Skip to content

পেয়ারার রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা

পেয়ারা বাংলাদেশের একটি অন্যতম লাভজনক ফল। পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidiun guajava. অত্যন্ত উৎপাদনশীল এই ফলটি উপমহাদেশের নয়। ধরা হয় এই দেশে পেয়ারার আগমণ হয় সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে। পেয়ারা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনলের মতো ক্যান্সার প্রতিরোধী কিছু উপাদান। পেয়ারার বীজে রয়েছে ওমেগা-৩। ওমেগা-৬, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও আঁশ। এই ফলটি উৎপাদনপানও যেমন প্রচুর হয়, তেমনি এর রোগ-বালাই ও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল থাকে। আজ আমরা আলোচনা করব পেয়ারার কিছু সাধারণ রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় নিয়ে।

পেয়ারার স্কেল/খোসা পোকা

পোকা চেনার উপায়

২-৩ মি.মি. ডিম্বাকৃতির বাদামি থেকে ধূসর রঙের পোকা বাচ্চাসহ দলবেধে গাছের ডালে শক্ত করে লেগে থাকে। খোলস আঁশের মতো।

লক্ষণ

১। পোকা পাতা ও ডালের রস চুষে খেয়ে ফেলে ফলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়।

 ২। পোকা সাধারণত পাতা, ফল ও ডালে আক্রমণ করে এবং সাদা সাদা তুলার মত দেখা যায়। 

 ৩। অনেক সময় পিপড়া দেখা যায় গাছে। 

 ৪। পোকার আক্রমণে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় এবং ডাল মরে যায়।

Guava Scale insect
পেয়ারা স্কেল পোকা

প্রতিকার

১। আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে দ্রুত সম্ভব ধ্বংস করে ফেলতে হবে।  

২। অল্প আক্রমণের ক্ষেত্রে তুলায় সমান্য অ্যালকোহল লাগিয়ে সেটি দিয়ে ঘষে গাছ পরিস্কার করলে আক্রমণ কমানো সম্ভব। 

৩। সম্ভব হলে হাত দিয়ে ডিম ব বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। 

৪। জৈব বালাইনাশক নিমবিসিডিন (0.4%) ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়। 

৫। আক্রমণ বেশী হলে প্রতিলিটার পানিতে 2 মিলি রগর টাফগর, সানগর বা সুমিথিয়ন 2 মিলি মিপসিন বা সপসিন মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করলে পোকা মরে যায়। 

পেয়ারার সাদা মাছি পোকা

লক্ষণ

১। এরা পাতার রস চুষে খায় ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পরে খুব দ্রুত।

২। পাতায় অসংখ্য সাদা বা হলদেটে দাগ দেখা যায়। সাদা তুলার মত বস্তু ও সাদা পাখাযুক্ত মাছি ও দেখা যায়।

Guava White Fly
পেয়ারার সাদা মাছি পোকা

প্রতিকার

১। সাদা আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন বা আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা ধরা যায়।

২। আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।

৩। 50 গ্রাম সাবানের গুড়া 10 লিটার পানিতে গুলে পাতার নিচে সপ্তাহে 2/3 বার ভাল করে স্প্রে করতে হবে এবং সাথে 5 কৌটা গুল (তামাক গুড়া) পানিতে মিশিয়ে দিলে ফল ভাল পাওয়া যায়। 

৪। অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করা পোকা দমনে যথেষ্ট ভালো ফল পাওয়া যায়। যেমনঃ এডমায়ার 0.5 মিলি বা 0.25 মিলি ইমিটাফ বা ২ মিলি টাফগর/রগব/সানগর প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

পেয়ারার জাব পোকা

লক্ষণ

১। জাব পোকা গাছের পাতা ও আগার রস খেয়ে ফেলে এবং এক ধরনের মিষ্টি রস নিঃসরণ করতে থাকে। 

২। এর আক্রমণ বেশি হলে শুটি মোল্ড ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে এবং পাতায় কালো আবরণ দেখা যায়।

Guava Aphid
পেয়ারার জাব পোকা

প্রতিকার

১। অল্প আক্রমণের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে তুলে পোকা পিষে মেরে ফেলতে হবে। 

২। আক্রান্ত পাতা ও ডাল যতদ্রূত সম্ভব অপসারণ করতে হবে। 

৩। পরভোজী পোকা যেমন : লেডিবার্ডবিটল লালন ক্ষেতে ছেড়ে দিলে এরা জাব পোকা খেয়ে আক্রমণের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 

 ৪। ডিটারজেন্ট পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। 

 ৫। প্রতি গাছে ৫০ টির বেশি পোকার আক্রমণ হলে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক যেমন: এডমেয়ার ০.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে। 

পেয়ারার মাছি পোকা

লক্ষণ

১। মাছি পোকা ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় ফলে অভিপজিটর ঢুকিয়ে তাতে ডিম পেরে রাখে। 

২। এ ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে ফলের মাংসল অংশ খেতে থাকে এবং ফল ভেতরে পঁচে যায়।

প্রতিকার

১। ফল ব্যাগিং করা বা পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলে আক্রমণ কমে।

 ২। নষ্ট ফল বাগান থেকে যতদ্রুত সম্ভব অপসারণ করতে হবে। 

 ৩। বিষটোপ ব্যবহার করে ( ১০০ গ্রাম নরমকরা কলা + ৫ গ্রাম ভিটাব্রিল + ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করতে হবে) পোকা ধ্বংস করা যায়।

৪। বেইট ট্র্যাপ স্থাপন করা ও ফেরোমন ফাঁদ (ব্যাকট্রো- ডি হেক্টর প্রতি ৮০ টি লিউর)ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৫। ফেনিট্রথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক যেমন: সুমিথিয়ন ২.৪ মিলি/ লি হারে বা টাফগার ২ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করলে আক্রমণ কমে, পোকাও মরে৷ 

পেয়ারার বাকল খেকো পোকা

লক্ষণ

১। বাকল খেকো পোকার কীড়া পেয়ারা গাছের কান্ড ছিদ্র করে এবং আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ করে বাকল খেতে থাকে এবং বাকলে ছিদ্র  সৃষ্টি করে। 

 ২। ছিদ্রের মুখে কালচে বাদামী চা পাতির গুড়োর মত দানা দানা কীড়ার মল দেখা যায়।

 ৩। কান্ডে ছিদ্রের কারণে গাছে খাদ্য ও পানি সরবরাহ ব্যাহত হয়।

প্রতিকার

১। ছিদ্রমুখের মল পরিস্কার করে পেট্রোল/কেরোসিন তেল বা ক্লোরোফর্মে এক টুকরো তুলো ভিজিয়ে ছিদ্রের মুখে ঢুকিয়ে ছিদ্রের মুখ নরম কাদা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। এতে কীড়া মারা যাবে । 

২। আক্রান্ত গাছের কান্ডে প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি লিটার পরিমাণ নিমবিসিডিন মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৩। আলোক ফাঁদ এ পোকার মথকে আকৃষ্ট করে ফলে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা মেরে ফেলা যায়।

৪। ক্ষেত ও গাছের গোড়ার আগাছা সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। তাহলে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। 

পেয়ারার মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা

লক্ষণ

১। ছাতরা পোকা পাতা ও ডালের রস চুষে নেয় ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পরে। 

২। পোকার আক্রমণে পাতা, ফল ও ডালে সাদা সাদা তুলার মত দেখা যায়। 

৩। অনেক সময় পিঁপড়া দেখা যায়। 

৪। এর আক্রমণে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় এবং ডাল মরে যায়।

Guava Mileaybug
পেয়ারা মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা

প্রতিকার

১। আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। 

২। গাছের গোড়ার মাটি থেকে 15-20 সেমি উপরে স্বচ্ছ পলিথিন দ্বারা মুড়ে দিতে হবে যাতে মিলিবাগ গাছে উঠতে না পারে। 

৩। সম্ভব হলে হাত দিয়ে ডিম ব বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। 

৪। জৈব বালাইনাশক নিমবিসিডিন (0.4%) ব্যবহার করে পোকা ধ্বংস করা যায়।

৫। আক্রমণ বেশী হলে প্রতিলিটার পানিতে 2 মিলি রগর টাফগর, সানগর বা সুমিথিয়ন 2 মিলি মিপসিন বা সপসিন মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

Leave a Reply