ফুলকপি একটি শীতকালীন দারুন সবজি। অর্থনৈতিকভাবে ফুলকপির চাহিদা এবং উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সবজি। কোনো কোনো দেশে প্রধান খাদ্য হিসেবে ফুলকপি বেশ জনপ্রিয়। সবুজ পাতা দিয়ে ঘিরে থাকা সাদা ভক্ষণযোগ্য অংশটি দেখতে ফুলের মতো হওয়ায় এটির নামকরণ ফুলকপি করা হয়েছে।
ইতিহাস
এই সবজি প্রথম ইউরোপে বিস্তার লাভ করে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে। বর্তমানে ফুলকপি ভারতে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে। ভারত ছাড়াও চীন, ফ্রান্স, ইতালি, ইউকে, ইউএসএ, স্পেন, পোল্যান্ড, জার্মানী, পাকিস্তান এসব অঞ্চলেও এর ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। ১৮৮২ সালে ভারতে ফুলকপি প্রথম বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশেও ফুলকপির চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, টাংগাইল, কুষ্টিয়ায় প্রধানত চাষ করা হয়।
ফুলকপির ব্যবহার
এটি সব্জি কিংবা সালাদেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া ফুলকপির পিজ্জা, পাকোড়া, ব্রেডস্টিক্স ইত্যাদি তৈরী করা হয়। সাধারণত শুধুমাত্র সাদা ফুলটাই খাওয়া হয় আর চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু সবুজ পাতা স্যুপ হিসেবে খাওয়া হয় বা ফেলে দেয়া হয়।
ফুলকপির স্বাস্থ্য উপকারিতা
১) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
২) ফুলকপিতে রয়েছে সালফোরাকেন যা হৃদপিণ্ড প্রোটেক্ট করতে সাহায্য করে।
৩) এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার জন্য পরিপাকতন্ত্রে ইম্প্রুভ করে।
৪) এটি ভিটামিন -এ, বি,সি এর উৎস যা ফিটাস বিকশিত হতে সাহায্য করে।
৫) বিটা ক্যারোটিন, সিনামিক এসিড রয়েছে যা এন্টি অক্সিডেশনে সাহায্য করে।
৬) এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৭) স্কিন প্রটেক্ট করে।
৮) ইম্যুউনিটি সিস্টেমকে ইম্প্রুভ করে।
ফুলকপির জাত
বাংলাদেশে এর প্রধান কিছু জাত হল পৌষালী, কার্তিকা, অগ্রহায়ণী, স্নো বল, দিপালী, স্নো হোয়াইট, হোয়াইট সর্ট, বারি ফুলকপি -১ (রুপা) ইত্যাদি।
উপযুক্ত সময়
সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারী মাস ফুলকপি চাষের উপযুক্ত সময়।
চাষ পদ্ধতি
ফুলকপি একটি শীতকালীন সুস্বাদু সবজি। এটি বার্ষিক উদ্ভিদ যা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।এটি অন্যান্য সবজির তুলনায় রোপণ করা একটু কষ্টসাধ্য; কারণ এটি তাপ বা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিমোক্ত উপায়ে ফুলকপি রোপণ করা সম্ভব-
১) প্রথমে ছিদ্রযুক্ত সুনিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন কন্টেইনারে পটিং মিক্স নিয়ে তাতেবীজ বপন করতে হবে।
২) এরপর আবার কিছু পটিং মিক্স দিয়ে পানি দিতে হবে।
৩) পুরো রোদের মধ্যে রাখতে হবে।
৪) প্রায় ৩-৫ দিনের মধ্যে বীজ জার্মিনেট শুরু হবে।
৫) প্রায় ১৪ দিনের মধ্যে যখন ৪/৫ টি পাতা হবে তখন ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়।
৬) ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর জন্য একটি প্লাস্টিকের গামলা বা বড় সড় কন্টেইনারে ৫০% মাটি ও ৫০% (গোবর+কোকোপিট) নিয়ে কাজ করা হয়।
যত্ন
১) ফুলকপির পাতা নির্বিঘ্নে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা জরুরী। যদি কোনো বাধা আসে তাহলে ফুল বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২) ফুলকপির জন্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ আদ্র মাটি প্রয়োজন তাই সপ্তাহে দু বার/তিনবার পানি দেয়া প্রয়োজন।
৩) যখন ফুলকপিটির ফুল হিসেবে বিকশিত হওয়া শুরু করে তা সম্পূর্ণরূপে গঠন করার জন্য সময় লাগবে।৭৫-৮৫ দিন সময় লাগবে।
৪) যখন ফুলের ব্যাস ২-৩ ইঞ্চি হয় তখন রাবার ব্যান্ড বা টেপ দিয়ে মাথার বাইরে পাতাগুলো একত্রিত করে একটি ঝুটি বানাতে হবে। একে ব্লানচিং বলে যা এটিকে সূর্য থেকে মাথা রক্ষা করে এবং ফুলকপির রঙ সাদা হয়ে সহায়তা করে।
৫) ফুলকপির ব্যাস ৬/৮ ইঞ্চি হলে, ছুরির সাহায্যে কেটে সংগ্রহ করতে হবে।
কীটনাশক প্রয়োগ
কীট
-এফিডঃ ম্যালাথিওন ৫০ ইসি@ ২ মিলি/ লি. স্প্রে করতে হবে।
-ক্যাটার পিলারঃ ম্যালাথিওন ৫০ ইসি @ ২ মিলি/লি. স্প্রে করতে হবে।
রোগ
-ড্যাম্পিং অফঃক্যাপটান @ ৪গ্রাম/ ১লি. পানি।
-লিফ স্পটঃ ফলিয়ার স্প্রে @১.৫-২ গ্রাম/ ১ লি. পানি।
- খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি - May 4, 2020
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় বাগানের কার্যকারিতা - April 22, 2020
- বাসা-বাড়ি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় - April 12, 2020