Skip to content

মরিচের পাতা কুঁকড়ে যাওয়া রোগ প্রতিরোধে করণীয় – দ্বিতীয় পর্ব

মরিচ গাছের পাতা কোঁকড়ানো রোগের ভুক্তভোগী হননি, এমন ছাদবাগানি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এটি বাগানিদের নিত্যনৈমত্তিক যন্ত্রণার একটি কারণ। মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগের অন্যতম একটি নিয়ামক হল মাকড়। সাধারণত কয়েক ধরণের মাকড় মরিচ গাছে আক্রমণ করে। লাল মাকড়, এফিড বা জাব পোকা এবং সাদা মাছি।

আগের পর্বের লেখাটি পড়তেঃ মরিচের পাতা কুঁকড়ে যাওয়া রোগ প্রতিরোধে করণীয় – প্রথম পর্ব

লাল মাকড়

পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই লাল মাকড় পোকা। এরা দেখতে এতটাই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। যেকোনো মরিচ গাছের পাতায় এই পোকার আক্রমণ হতে পারে। এরা দেখতে লাল রঙের এবং পাতার নিচে থাকে।

মাকড়ের আক্রমণের কারণে মরিচের ফলন পরিমাণগতভাবে প্রায় ৭৫-৮০ % হ্রাস পায়। মরিচের পোকামাকড় দমন করতে পারলে মরিচের উৎপাদন অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

লাল মাকড়

লাল মাকড়

লক্ষণ

এই পোকার আক্রমণে আক্রান্ত পাতার নিচের দিকে উলটানো নৌকার মতো হয়ে যায়। এরা পাতার রস চুষে খায়। পাতা কুঁকড়ে,একদম শুকিয়ে যায়। ফলে পাতা ঝড়ে পরে। ফুলের কলিও ঝড়ে পরে। ফল আকারে ছোট হয়ে যায়, কুঁকড়ে যায় এবং ফলের ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

দমন ব্যবস্থা 

১) নিমতেল ৫ মিলি + ৫ গ্রাম ট্রিকস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে।

২) সালফার জাতীয় কীটনাশক ১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম মিশিয়ে বা প্যাকের গায়ে লেখা মাত্রা অনুযায়ী সকালে বা বিকালে সূর্য ডোবার পর স্প্রে করতে হবে। প্রায় ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

৩) পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার পরিহার করতে হবে।

৪) আক্রমণ বেশি হলে মাকড়নাশক ওমাইট ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২.০ মিলি বা ভার্টিমেক ১.৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি মিশিয়ে পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করে মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৫) মাকড়ের সাথে অন্য পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রথমে মাকড়নাশক ব্যবহার করে অতঃপর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

৬) কুকঁড়ে যাওয়া পাতা ঠিক না হলেও নতুন কুশির সাথে ভালো পাতা বের হয়। এছাড়াও ফুল গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতি পনেরো দিন পরপর প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে শেষ বিকেলে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এফিড বা জাব পোকা

মরিচ গাছের কচি অথবা বয়স্ক পাতায় এই পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে।

এফিড

এফিড বা জাব পোকা

লক্ষণ

সব ধরণের পাতার নীচের দিকে বসে রস শুষে খায় ফলে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। এমনকি এরা গাছের কান্ডেও আক্রমণ করে থাকে ফলে কান্ড শুকিয়ে মারা যায়।

দমন ব্যবস্থা

১) আঠালো হলুদ স্টিক ট্র‍্যাপ (প্রতি হেক্টরে ৪০ টি) ব্যবহার করে।

২) আধা ভাঙ্গা নিম বীজের (৫০ গ্রাম ১লিটার পানিতে ২৪ ঘন্টা ভেজানোর পর মিশ্রণটি ছাঁকতে হবে) নির্যাস আক্রান্ত গাছে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৩) বন্ধু পোকাসমূহ (লেডীবার্ড বিটলের পূর্নাঙ্গ ও কীড়া এবং সিরফিড ফাই) প্রকৃতিতে লালন।

৪) আক্রমণ বেশি হলে স্বল্পমেয়াদী বিষক্রিয়ার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ মিলি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি বা ডাইমেথয়েট বা কেরাতে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সাদা মাছি

ছোট, হলুদ বর্ণের সাদা ডানা যা ঘন মোমের মতো গুঁড়া দিয়ে ঢাকা থাকে।
কচি চারা গাছকে আক্রমণ করে।

সাদা মাছি

সাদা মাছি

লক্ষণ

নিম্ফ এবং পূর্ণাঙ্গ উভয় কচি পাতার নিচে বসে রস শুষে খায় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায় এবং গাছের ক্ষতি করে। পত্র ফলকে হলুদ, বিস্তৃত, বৃত্তকার, বিক্ষিপ্ত দাগ দেখা যায় এবং এই দাগ দ্রুত সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে। সাধারণত পূর্ণাঙ্গ মাছি হলুদ মোজাইক ভাইরাস বহন করে।

দমন ব্যবস্থা

১) জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে।

২) প্রতিরোধী জাতের চাষ করতে হবে।

৩) আক্রান্ত গাছ নষ্ট করতে হবে।

৪) সাবান-পানি ব্যবহার (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট ) করে।

৫) বালাইনাশক হিসেবে নিম বীজের নির্যাস (আধা ভাঙ্গা ৫০ গ্রাম নিম বীজ ১ লিটার পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে) স্প্রে করা ।

৬) আক্রমণ বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মিশিয়ে অথবা এডমায়ার ২০০ এসএল প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করা।

৭) এছাড়াও রাসায়নিক কীটনাশক হিসেবে —

ক) ল্যাম্বডা সাইহ্যালোথ্রিন ৫ % ই. সি @ ০.৫ মিলি /লিটার বা

খ) ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮ % এস. এল @ ১ মিলি/৫ লিটার বা

গ) ফ্লোনিকামিড ৫০ % ডবলু. জি @ ১ গ্রাম/৫ লিটার বা

ঘ) ফেনভেলারেট ২০ % ই. সি @ ০.৫ মিলি /লিটার বা

ঙ) ডাইনোটোফুরণ ২০ % এস. জি @ ১ গ্রাম /২.৫ লিটার জলে গুলে স্প্রে করার সুপারিশ করা হয়।

ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ

ভাইরাসের আক্রমণে মরিচের পাতার কোঁকড়ানোর কারণ হরে পারে, অন্য উপসর্গ গুলোর মধ্যে যেমন হলুদ স্পট, পাতার উপর রিং বা ফোটা বা পাতা ও গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। কীটপতঙ্গ যেমন বাহক পোকা (সাদা মাছি-Bemisia tabaci), থ্রিপস ও পোষক উদ্ভিদের মাধ্যমে ভাইরাস এই দীর্ঘস্থায়ী ও দুরারোগ্য রোগগুলো বহন করে এবং প্রসারিত করে। সাধারণত এই রোগ আক্রান্ত পাতা উপরের দিকে উল্টানো হয়ে যায়।

যদি আপনি একটি ভাইরাস সন্দেহ করেন, অবিলম্বে সংক্রমনরত গাছটি অন্য গাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখুন বা অপসারন করুন।

পরিবেশীয় তারতম্য

কথাটি একটু অন্যরকম শোনালেও অনেকেই জানেন না যে প্রায়ই পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার কারণ পরিবেশগত সমস্যা হতে পারে। গ্রীষ্মের সময়ে খুব গরমে কম আর্দ্রতার কারনে পাতা কুঁকড়ে যায়।গরম বাতাস ও খুবই কম আর্দ্রতা থাকলে গাছের পাতা আত্মরক্ষার জন্য কাপ আকৃতি ধারণ করে। লাগাতার এমন পরিবেশে থাকলে কোকড়ানো পাতার কোনা পোড়া শুরু হয়।

করণীয়

শুধুমাত্র এই কারণে পাতা কুঁকড়ে গেলে অতিরিক্ত পানি স্প্রে করতে হবে গাছকে একটু ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে। মালচিং করতে হবে।

সতর্কতা

ক) কিছু হলেই কীটনাশক প্রয়োগ করার অভ্যাস টা ছাড়তে হবে। অস্থির হওয়া যাবে না। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ছাঁই দিয়ে দেখবেন এবং কিছুদিন পর পর ছাঁই ছিঁটানো এমনিতেই ভালো বিশেষ করে সবজী গাছে যেমন টমেটো, মরিচ, বেগুন, লাউ, আলু ইত্যাদি।

খ) স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ তুলে খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।

গ) কম পরিমাণে পাতা কুঁকড়ে গেলে গাছের পাতা উপড়ে ফেলতে হবে।

আরও পড়ুনঃ আমের মুকুল ঝরা প্রতিরোধের উপায়

Suriya Jaman Barsha
Follow Me