বুড়িয়ে যেতে আমরা কে চাই? কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে বয়স বাড়তে থাকবেই। কিন্তু পুষ্টিকর খাবার বা স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মাধ্যমে আমরা নিজেদের তারুণ্য কিছুটা হলেও ধরে রাখতে পারি। রোগবালাইকে প্রতিরোধ করতে পারি। বুড়িয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম শত্রু ফ্রি র্যাডিকেল।
আমাদের শরীরে অক্সিডেটিভ প্রক্রিয়াকে রোধ করার জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহ থেকে টক্সিন এবং ফ্রি র্যাডিকেল বের করে দিয়ে যা ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে দেহকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিকেল ত্বকের সংস্পর্শে এসে দেহকোষ ও ডিএনএকে নষ্ট করতে পারে। একজন ব্যক্তি যত বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খাবেন, তাঁর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তত বেশি হবে। এছাড়াও –
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর খাবার বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে তারুণ্য বজায় রাখে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- সারা দিনের অবসাদ দূর করে
- ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’-এর অভাবজনিত ক্ষতি দূর করে।
- তারুণ্যশক্তি বজায় রাখে।
- স্মৃতিশক্তি বজায় রাখে ।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ কিছু খাবারের তালিকা নিচে দেয়া হলো-
বিদেশী ফল ব্লুবেরী, ব্ল্যাকবেরী, চেরী, স্ট্রবেরী, রাসবেরী, এভোকাডো ইত্যাদিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। কিন্তু আমাদের দেশে তা সহজলভ্য নয় বা অধিক দামে কিনতে হয়। তাই দেশীয় খাবারে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কিছু উৎস আজকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো-
পালংশাক
পালংশাকে অধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত। এতে ভিটামিন ও মিনারেল আছে। এছাড়াও এতে উপস্থিত লুটেইন ও যিয়াজেন্থিন ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করে।
ব্রোকলী
ব্রোকলীতে আছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান। ফেনল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। ব্রোকলীতে উপস্থিত ফেনলিক উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
গ্রিন টি
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে অধিক জনপ্রিয় পানীয় গ্রিন টি। এতে উপস্থিত এন্টিমাইক্রোবিয়াল , এন্টিইনফ্লেমটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য দিনে দিনে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রিন টি বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
লাল আঙুর
লাল আঙুরে আছে ভিটামিন সি,সেলেনিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মধ্যে এন্থোসায়ানিন ও প্রোএন্থোসায়ানিন আঙুরে উপস্থিত যা হার্টের রোগ বা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
কিসমিস
কিসমিসে আছে ফেনল আর পলিফেনলের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সার ও টিউমার থেকে প্রতিরোধ করে, চোখকে সুরক্ষা করে। পাকস্থলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আলু
শর্করার আধিক্যের কারনে অনেক সময় আলু খেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু লাল আলু বা মিষ্টি আলুতে আছে ভিটামিন ও মিনারেল। যা ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও হার্টের সমস্যা,ক্যান্সার বা মস্তিষ্কজনিত সমস্যাকেও প্রতিরোধ করে।
শিমজাতীয় সবজি
বরবটি, শিম, মটরশুটি, কড়াইশুঁটি ইত্যাদি সবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ভাণ্ডার । এতে আছে ফাইটোক্যামিকেল, প্রোটিন ও ফাইবার। প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস হওয়াতে বিশ্বব্যাপী ভেজিটেরিয়ানদের কাছে বিনস অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ডার্ক চকলেট
চকলেটের নাম দেখে চকলেটপ্রেমীদের কাছে নিশ্চয়ই তা অত্যন্ত আনন্দের?? হুম ডার্ক চকলেটে আছে ফ্ল্যাভিনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রতিদিন এক আউন্স পরিমাণ চকলেট স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণে বা কর্ম উদ্দীপনা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিন্তু লোভ সংবরণ করে অল্প পরিমাণ চকলেট খাওয়াই যায়!!
মশলা ও হার্ব
তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, গোল মরিচ, জিরা, হলুদ, আদা ইত্যাদি মশলা রান্নায় সুঘ্রাণ ও স্বাদ বৃদ্ধিতে দেয়া হলেও এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎকৃষ্ট উৎস। এছাড়াও অরিগানো, পুদিনা, মেথি, রোজম্যারি, থাইম ইত্যাদি হার্বস বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের জোগান দেয় ।
সবশেষে গাজর, টমেটো, পেয়ারা, ক্যাপসিকাম, বরই ইত্যাদিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যেকোনো একটি মাধ্যমে আমরা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর চাহিদা মেটাতে পারি।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021