বাজেটের মধ্যে বাগান করার টিপস
সুসংবাদটি হল আপনার বাগানটি স্বল্প ব্যয়ে আপনার বাজেটের মধ্যেই শুরু করতে পারেন। বাগান করার সময় যেসব বিষয়ে অর্থব্যয় কমাতে হবে তার তালিকা এখানে রয়েছে – বাগানীদের জন্যে এগুলি করা সহজ।
বীজ থেকে শুরু করুন
প্রত্যেকেই জানেন যে বীজ থেকে শাকসবজী, বর্ষজীবি এবং বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ চাষ করা সস্তা। তবে প্রথমবার শুরু করতে সমস্ত বীজ কেনা কিঞ্চিত খরচসাপেক্ষ। তাই অল্প কিছু বীজ দিয়েই শুরু করুন এবং সময়ের সাথে সাথে বীজের সংগ্রহ বাড়াবেন, সাথে বাড়াবেন চাষের পরিধিও।
আরও পড়ুনঃ ক্যাকটাসকে পচন থেকে রক্ষা করতে করণীয়
বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলুন এবং দেখুন কারও কাছে বীজ আছে কি না। আপনার সংগ্রহে থাকা বাড়তি বীজ এর সাথে তার সংগ্রহে থাকা বীজ বিনিময় করে চাষ করতে পারেন। অথবা আপনারা একসাথে নিকটস্থ নার্সারীতে বীজ কিনতে যেতে পারেন এবং যা কিনবেন সেগুলো ভাগাভাগি করে বীজ কেনার ব্যয় ভাগ করে নিতে পারেন। বীজের প্যাকেটের সব বীজ আপনার নাও লাগতে পারে, তখন সেই বীজ শেয়ার করে অন্যের সংগ্রহে থাকা বীজ দিয়েই খরচ কমিয়ে ফেলা যেতে পারে।
শুরুর দিকে কখনোই দামি বীজ দিয়ে বাগান করতে যাবেন না।
পুরনো সরঞ্জাম কিনুন
বাজেটের মধ্যে বাগান শুরু করতে, অন্যের পুরনো সরঞ্জামাদি দিয়েই শুরু করতে পারেন। অনেক সময় অনেক প্রাক্তন বাগানিরা তাদের বাগানে ব্যবহার করা পুরনো সরঞ্জামাদি খুব অল্পদামে বিক্রি করে দেয়। অনেক সময় বাসা পাল্টানোর আগে বাগানীরা তাদের সরঞ্জাম বিক্রি করে দিতে উদ্যত হয়। এরকম বাগানিদের পুরনো সরঞ্জাম কিনে শুরু করে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে এইসব পুরনো সরঞ্জামের প্রতি যত্নবান হতে হবে। স্টিলের সরঞ্জামগুলো অনেকাংশে মরিচা ধরে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বাগান করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও এর ব্যবহার
বাসা পাল্টানোর সময় অনেকে কখনও কখনও বিনামূল্যেও এগুলো দিয় দেয়। পট, টব, শাবল, নিড়ানি, বেড়া, বীজ, গ্লাভস, বেলচা, ট্রোয়েলসহ সবরকম পুরনো সরঞ্জামই পাওয়া সম্ভব।
![স্বল্প খরচে ছাদবাগান করার ৭টি নির্দেশিকা 2 বাগান সরঞ্জাম](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2019/11/Gardening-Equipment-Market2-1280x720-1-scaled.jpg)
স্বস্তা এমনকি খরচ ছাড়াই বাগানের সরঞ্জাম এবং সরবরাহগুলি খুঁজে পাওয়ার অন্যান্য উপায় রয়েছে। এগুলি সন্ধানের জন্য আপনাকে কিছুটা এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।
আপনার বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশী যারা বাগান করে নিয়মিত, দেখুন যে তাদের কাছে কী কী সরঞ্জাম রয়েছে যা আপনি ধার হিসেবে নিতে পারেন। এমনকি তাদের কাছে এমন জিনিস থাকতে পারে যা তারা কিছুদিনের ব্যবহারের জন্যে দিতে পারে।
REDUCE, REUSE, RECYCLE
আপনার কাছে ইতিমধ্যে থাকা দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসগুলি পুণরায় ব্যবহার করে সহজেই বাগান শুরু করতে পারেন।
![স্বল্প খরচে ছাদবাগান করার ৭টি নির্দেশিকা 3 ফেলে দেওয়া বোতলে গাছ লাগান](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2019/11/Water-bottle-herbs.jpg)
পুরাতন ড্রাম বা বালতিটিকে একটি কম্পোস্ট তৈরির ঝুড়ি বানাতে পারেন,প্লাস্টিকের খাবারের পাত্র কিংবা ওয়ান টাইম কফি গ্লাস ব্যবহার করে বীজ থেকে চারা তৈরি করতে পারেন, এছাড়াও কাপ আইসক্রমের প্লাস্টিক কৌটাও ব্যবহার করা যায়, আপনার বাগানের গাছগুলিতে সীমানা প্রাচীর দিতে পুরনো ইট বা কাঠ ব্যবহার করতে পারেন।
বর্ষজীবি উদ্ভিদ চাষে বিরত থাকুন
গ্রীষ্মকালে টবের জন্য ব্যয়বহুল বর্ষজীবি উদ্ভিদ কেনার পরিবর্তে, নানারকম ঘরোয়া উদ্ভিদ এর চারা লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। স্পাইডার প্ল্যান্ট, পোথোস এবং সাকুলেন্ট সাধারণ কিছু ঘরোয়া উদ্ভিদ যা আপনার বাগানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়াও এরা খুব একটা ব্যয়বহুলও নয়। ঘরোয়া উদ্ভিদ সম্বন্ধে জানতে পড়তে পারেন।
বহু সৌখিন বাগানীরা সাশ্রয়ী বাগান করতে বর্ষজীবি উদ্ভিদ রোপন করেন না। এর পরিবর্তে, গ্রীষ্মকালে কিছু ঘরোয়া উদ্ভিদ বাইরে আপনার ছাদবাগানে নিয়ে যান।
![স্বল্প খরচে ছাদবাগান করার ৭টি নির্দেশিকা 4 স্পাইডার প্ল্যান্ট](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2019/07/Greeniculture-spider.jpg)
ঘরোয়া উদ্ভিদগুলি বাড়ির বাইরে থাকতে পছন্দ করে এবং তারা গ্রীষ্মকালে বাগানের চেহারাই পালটে দিতে পারে। তবে একেবারেই ঘরোয়া উদ্ভিদগুলিকে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসবেন না। এতে হঠাত প্রচন্ড রোডের তাপে অভিযোজন করতে না পেরে মারা যেতে পারে। এর চেয়ে আস্তে আস্তে সূর্যের আলোর সাথে অভিযোজিত করে নিতে হবে। প্রথম দিকে, এদের কয়েকদিন বাইরে শেড বানিয়ে রেখে দিন, প্রতিদিন একটু একটু করে আলোতে রাখার পরিধি বাড়াবেন। এভাবে একসময় এরা সারাদিন আলোতে অভিযোজন করে ফেলবে।
কলম-কাটিং সংগ্রহ করুন
আপনি হয়ত ভাবছেন, শাক-সবজির মতো সবকিছুই বীজ থেকে শুরু করবেন, তবে বীজ থেকে আসলে ভাল জাতের আম বা পেয়ারা কিংবা কাঠগোলাপ পাওয়া কি সম্ভব? সব গাছ বা উদ্ভিদ বীজ থেকে বেড়ে উঠে না, বা বীজ থেকে মাতৃউদ্ভিদের ন্যায় প্রজন্ম পাওয়া সম্ভব না। আবার কিছু কিছু উদ্ভিদ অযৌন বংশবিস্তার করে। সুসংবাদটি হল কার্যত সমস্ত বহুবর্ষজীবী, বেশিরভাগ গুল্ম এবং দ্রাক্ষালতা এবং অনেকগুলি গাছ কলম-কাটিং দ্বারা সহজেই বংশবিস্তার করানো যায়।
![স্বল্প খরচে ছাদবাগান করার ৭টি নির্দেশিকা 5 কলম করুন বাড়িতেই](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2019/11/grafting-১.jpg)
কোনো প্রতিবেশী বা পরিচিত বাগানীর সাথে ভাল সম্পর্ক রাখুন কাঙ্ক্ষিত উদ্ভিদের কলম-কাটিং এর জন্যে, এটি থেকে কয়েকটি পেন্সিল-আকারের ডাল কেটে কলম করে নিতে পারেন, সেগুলি আর্দ্র পারলাইট পূর্ণ পাত্রে রাখুন এবং কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে আপনার শিকড় এবং পাতাগুলি বের হওয়া শুরু করবে। এই কলম-কাটিং একদম বিনামূল্যেই পাবেন পরিচিতিদের থেকে।
নিজেই মাটি তৈরি করুন
কম্পোস্ট এবং সমস্ত প্রাকৃতিক নার্সারী থেকে কিনে ব্যবহার করা অসাধারণ। আপনাকে কোনো ঝক্কি-ঝামেলায় পোহাতে হবে না। তবে আপনি যদি চান সেগুলো নিজেই ঘরে বানাতে পারেন। সেই কম্পোস্টে আসলে কী থাকে, তা নিয়ে চিন্তা করেন – বেশিরভাগ পশু ও রান্নাঘরের উপজাতীয় পণ্য (যেমন হাড়ের গুড়া, শাক-সবজির উচ্ছিষ্টাংশ, খোসা, খাদ্যের ফেলে দেয়া অংশ ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন জৈব উপাদানসমূহ (যেমন কাঠের গুড়া কোকো পাউডার, নারিকেলের ছোবড়া ইত্যাদি) – এগুলোর জন্য অর্থ খরচ করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব না। যদি আপনার নিজের মুরগীর খামার(শহরে ফ্ল্যাট বাড়িতে নিজের মুরগীর খামার থাকা অসম্ভব) বা অন্য পশুপাখির খামার সারের উৎস হিসেবে না থাকে তবে আপনি অবশ্যই আশাপাশের স্থানীয় পোল্ট্রি খামার বা মাংসের দোকান থেকে এগুলো অল্প দামে কিনে নিতে পারেন। আর সাথে আপনার নিজের শাক-সবজির কুটা, খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ তো আছেই।
![স্বল্প খরচে ছাদবাগান করার ৭টি নির্দেশিকা 6 রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে কম্পোস্ট করুন](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2019/11/wooden-box.jpg)
যে কোনও ধরণের জৈব পদার্থ দিয়ে সাধারণ পদ্ধতিতেই সার তৈরি করতে পারেন। এগুলোকে একত্রে করে একটি গাদা করুন এবং কয়েক মাস ধরে বদ্ধ অবস্থায় রেখে এটিকে কালো কম্পোস্টে রূপান্তরিত করুন। বাড়তি ভ্যালু যুক্ত করতে ডিমের খোসাগুলো রেখে দিন এবং সেগুলিকে কম্পোস্টে গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিন (ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস যুক্ত হবে) এবং সমুদ্রে বেড়াতে গেলে কিছু সমুদ্র শৈবাল জমিয়ে চাষ করতে পারেন। এই শৈবাল গুলো সারের মধ্যে বাড়তি মাইক্রো নিউট্রেন্ট সরবরাহ করে। অবশ্যই শৈবালগুলো সারে মেশানোর পূর্বে সেটিকে মিঠা পানিতে ভিজিয়ে নিন যেন সামুদ্রিক লবণ মিশ্রিত না থাকে।
স্বল্প পরিসর থেকে শুরু করুন
যখন প্রথম বাগান করতে শুরু করবেন তখন সহজেই হাল ছেড়ে দিবেন না। কিংবা সামান্য প্রাপ্তিতেই বেশ আনন্দিত হয়ে যাবেন না। ক্ষুদ্র থেকে শুরু করুন এবং আপনার পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটাতে যা যা দরকার, তার একটি তালিকা তৈরি করে রোপন করতে থাকুন।
টমেটো, শসা এবং স্কোয়াশ সবই ভার্টিকাল বা উলম্ব বাগানের মাধ্যমে চাষ করা যেতে পারে। আপনার বাগানে নির্দিষ্ট কোনো সবজি বা ফলের প্রাচুর্য বেশি থাকতেও পারে কিংবা আপনার পরিবার আপনার চাষ করা সবজি বা ফল অল্প পরিমাণে হওয়ায় পরিবারের সবাই ভাগ করে নাও খেতে পারেন। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। অন্তত নিজের চাষ করা সবজি খেতে পারেন, এটাই কম কিসের?
পরিবারের নিরাপদ খাবারের চাহিদা নিজের বাগান থেকেই মিটান। জৈব সার ও বায়ো ফাঞ্জিসাইড ব্যবহার করে খাদ্যে কেমিক্যালের ব্যবহার হ্রাস করুন।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020