গাজর আমাদের দেশে একটি অতিপরিচিত সবজি। শীতকালীন সবজি হিসেবে গাজর যেমন পরিচিত তেমন জনপ্রিয়ও বটে। শুধুমাত্র শীতকালীন সবজি বললে ভুল হবে গাজর এমন একটি সবজি যেটা প্রায় সারা বছর জুড়েই পাওয়া যায়। আকর্ষনীয় রঙ ও স্বাদের জন্য ছোট বড় সবার কাছেই এই সবজিটি জনপ্রিয়। গাজর একটি মূল জাতীয় সবজি। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি এবং অনেকেই এই সবজি পছন্দ করে।
ইতিহাস
গাজরের আদি নিবাস দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপ । পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক গাজরই চীন দেশে উৎপাদিত হয়। আমাদের দেশে প্রায় বেশিরভাগ জায়গায়ই গাজর উৎপাদন হয়।
গাজরের উপকারিতা
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি
গাজরে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন পরবর্তিতে ভিটামিন এ’তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, চোখের কোষকলা তৈরীতে সাহায্য করে। রাতকানা, গ্লুকোমা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
নিয়মিত গাজর খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলোন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। কারণ গাজরে আছে পলি-এসিটিলিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের কোষ তৈরীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ করে
গাজরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিএসিটিলিন হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। গাজরের উচ্চমান সম্পন্ন ক্যারোটিনয়েডস হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত গ্রহণে গাজরের বিটা ও আলফা ক্যারোটিন রক্তনালী সংকোচন, অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমায়।
বয়স ধরে রাখে
নিয়মিত খাবার তালিকায় গাজর রাখলে শরীরের বয়সজনিত ক্ষতিগুলো কম হয়। বয়সের কারণে কোষের ক্ষতি রোধ করতে গাজরের ভূমিকা অনেক। মাতৃকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গাজরে উপস্থিত পলিএষ্টেরন গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে।
ইনফেকশন কমায়
কোথাও কেটে ছিঁড়ে গেলে অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে যায়। তাই ইনফেকশন এড়াতে কাঁটা ছেঁড়া জায়গায় গাজর ব্লেন্ড করে লাগিয়ে নিন।
ওজন কমায়
গাজরের যেহেতু প্রচুর পুষ্টি গুণ আছে এবং খেতেও মজা তাই ওজন কমাতে গাজরের জুড়ি নেই। সপ্তাহে কমপক্ষে ছয়টি গাজর খেলে তা স্ট্রোকের ঝুকিঁ কমায়।দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় গাজরের ভূমিকা আছে।
আরও পড়ুনঃ শালগমের ১০ টি উপকারিতা ও চাষপদ্ধতি
ত্বকের যত্নে গাজর
ত্বক ও চুলের যত্নে গাজরের উপযোগিতা রয়েছে। গাজর ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘এ´, থায়ামিন ও রিবোফ্লোবিন সমৃদ্ধ সবজি। এর সবুজ পাতা ও পুষ্টিকর, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ। এছাড়া এতে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, কার্বহাইড্রেট বা শর্করা পাওয়া যায়।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করে
ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং পটাশিয়াম না থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। প্রতিদিন গাজরের জুস খেলে ত্বকে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। তাই ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে নিয়মিত গাজরের জুস খান।
ত্বককে বলিরেখা থেকে রক্ষা করে
একটু বয়স হলেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। এছাড়াও ত্বক অনুজ্জ্বল ও দাগ হয়ে যায়। তাছাড়া সূর্যের আলোতেও ত্বক অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নিয়মিত গাজর খেলে বাহ্যিক ক্ষতি থেকে ত্বক রক্ষা পায় এবং ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। গাজর মুখের বলিরেখা, দাগ ছোপ ও পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করে।
ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখে
গাজর খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভেতর থেকে ভালো থাকে। এছাড়াও গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যেগুলো ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ব্রণ উঠলে সে জায়গাটায় নিয়মিত গাজরের রস লাগালে দাগ দূর হয়ে যায় বেশ তাড়াতাড়ি।
ত্বক উজ্জ্বল করে
গাজরের ত্বক উজ্জ্বল করার ক্ষমতা আছে। গাজরের ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন ত্বককে উজ্জ্বল করে। গাজর বেটে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
চুলের যত্নে গাজর
চুল পড়া রোধে
চুল পড়া বন্ধ করতে গাজরে উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেল অতি কার্যকর। গাজর চুল পড়া কমায়, চুলকে শক্ত, মজবুত ও ঝলমলে করে। নিয়মিত গাজরের জুস খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়।
নতুন চুল গজাতে
গাজরের ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় পুষ্টি প্রদান করে। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি - May 4, 2020
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় বাগানের কার্যকারিতা - April 22, 2020
- বাসা-বাড়ি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় - April 12, 2020