আমরা প্রায়শই বাগানে ফল, ফুল, সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধিগুণসম্পন্ন গাছ লাগিয়ে থাকি। ঔষধি গাছ বলতে তাদেরই বোঝানো হয় তাদেরকে, যারা প্রাকৃতিক সংশ্লেষণে সেকেন্ডারি পদার্থ হিসেবে উপক্ষার, গ্লাইকোসাইডস, ট্যানিন, ভিটামিন, ঔষধি তেল ও খনিজের সংমিশ্রণের ঔষধি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকে।
আমরা অনেকেই ছাদে, বারান্দায় ঔষধি গাছ লাগিয়ে থাকি। বেশিরভাগ সময় এসব ঔষধি গাছ খুব বেশিদিন টিকে না। অনেকেই আমরা ঔষধি গাছ পরিচর্যা ও চাষে কিছু সহজ ভুল করে থাকি। এই ভুলের দরুণ তেমন একটা সফল হতে পারি না। নিচের দশটি সেরা পরামর্শ প্রয়োগ করলে আপনিও এই বিষয়ে হয়ে যেতে পারেন দক্ষ ও স্মার্ট।
ভুল ০১ঃ বীজ থেকে জন্মানোর চেষ্টা করা
অনেকেই আমরা প্রথম ঔষধি গাছের চাষ করতে গেলে বীজ থেকে গাছ তৈরি করার ভুলটি করতে থাকি। আমরা অধিকাংশই সঠিক উপায়ে বীজ থেকে চারা তৈরির প্রক্রিয়া সম্বন্ধে দক্ষ নই। এজন্যে আমাদের প্রথম ঔষধি গাছের বাগান তৈরির জন্যে চারা থেকেই শুরু করা উচিত।
ভুল ০২ঃ ভুল জাত নির্বাচন করা
আমরা প্রথমেই অনেক জটিল ও বেশি যত্ন নিতে হয় এমন সব ঔষধি গাছ নির্বাচন করে বাগানে চাষ করি। অনেক সময় সঠিক পরিচর্যা জ্ঞানের অভাবে বেশিদিন টিকে না। এতে আমাদের মন ভেঙ্গে যায়। এজন্যে সবার প্রথমে পুদিনা দিয়ে শুরু করা উচিত। এটি খুবই স্বল্প পরিচর্যা যোগ্য উদ্ভিদ। প্রথমত, পুদিনা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। আপনি নিজেই দেখতে পারবেন এরা কত সহজে আপিনার আঙ্গিনায় বেড়ে উঠছে। দ্বিতীয়ত, ঠিকমতো পানি না দিলে পুদিনার পাতা কুকড়ে যায়। আবার পানি দিলে সেগুলো সতেজ হয়ে ওঠে। এতে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার গাছের জন্যে ঠিক কতটুকু পানি দরকার।
ভুল ০৩ঃ ঔষধি গাছকে ঘরোয়া উদ্ভিদের মতো পানি দেওয়া
আমরা অনেকেই যেভাবে ঘরোয়া উদ্ভিদকে পানি দিয়ে থাকি, ঔষধি গাছকেও একইভাবে দিতে চেষ্টা করি। এটি একটি ভুল পন্থা। বরঞ্চ প্রতিদিন স্বল্প পরিমাণে পানি দিলেই এরা বেশি সতেজ থাকে।
ভুল ০৪ঃ দ্রুত ও ঠিক সময়ে ছাটাই না করা
পুদিনা প্রুনিং প্র্যাক্টিস করার জন্যে সেরা একটি ঔষধি গাছ। ঔষধি গাছের আগা নিয়মিত ছাটাই করতে হয়। এদের উপরের ক্রমবর্ধমাম অংশ নিয়মিত কেটে দিলে দুইপাশ দিয়ে দুটি আলাদা কান্ড বের হয়। নইলে এসব গাছ লম্বাতেই শুধু বাড়তে থাকত, তখন এদের অবলম্বন দিয়েও সোজা রাখা কঠিন হয়ে যেত। মাটি থেকে ৩-৪ ইঞ্চি বড় হলেই প্রুণিং শুরু করে দিতে হয়।
আরও পড়ুনঃ জয়ফল বিচিত্রা
ভুল ০৫ঃ ভুল স্থান হতে পাতা সংগ্রহের চেষ্টা করা
আমরা অনেক সময়ই মনে করি ঔষধি গাছের বড় পাতাগুলোকে সংগ্রহ করতে হয়। ছোট ও কচি পাতাগুলোকে বাড়তে দিতে হয়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। প্রুণিং অবস্থায়ই গাছের আগার ছোট ও কচি পাতাগুলোকে ঔষধি গুণাগুণের জন্যে সংগ্রহ করাই শ্রেয়। বড় ও পুরনো পাতাগুলো সালোকসংশ্লেষণের জন্যে ভাল। এদেরকে রেখে দিন।
ভুল ০৪ঃ দ্রুত ও ঠিক সময়ে ছাটাই না করা
পুদিনা প্রুনিং প্র্যাক্টিস করার জন্যে সেরা একটি ঔষধি গাছ। ঔষধি গাছের আগা নিয়মিত ছাটাই করতে হয়। এদের উপরের ক্রমবর্ধমাম অংশ নিয়মিত কেটে দিলে দুইপাশ দিয়ে দুটি আলাদা কান্ড বের হয়। নইলে এসব গাছ লম্বাতেই শুধু বাড়তে থাকত, তখন এদের অবলম্বন দিয়েও সোজা রাখা কঠিন হয়ে যেত। মাটি থেকে ৩-৪ ইঞ্চি বড় হলেই প্রুণিং শুরু করে দিতে হয়।
ভুল ০৫ঃ ভুল স্থান হতে পাতা সংগ্রহের চেষ্টা করা
আমরা অনেক সময়ই মনে করি ঔষধি গাছের বড় পাতাগুলোকে সংগ্রহ করতে হয়। ছোট ও কচি পাতাগুলোকে বাড়তে দিতে হয়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। প্রুণিং অবস্থায়ই গাছের আগার ছোট ও কচি পাতাগুলোকে ঔষধি গুণাগুণের জন্যে সংগ্রহ করাই শ্রেয়। বড় ও পুরনো পাতাগুলো সালোকসংশ্লেষণের জন্যে ভাল। এদেরকে রেখে দিন।
ভুল ০৬ঃ ভুল করে বেশি ছেটে ফেলা
আপনি যদি নিয়মিত প্রুণিং করেন, এটা কোনো সমস্যা হবে না। তবে যদি আপনি গাছ থেকে ফুল আশা করেন, তাহলে ফুল হওয়ার পূর্বে ছাটাই বন্ধ করতে হবে। যদি আপনি শুধু পাতাই চান, তবে ফুলের কুড়ি আসলেই ছেটে ফেলবেন। তবে গাছ থেকে আপনি সেরা ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন পাতাই পাবেন।
ভুল ০৭ঃ গুণাগুণসম্পন্ন মাটি ব্যবহার না করা
আপনি আপনার গাছের জন্যে সেরা মাটি দিলে, সেও পনাকে তেমনই ফেরত দিবে। হার্ব বা ঔষধি গাছের জন্যে মাটি তৈরিতে পটিং মিক্স, চা বা কফির পাতা ও ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও ডিমের খোসা গুড়ো করে দিতে পারেন। এরপর দেখুন কিভাবে আপনার ঔষধি গাছগুলো বেড়ে ওঠে।
ভুল ০৮ঃ এক উদ্ভিদে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া
পুদিনা চাষ করে অভ্যস্ত হয়ে গেলে নতুন কিছু লাগানো শুরু করুন। এক গাছে বেশিদিন অভ্যাস্ত না থাকার চেষ্টা করুন। এরপর চাষ করতে পারেন মেন্থল, রোজমেরী, থাইম ইত্যাদি। প্রত্যেকেই আমাদের খাওয়ার জন্যে ব্যবহৃত হয়, প্রত্যেকেই স্বল্প পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে।
ভুল ০৯ঃ একই উদ্ভিদের ভিন্ন জাত সম্বন্ধে ধারণা না থাকা
ঔষধি গাছ চাষ করার আগে এর সম্বন্ধে বিস্তর ধারণা নিয়েই শুরু করা উচিত। অরেগানোর দুটি পরিচিত জাত রয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় ও মেক্সিকান। ভূমধ্যসাগরীয় জাতের গাছের পাতা খাওয়ার জন্যে ব্যবহৃত হয় না। অন্যদিকে মেক্সিকান জাতের পাতা শুকিয়ে স্পাইসি তৈরি করা হয়। এটি খাবারে ব্যবহার করা হয়। একইভাবে ভিন্ন ভিন্ন জাতের পাতা, ফুল ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। গাছ না চিনলে হয়ত আমরা ভুল জাতের গাছটাই বাগানে লাগানোর জন্যে ব্যবহার করে ফেলতে পারি।
আরও পড়ুনঃ ছাদবাগানে ইপসম লবণের সেরা ১০টি ব্যবহার
ভুল ১০ঃ খামখেয়ালি ভাবে গাছ বাড়তে থাকা
আপনি যদি মাটির পরিবর্তে পটে ঔষধি গাছ লাগান, খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছটি খুব বেশি বেড়ে পটকেও না ছাড়িয়ে যায়। অরেগানো ও মেন্থল এর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি। এরা খুব দ্রুত বর্ধণশীল। আপনি যদি পটে গাছ লাগিয়ে থাকেন, তবে বাড়ন্ত গাছকে সহজেই মাটিতে স্থানান্তর করে নিতে পারেন। এতে আর গাছের দ্রুত বর্ধণশীলতা নিয়ে চিনাত থাকবে না। বাড়ন্ত রোজমেরীকে পুদিনার মতোই প্রুণিং করতে হয়, কিন্তু এর বৃদ্ধি এত ক্ষীণ যে খুব সহজে বোঝা মুশকিল।
iloveherbalism থেকে অনূদিত।।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020