘরের গুরুত্বপূর্ণ কোণায়। অনেক সময় দেখা যায় সঠিক যত্নের অভাবে গাছ বেশিদিন টিকতে পারছে না। আপনি যদি আপনার ঘরোয়া গাছপালা জীবিত রাখতে চান তবে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া উচিত। বেঁচে থাকার জন্য তিনটি বিষয়ের উপর প্রত্যেকটি গাছপালা নির্ভরশীল। এগুলো হল-
১. সূর্য
২. পানি
৩. খাবার
আপনার ঘরোয়া গাছগুলোকে জীবিত রাখতে চাইলে কোনো না কোনো ভাবে এই তিনটি বিষয়ের সঠিক সমন্বয় করতে হবে। শুনতে সোজাসাপ্টা মনে হলেও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ঘরোয়া গাছপালার কতটুকু সূর্যের আলো প্রয়োজন?
আপনি জানেন যে সূর্যের আলো আপনার গাছের জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু একটি গাছের কতটুকু সূর্যের আলো জরুরি এটি নির্ধারণ করা একটি জটিল বিষয়।
মূলত গাছকে সূর্যের আলোর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী উচ্চ আলো(পূর্ণ সূর্যালোক), মধ্যম আলো (উজ্জ্বল কিন্তু সরাসরি সূর্যালোক নয়) বা কম সূর্যালোক শোষনকারী গাছ হিসেবে ভাগ করা হয়। কম আলো শোষণকারী গাছকে জানালার খুব বেশি কাছে রাখা যাবে না। আরও একটি বিষয় যেটা সহজেই ভুলে যাওয়ার মত সেটা হলো সব জানালা সমান আকৃতির তৈরি করা হয় না। যদি এমন একটি জানালা থাকে যেখানে বাহির হতে ছায়া আসছে(যেকোনো কিছুর ছায়া) তাহলে আপনার গাছটি ঐ স্থানে কখনোই পরিপূর্ণ ভাবে সূর্যালোক পাবেনা।
তাই আপনাকে যা করতে হবে-
ক) উচ্চ সূর্যালোক শোষনকারী গাছ একটি ছায়ামুক্ত জানালার সামনে সরাসরি রেখে দিন।
খ) মধ্যম আলো শোষণকারী গাছ ছায়ামুক্ত জানালার সামনে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অথবা এদের সরাসরি সূর্যালোক আসে এমন জানালার সামনেও রাখা যায়।
গ) কম সূর্যালোক শোষনকারী গাছ ঘরের ছায়াযুক্ত স্থানেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে কিন্তু এদেরকেও ঘরের এমন স্থানে রাখুন যেখানে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে।
সূর্যালোক সম্পর্কে শেষ কথা, সেটা হল, যেসকল গাছের অল্প সূর্যালোক প্রয়োজন তাদের একটি আলোক মাধ্যমের কাছাকাছি রাখুন। অন্ধকার ঘরে কিংবা যে ঘরে জানালা নাই সেখানে রাখবেন না। আমার কাছে অল্প সূর্যালোক শোষনকারী গাছ হিসেবে পোথস গাছ(মানিপ্লান্ট) চমৎকার মনে হয়।
এরাই একমাত্র গাছ যেটা জানালার আশেপাশে দেয়ালে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু ওদেরও কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়।
ঘরোয়া গাছপালা গুলোকে কতবার পানি দেয়া উচিত?
একটি গাছকে কতটুকু পানি দিতে হবে এটি শুরু থেকেই আমার কাছে খুব রহস্যজনক লাগত। আমি আমার প্রথম কিছু ঘরোয়া গাছ বেশিদিন টিকত না কারণ গাছের যত্নআত্তির বিষয়গুলো একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল এটা আমি তখন বুঝতাম না। গাছের সূর্যালোক শোষণ ও পানি গ্রহণের মাঝে যে সম্পর্ক আছে তা শেখার আগে আমি ধারনা করতাম একটি গাছ দুর্বল মানে এর প্রচুর পানির প্রয়োজন। এভাবে আমি আমার পূর্ববর্তী গাছগুলো মেরে ফেলেছিলাম। আপনার গাছের কতটুকু পানির প্রয়োজন এটি ঐ গাছের গোড়ায় থাকা মাটির পরিবেশ এবং কতটুকু সূর্যালোক শোষণ করে তার উপর নির্ভরশীল। কিছু গাছ শুকনো, কিছু গাছ প্রায় শুকনো, কিছু গাছ আর্দ্র বা ভেজা মাটি পছন্দ করে।
আপনার গাছটি যদি শুকনো মাটি পছন্দ করে তবে আপনাকে মাটি পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং আপনার গাছকে মাসে একবার বা দুইবার করে পানি দিতে হবে। যদি আপনার গাছটি অধিক সূর্যালোক শোষণ করে তবে খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। তখন আপনাকে বেশি পরিমাণে পানি দিতে হবে। শীতকালের তুলনায় এ সময়ে সূর্যালোক দীর্ঘসময় ধরে প্রবেশ করে।
ঘরোয়া গাছপালা যেগুলো প্রায় শুকনো মাটি পছন্দ করে এদের তখনই পানি দেয়া প্রয়োজন যখন মাটির উপরের অংশ শুকিয়ে যায় এবং যে সকল গাছ ভেজা মাটি পছন্দ করে তাদের প্রতিদিন বেশি করে পানি দিতে হবে।
পানি শোষণ ক্ষমতা ও মাটি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার উপর নির্ভর করে আমি আমার গাছগুলোর জন্য সাপ্তাহিক, দ্বিপাক্ষিক এবং মাসিক হিসেবে পানি দেয়ার সময় তালিকা তৈরি করেছি।
যেহেতু আপনি আপনার গাছকে ভালভাবে চিনেন তাই কতটুকু পানি দিতে হবে এটি জানা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। গাছের পাতা এক্ষেত্রে সঠিক পথ দেখাবে। সাধারণত পাতা যদি বাদামী রং ধারণ করে ও কুঁচকে যেতে শুরু করে তবে আপনার গাছটির অধিক পানি প্রয়োজন।
অধিকাংশ গাছের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি উপযুক্ত পদ্ধতি দরকার যাতে গোড়া না পচে যায়। আমি আমার গাছের পাত্র ঝুড়িতে রাখতে পছন্দ করি তাই আমি ছোট প্লাস্টিকের পিরিচ ব্যবহার করি। আমি যখন পুনরায় পাত্রে গাছ রোপণ করি, তখন নিচে পাথর দিই যাতে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন হয়।
ঘরোয়া গাছের কি খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে?
আপনার ঘরোয়া গাছপালাগুলো সুস্থ রাখার তৃতীয় উপায় হল তাদেরকে উপযুক্ত মাটিতে রাখতে হবে। কতটুকু পানি ও মাটি ধারণ করতে পারে তার উপর নির্ভর করে একেক রকম গাছপালা একেক রকমের মাটি পছন্দ করে। পটিং মাটি এমন ধরনের মাটি যা আপনার গাছের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে। যদিও সময়ের সাথে সাথে এটি পানি দ্বারা ধুয়ে যাবে। তাই পুনরায় মাটিতে প্রতিদিন দিতে হবে। প্রতি বছর বা দুই বছর অন্তর অন্তর পটিং মাটি দিলেই হবে।
গ্রীষ্মকালে মাসে একবার বা দুইবার সার দিতে অধিকাংশ মানুষ পরামর্শ দেন। এতে গাছ স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়।
নিষ্কাশন ছিদ্রসহ পাত্র ব্যবহার করা খুবই জরুরি। যদি পাত্রে নিষ্কাশন ছিদ্র না থাকে তবে শিকড় পচে যাবে যার জন্য আপনার গাছ মারা যাবে।
গাছের যত্নআত্তি সম্পর্কে যে বিষয়সমূহ খেয়াল রাখতে হবে
ক) ঘরোয়া গাছপালা নতুন পরিবেশে এলে অনেক সময় শুরুর দিকে খাপ খাওয়াতে পারেনা। তাই যখনি আপনি নতুন গাছ ঘরে আনবেন, খুব বেশি স্থান পরিবর্তন না করার চেষ্টা করবেন। গাছকে একি স্থানে একমাস ফেলে রাখুন। যতক্ষন না পর্যন্ত আপনার মনে হচ্ছে ঐ স্থানে আলো পর্যন্ত নাই। এই উপায়ে গাছটি তাপমাত্রা, আদ্রর্তা এবং অন্যান্য বিষয়ের সাথে আপনার ঘরে খাপ খাওয়াতে পাড়বে।
খ) সাকুলেন্ট জাতীয় গাছ পূর্ণ সূর্যালোক গ্রহণ করে তাই গ্রীষ্মকালে ছদের ঘরে না রেখে বাইরে রাখতে পছন্দ করি। এতে এরা বেশি সূর্যালোক পায় এবং গাছের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়।
গ) আপনি যদি আপনার ঘরোয়া গাছপালা গুলোকে গ্রীষ্মকালে বাহিরে রাখতে চান তাহলে ধীরে ধীরে সূর্যালোকের নিচে আনবেন নিচে আনবেন না হলে কিন্তু আকস্মিক ভাবে সূর্যালোকের নিচে আনলে গাছগুলো ঝলসে যাবে।
যারা এ জগতে নতুন তাদের জন্য পরিচিত কিছু ঘরোয়া গাছপালা
ক) স্নেক প্ল্যান্ট (Snake plant)
এরা কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। এরা খুব শক্ত হয় এদের প্রচুর আলো লাগে না এমনকি আপনি যদি পানিও না দেন তবুও আপনাকে এরা ক্ষমা করে দিবে। আমি এদের রং মসৃণতা ভালবাসি। ফক্স স্নেক প্ল্যান্ট আমার সবচেয়ে প্রিয়।
খ) পোথস (pothos plant)
খোলা তাকে কিংবা যেকোনো স্থানে যেখানে আপনি এই উদ্ভিদ রাখতে চান না কেনো এর জন্য খুবই চমৎকার উদ্ভিদ এরা। এটিই একমাত্র উদ্ভিদ যা জানালার বিপরীতে থেকেও বাঁচতে পারে। খুবই চমৎকার অল্প সূর্যালোক শোষনকারী উদ্ভিদ।
গ) ঘৃতকুমারী(Aloe)
এদেরকে পুনঃ পুনঃ ভাবে পটিং করতে হবে যাতে এরা বড় হতে পারে। ঘৃতকুমারী আপনার অনেক সৌন্দর্য ও ভেষজ সমস্যার সমাধান দিতে সর্বদাই প্রস্তুত। এরা খুব অল্প পরিমাণ পানি পেলেও বেড়ে উঠে। খুব বেশি যত্ন নিতে হয় না এদের।
ঘ) জেড উদ্ভিদ (Jade plant)
এরা খুবই দ্রুত বড় হয়। তাই আমি নতুনদের এগুলো গাছ রাখারই পরামর্শ দিব।
আজ এ পর্যন্তই। আমার ঘরোয়া উদ্ভিদের প্রতি চরম ভালোবাসা দিন দিন নেশায় পরিণত হচ্ছে। অবশ্য ভাল নেশা করা সবসময়ই উপকারি!
- জেনে নিন গোল মরিচের ১০ টি চমৎকার উপকারিতা - September 11, 2020
- মালবেরি বা তুঁত চাষ পদ্ধতি - May 23, 2020
- ছাদবাগানে আম চাষ – আম গাছের জোড় কলম পদ্ধতি - March 20, 2020