Skip to content

লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল – পর্ব ২

লাউ আমাদের দেশে বহুল জনপ্রিয় একটি সবজি। গুণে-মানে অতুলনীয় এই সবজি চাষে কম ধকল পোহাতে হয় না চাষীদের। রোগ-বালাই নিয়ে গত পর্বের পর এই পর্বে থাকছে আরও কিছু মারাত্মক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়।

আগের পর্বটি পড়ুনঃ লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল – পর্ব ১

লাউ এর মাছি পোকা রোগ

উদ্ভিদ একধরণের পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয় যা দেখতে সাধারণ মাছির মতো, স্বচ্ছ পাখা, হলুদ পা, ত্রিকোণাকার পেট ও বাদামী ঘাড় মাঝে লম্বা হলুদ দাগ বিশিষ্ট। এটি খুবই ক্ষতিকর পোকা যা ফসলের ১০০ ভাগ ক্ষতি করে থাকে সময়মত দমন না করলে।

লক্ষণ

১। স্ত্রী পোকা কচি ফলের নিচের দিকে অভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পারে

২। আক্রান্ত ফল থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে যা শুকিয়ে বাদামী বর্ণ ধারণ করে

৩। ডিম থেকে কীড়া বের হয় তা পরে ফলের শাস খেতে শুরু করে যার কারণে ফল বিকৃত হয়, পচে যায় ও হলুদ বর্ণ ধারণ কোড়ে ঝ্রে পরে যায়।

৪। বিকৃত ফল না বাড়ার কারণে ফলন কমে যায়।

Fruit fly of bottle gourd
লাউয়ের মাছি পোকা

 প্রতিকার

ভালোভাবে জমি চাষ করতে হবে।পোকা আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কচি ফল গুলোকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সেক্স ফেরোমন এর মাধ্যমে মাছি পোকা দমন বেশ কার্যকরী।

আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে  প্রতি লিটার পানির সাথে আলফা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের যেমন সিকো আলফা ২.৫ ইসি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লাউ এর জাব পোকা রোগ

লাউ এর জাব পোকা ছোট দেহ বিশিষ্ট খুব নরম সাদা, সবুজাভ বর্ণের হয়ে থাকে। চারা যখন পূর্ণ বয়স্ক হয় ও ফল এর বাড়ন্ত পর্যায়ে জাব পোকা আক্রমণ করে। এই পোকা সাধারণত ফুল, ফল এবং পাতায় আক্রমণ করে থাকে।

লক্ষণ

১। পাতা, ফুল, ফল এর রস চুষে খেয়ে ফেলে, তাই গাছ দূর্বল হয়ে পরে।

২। জাব পোকা অনেক সময় হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ ছড়ায়।

Aphid on bottle gourd
লাউয়ের এফিড

প্রতিকার

  • গাছের আক্রান্ত অংশ অপসারণ করতে হবে। প্রথম দিকে শুকনো ছাই ও পানি স্প্রে করতে হবে। ক্ষেত পরিস্কার রাখতে হবে।নিয়মিত ফসল পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আক্রমণের মাত্রা ও পোকা দমনে হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। (হলুদ ফাঁদঃ ফসলের ক্ষেতে আঠা মিশ্রিত হলুদ কাপড় টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়, পোকা সেখানে উড়ে এসে পড়ে এবং আঠাতে আঁটকে যায়।)
  • ১০ গ্রাম তামাকের গুড়া, ৫ গ্রাম সাবানের গুড়া ও নিমের পাতার নির্যাস প্রতি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
  • যদি কোনো গাছে ৫০ টির বেশি পোকা দেখা দেয় তাহলে প্রতি লিটার পানিতে এডমেয়ার ২০ এসএল ০.৫ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লাউ এর নেতিয়ে পড়া রোগ

লাউ এর নেতিয়ে পড়া রোগ ছত্রাক অথবা ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে হয়ে থাকে। ফসলের বাড়ন্ত পর্যায়ে কান্ড, পাতা ও শিকড়ে আক্রমণ করে থাকে।

লক্ষণ

১। এ রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত গাছ ঝিমিয়ে নিচের দিকে ঢলে পড়ে।

২। প্রথমে কচি পাতা ঢলে পড়ে এবং পরবর্তীতে নিচের দিকে বয়স্ক পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়।

৩। যদি গাছ ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রমণ হয় তাহলে নেতিয়ে পড়া গাছের ডাল কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সাদা কষের মতো তরল পদার্থ বের হতে দেখা যায়।

৪। যদি ছত্রাক দ্বারা গাছ আক্রান্ত হয় তাহলে প্রথমে গাছের অংশ বিশেষ এবং পরবর্তীতে গাছের কান্ডের ভেতরের অংশ বাদামি হয়ে হতে দেখা যায়।

lauis neglected disease of bottle gourd
লাউয়ের নেতিয়ে পড়া রোগ

প্রতিকার

  • বীজ শোধন করে নিতে হবে। চারা গজানোর পর অতিরিক্ত সেচ দেয়া যাবে না। একই জমিতে বার বার লাউ চাষ করা যাবে না।
  • আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে পুড়ে অথবা ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
  • যদি গাছ ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত হয় তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে ২ কেজি পরিমাণ করে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে।
  • আবার যদি গাছ ছত্রাক আক্রান্ত হয় তাহলে প্রতি ১০ লিটার পানিতে কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় (কুপ্রাভিট ৪০ গ্রাম) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ।

লাউ এর থ্রিপস পোকা রোগ

এই রোগ থ্রিপস পোকার আক্রমণে হয়ে থাকে। ফুল এবং কচি পাতায় আক্রমণ বেশি করে। ফলের ফলন কমে যায়।

লক্ষণ

১। পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস খেয়ে শুষে নেয়।

২। গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে।

৩। ফলের উপরে দাগ দেখা যায়।

Thrips of bottle gourd

প্রতিকার

সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। এডমেয়ার ২০ এসএল ০.৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। যদি আক্রমণ বেশি হয় তাহলে প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম তামাকের গুড়া, সাবানের গুড়া ৫ গ্রাম ও নিমের পাতার নির্যাস মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

লাউ এর পাতা পোড়া রোগ

এই রোগ ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। ফসলের বাড়ন্ত  পর্যায়ে আক্রমণ করে থাকে। গাছের পাতায় সংক্রমণ ঘটায়।

লক্ষণ

১। আক্রান্ত পাতায় হলদে বাদামী রঙ এর ছোট ছোট চোখের মতো দাগ দেখা যায়।

২। ছোট ছোট দাগ গুলো একত্রিত হয়ে বড় দাগ এ পরিণত হয়ে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।

৩। পরবর্তীতে পাতা পুড়ে গেছে এমন দেখা যায়।

bottle gourd leaf burn diseases
লাউয়ের পাতা পোড়া রোগ

প্রতিকার

আক্রান্ত গাছ ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। রোগের আক্রমণ যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে টেবুকোনাজল+ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাক নাশক (যেমন ৫ গ্রাম নাটিভো) পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লাউ এর লিফ কার্ল রোগ

লিফ কার্ল একটি ভাইরাসজনিত রোগ।সাদা মাছি দ্বারা ভাইরাস গাছের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণ

১। আক্রান্ত গাছ খর্ব আকৃতি এর হয়।

২। পাতা কুঁচকে যায়, পাতায় ঢেউয়ের মতো ভাজ এর সৃষ্টি হয়।

৩। বয়স্ক পাতা পুরু ও মচমচে হয়ে যায়।

৪। গাছ থেকে অতিরিক্ত শাখা প্রশাখা বের হয়।

৫। ফুল ও ফল ধারণের ক্ষমতা কমে যায়।

প্রতিকার

রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন উন্নত জাত ব্যবহার করতে হবে। আগাছা ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে। সাদা মাছি ভাইরাস এর বাহক একে দমন করার জন্য প্রতি লিটার পানির সাথে ডায়ামেথেয়ট, এডমেয়ার, টীডো এর মধ্যে যেকোনো একটি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ লাউ উৎপাদন কৌশল

1 thought on “লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল – পর্ব ২”

    Advertisements
  1. আমার লাউ গাছের পুরুষ ফুল ফোটার আগে বিতরে কিরা হয়ে যাচ্ছে। কি করনীয়

Leave a Reply