Skip to content

১৭ টি অদ্ভুত ও বিস্ময়কর ফল

পৃথিবীতে খাদ্য ও পুষ্টির অন্যতম উৎস হচ্ছে ফল। স্বাদে, গন্ধে, বর্ণে, পুষ্টিমানে আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যময় ফলে ভরপুর। এক একটা ফল এক এক রকমের দেখতে, তেমনি এক এক ফল এক এক ধরণের রোগ প্রতিরোধক হিসেবে জনপ্রিয়। আমাদের পৃথিবীতে নানান ধরণের নানান রঙের ফল ছড়িয়ে আছে যার বিশেষ কোনো অঞ্চলে প্রসিদ্ধ। বিশেষত দোকানে এবং এমনকি নিয়মিত সুপার মার্কেটগুলিতে ক্রমাগত নানা রকমের বহিরাগত বা অচেনা কিছু ফল দেখা যায়। তবে অনেক ফল আছে যা আমরা চিনি না বা আমাদের কাছে পরিচিত নয়। এমন কয়েকটি ফল তুলে ধরা হলঃ

রক্ত গোটা (Rokto gota)

রক্ত গোটা ফলটি দেখা যায় পাহাড়ি অঞ্চলে। এর রস এতটাই লাল যেন মনে হয় এর রস হাতে নিলে রক্তে ভিজে গেছে। আসল রক্ত নয় কিন্তু। ফলের রস অনেক লাল তাই মুখে দিলে মনে হয় মুখে রক্ত লেগে আছে।

রক্তগোটা

রক্তগোটা

এই ফল সম্ভবত রাঙামাটির পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মে। তবে চট্টগ্রামের বাজারে ডায়াবেটিক ফল হিসেবে বিক্রি করা হয়।

কিওয়ানো তরমুজ (Kiwano melon)

পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরতম ফলগুলোর মধ্যে এই কিওয়ানো তরমুজ যা আফ্রিকান শসা নামেও পরিচিত। এটির উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Cucumis metuliferus। কিওয়ানো তরমুজের চারপাশে স্পাইকের মত থাকে। মূলত ফলটি খেতে শসার মতো তবে আরো বেশি পাকলে কলা ও লেবুর সমন্বয়ের মতো এর স্বাদ।

Kiwano

কিওয়ানো তরমুজ

এই ফল আফ্রিকা ছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া, চিলি, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে চাষাবাদ করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই রয়েছে। লোহিত রক্ত কণিকা উতপাদন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে, হৃদপিণ্ড, এমনকি ত্বকের জন্য এই ফলটি কার্যকর।

কিউকামেলন (Cucamelon)

কিউকামেলন যা ছোট তরমুজও বলা চলে। এগুলো দেখতে ভীষণ ছোট ছোট আকারের একদম আঙুরের মতো যা অতি আকর্ষণীয়। কিউকামেলন মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায় প্রসিদ্ধ। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Melothria scabra। দেখতে তরমুজের মতো হলেও খেতে শসার মত সঙ্গে লেবুর স্বাদযুক্ত।

Cucamelon

কিউকামেলন

চেরিময়া (Cherimoya)

চেরিময়া নামে ফলটি আমেরিকান। তবে বাংলাদেশের আতা ফলের মতোই দেখতে এ ফল। আতা বাংলাদেশ ও ভারতে এটি বসতবাড়ির আঙিনায় এবং বনে-জঙ্গলে জন্মে থাকে। তবে থাইল্যান্ড, কলোম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, চিলি, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Annona cherimola

Cherimoya

চেরিময়া

চেরিময়া দেখতে আতার মতো হলেও এর ভিতরটা সাদা এবং খেতেও কাস্টার্ডের মতো। কলা, পিচ ফল, স্ট্রবেরির সম্ন্বয়ের মতো এর স্বাদ। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান রয়েছে। চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করতেও এটি কার্যকর।

অ্যাটিময়া (Atemoya)

অ্যাটিময়া ফলটি একটি হাইব্রিড ধরনের ফল। কাস্টার্ড আপেল ও চেরিময়ার ক্রসিং এর ফলে অ্যাটিময়া উৎপন্ন হয়েছে। এটি আমেরিকার স্থানীয় ফল হলেও তাইওয়ান, প্যালেস্টাইন, লেবাননে অনেক জনপ্রিয়।

Atemoya

অ্যাটিময়া

এটি খেতে রসালো ও মসৃণ, সামান্য মিষ্টি ও সামান্য টক স্বাদযুক্ত। আনারস, নারকেল ও ভ্যানিলার সমন্বয়ে মতো অ্যাটিময়ার স্বাদ।

কালো সবেদা (Black Sapota)

কালো সবেদা মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয়। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Dispyros nigra। এই ফলটির বাইরের দিক অলিভ রঙের বা গাঢ় হলুদাভ সবুজ রঙের হয়ে থাকে৷

Black Sapota

কালো সবেদা

এর ভিতরের অংশ চকলেটের মতো, অনেক নরম, মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। তাই অনেকে কালো সবেদাকে চকলেট পুডিং ফল বলে থাকে।

বুদ্ধাস হ্যান্ড (Buddhas hand)

বুদ্ধাস হ্যান্ড দেখতে ভয়ংকর হ্যালোয়িন প্রোপের মতো। এটি চায়না ও ভারতের চাষাবাদ করা হয়। ফলটির উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Citrus medica

Buddhas Hand

বুদ্ধস হ্যান্ড

বুদ্ধাস হ্যান্ড হচ্ছে কয়েকটি হলুদ আংগুলের গুচ্ছ এবং ভিতরে সাদা অংশ যা খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। একে খাদ্য ছাড়াও পারফিউম এবং ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

ডুরিয়ান (Durian)

ডুরিয়ান পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক ফল। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গন্ধযুক্ত ফল হিসেবে পরিচিত। শোনা যায় অস্ট্রেলিয়ার একটি ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ ক্যাম্পাসে একটি নষ্ট ডুরিয়ানের দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পরেছিল। এ থেকে বুঝা যায় ফলটির দূর্গন্ধ কি রকম ভয়ংকর।

Durian

ডুরিয়ান

আবার এর দাম যে কেউ শুনলে আরো অবাক হতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশের কাঁঠালের মতো দেখতে এই ফলের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি তার কারণ এর স্বাস্থ্যজনিত উপকারীতা। গ্যাস্ট্রিক, হার্টের দূর্বলতা, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া, অনিদ্রা, যৌন দূর্বলতা, রক্ত চাপ, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি অনেক রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কার্যকরী।

টিসা ফল (Tiessa/ Yellow sapota/ Canistel)

টাকু আকৃতির, গোলাকার টিসা (Yellow sapota) এবং বড় আকৃতির সুন্দর ও লম্বা (Carnistel)। এর বাইরের অংশ ও ভিতরের অংশ উভয়ই হলুদাভ রঙের এবং বীজযুক্ত। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Pouteria campechiana

Tiessa Fruit

টিসা ফল

টিসা ফলে সব ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় এর ঔষধি গুণ অনেক বেশি। রক্ত চাপ কমাতে, ক্যান্সার এমনকি এইচআইভি প্রতিরোধ করে।

পার্সিমন (Persimon)

পার্সিমন দেখতে গাবের মতো। ফলটি পাকলে সবুজাভ হলুদ রঙ ধারণ করে। এর শাঁস অপূর্ব ও মজাদার মিষ্টি স্বাদযুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Diospyros kaki। কোষ্ঠকাঠিন্য ও অর্শ রোগ প্রতিরোধে এ ফল ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও হুপিং কাশি রোগের প্রতিরোধে এ ফল ব্যবহার করা হয়।

Persimon

পার্সিমন

টক আতা (Graviola/ Soursop)

টক আতা বা করোসল মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ফল। এর বাইরের অংশ সবুজ ও ভিতরে অংশ সাদা আর বীজযুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Annona muricata। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ ফল যা অনেক দেশে ঔষধি বৃক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় বলে এটি অ্যান্টি ক্যান্সার ফল হিসেবে পরিচিত। টক আতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই গাছের নির্যাস টিউমারের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।

Soursop

টক আতা

জাবটিকাবা (Jaboticaba)

জাবটিকাবা আঙুরের আকারের মত ছোট পাম জাতীয় গাছ। এই ফলগুলি সরাসরি গাছের কান্ডের সাথে লেগে থাকে। এটি ল্যাটিন আমেরিকার স্থানীয় ফল। জাবটিকাবার বৈজ্ঞানিক নাম Myrciaria Chawliflora। এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। এই ফল হাল্কা সুগন্ধিযুক্ত টকমিষ্টি প্রকৃতির ফল।

Jabuticaba

জাবটিকাবা

ননী ফল (Noni-fruits)

ননী ফল ইন্ডিয়ান মালবেরি নামেও পরিচিত। ননী ফলের রঙ পাকা অবস্থায় বাইরের অংশ হলুদাভ সাদা এবং বাইরে বাদামী গোলাকার দাগযুক্ত। এটি এক ধরণের আয়ুর্বেদিক গাছ যা পরিপাক সমস্যায়, ডায়াবেটিস, বাত, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কার্যকরী।

Noni fruit

ননী ফল

পাও পাও (Paw paw)

পাও পাও আমেরিকার জনপ্রিয় ফল। এই ফলের বাইরের অংশ হলুদ ও ভিতরের অংশ কমলা রঙের হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Asimina triloba। এই ফল মিষ্টি স্বাদযুক্ত এবং খেতে কলার মত। পাও পাও ফল জ্বর, বমি, মাথা ব্যাথার উপশমে ব্যবহৃত হয়।

pawpaw

পাও পাও

রাম্বুটান (Rambutan)

রাম্বুটান লিচু জাতীয় ফল। এর বাইরের অংশ লাল টুকটুকে আর কিছুটা নমনীয় কাটাযুক্ত; আর ভিতরে লিচুর মত মাংশল অংশযুক্ত যার মধ্যে একটা বীজ থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nephelium lappaceum

Rambutan

রাম্বুটান

রাম্বুটানে রয়েছে প্রোটিন, চর্বি, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, এমাইনো এসিড। শরীরের ক্ষত স্থান পূরণে, জ্ব্র কমানো, ডায়রিয়া, আমাশয় প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

শানতোল (Santol)

শানতোল পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Sandoricum indicum। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট যথেষ্ট পরিমাণে আছে। আরও আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি।

Santol

শানতল

শানতোলের পাতা ও বাকল ব্যাথা উপশমের জন্য ঔষধ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। শানতোল গাছের কান্ডের রস ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে বলে গবেষণায় প্রমাণিত।

রুটিফল (Breadfruit)

রুটিফল দেখতে সবুজ রঙের এবং ভিতরের দিক সাদা আঁশযুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus altilis। রুটিফল কলার মতোই পাকা ফল বা সবজি হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া নারিকেল, চিনি অথবা গুড়ের সহযোগে খাবার তৈরি করা যায়।

Bread fruit

রুটিফল

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এটিই একমাত্র ফল যা রুটির মতো সেঁকে খাওয়া হয় তাই একে রুটিফল বলা হয়। এটি উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন ফল যা উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, জিহবার প্রদাহ নিবারণে, বিভিন্ন চর্মরোগ চিকিৎসায় কার্যকরী।

Suriya Jaman Barsha
Follow Me

Leave a Reply