Skip to content

টমেটো চাষ ও এর পুষ্টিগুণ

টমেটো সোলানেসি পরিবারের  লাইকোপারসিকন গণের অন্তর্ভূক্ত একটি শীতকালীন সবজি। বাংলায় একে বিলেতী বেগুনও বলা হয়। এর ফল শাঁসালো, লাল ও বহুবীজ পূর্ণ।উদ্ভিদবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে টমেটো  ফল হলেও, সবজি হিসেবে সবজায়গায় পরিচিত।এছাড়াও  খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও এর ব্যবহার রয়েছে।  আকর্ষণীয় রঙ,  ভালো স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ  ব্যবহারযোগ্যতার কারণে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয়।

টমেটোর ইতিহাস

টমেটোকে আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় সবজি হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১৬ শতাব্দীতে আমেরিকা হতে পৃথিবীর অন্যান্য এলাকায় বিস্তার লাভ করে এবং খুব সম্ভবত প্রথমে ইউরোপে প্রবেশ করে স্পেনীয়দের হাত ধরে। স্পেনীয়রা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত উপনিবেশে এই ফলের বিস্তার ঘটায়।  একইসাথে ফিলিপিনসে এবং সেখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ক্রমেই গোটা এশিয়াতেই ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ১৫৪০ সাল থেকেই নিয়মিত চাষ করা হয়। টমেটো বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই চাষ করা হয়।  তবে ঢাকা,  কুমিল্লা,  সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফরিদপুর, যশোর, রাজশাহী ও দিনাজপুরে বেশি চাষ করা হয়। চেরি টমেটোর চাষ নিয়ে পড়তে পারেন।

টমেটো

টমেটো

টমেটোর ব্যবহার

মূলত সবজি কিংবা সালাদ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও টমেটো সস, কেচাপ, জুস, পিওরি, মারগারিটা ইত্যাদি প্রক্রিয়াকরণ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত। এছাড়া বিভিন্নরকম ফাস্ট ফুড, বার্গার, স্যান্ডউইচ, হটডগের সাথেও ব্যবহৃত হয়।

টমেটোর চাষ পদ্ধতি

ক) টমেটো ঘরোয়া পদ্ধতিতে বীজ থেকে রোপণ করা যায় খুবই সহজে।

খ) প্রথমে একটি বড়সড় ছিদ্রযুক্ত ড্রেইন্ড কন্টেইনার নিয়ে তাতে ছোট ছোট নুড়ি পাথর বা কাকর বিছিয়ে দিতে হবে পানি নিষ্কাশনের জন্য।

গ) এরপর পটিং মিক্স দ্বারা পাত্রটি ভরে দিতে হবে।

ঘ) একটা সুস্থ পাকা টমেটোর বীজ বের করে তা পটিং মিক্সের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজযেনো ওভারলেপিং না হয়।

ঙ) এরপর আরেকবার পটিং মিক্স দিয়ে বীজগুলো ঢেকে দিতে হবে। এরপর পানি দিতে হবে।

চ) হালকা ছায়াযুক্ত স্থানেপাত্রটি  রাখতে হবে।

ছ) প্রায় ৭ দিনের মধ্যে দেখা যাবে বীজের অঙ্কুরোদগম শুরু হয়ে গেছে।

জ) ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই চারা গাছ ৪-৫ ইঞ্চি হয়ে যাবে যা ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যায়।

ঝ) সাধারণত পেপার অথবা পটের মধ্যে একটা করে চারা স্থানান্তর করলে ভালো হয়।

টমেটো বাগান

টমেটো বাগান

টমেটো চাষের উপযুক্ত সময়

টমেটো বাংলাদেশের শীতকালীন সবজি। তাই শীতকালে প্রধানত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর  চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালের উচ্চ তাপমাত্রা, ভারী বৃষ্টিপাত রোগের ক্ষতিকারক কারণে সীমাবদ্ধ। সম্প্রতি টমেটোর গ্রীষ্মকালীন ভ্যারাইটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন ভ্যারাইটির জন্যে জুন থেকে জুলাই মাস উত্তম। চেরি টমেটোর সুস্বাদু রেসিপি জানুন।

টমেটোর জাত

শীতকালীনঃ বারি টমেটো -১, ২,৩, ৫, ৮, ৯, ১১, ১২ এবং চেরি।
গ্রীষ্মকালীনঃ বারি টমেটো – ৪, ৫, ৬, ১০, ১১, ১৩

আন্তঃবর্তীকালীন পরিচর্যা

ক) কখনো একসাথে খুব বেশি বীজ রোপণ করা যাবে না। একটা টবে একটা চারাগাছ রোপণ করলে ভালোভাবে চারা বেড়ে উঠতে পারে।

খ) টমেটো চারাগাছ সাধারণত খুব নাজুক হয় তাই একে বাঁশের বা ধইঞ্চার তৈরী লাঠির সাহায্যে ঠেস দিতে হয়।

গ) সময়মতো প্রুনিং করতে হবে।

ঘ) পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে।

ঙ) নিয়ম করে সার/ কীটনাশক প্রয়োগকরতে হবে।

গাছে ঝুলে থাকা টমেটো

মাটিছাড়াও টমেটো চাষ করা যায়

সার

একটা টবের মাটির   অর্ধেক অংশ কম্পোস্ট সার এবং বাকি অর্ধেক অংশ গোবর ও মাটি মিশিয়ে নিতে হবে। ট্রান্সপ্ল্যান্টিং এর পর এই কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে হবে। এক মাসে কমপক্ষে দুইবার কম্পোস্ট সার দিতে হবে।

টমেটোর রোগ দমন

ডাম্পিং অফঃ রিদমিল @ ২ গ্রাম/লি.
আর্লি ব্লাইটঃ রোভ্রাল @ ২ গ্রাম/লি.
লেট ব্লাইটঃ রিদমিল @২ গ্রাম/লি.

কীটনাশক প্রয়োগ

হোয়াইট ফ্লাইঃ সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি @ ১মিলি/লি.
লিফ মিনারঃ ডায়াজিনোন ৬০ ইসি @ ১মিলি/লি.

টমেটোর পুষ্টি উপাদান

প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ০.৯ গ্রাম আমিষ, ৩.৬ গ্রাম শর্করা, ০.৮ মি. গ্রাম আঁশ, ০.২ মি. গ্রাম চর্বি, ২০ কিলোক্যালরি শক্তি, ৪৮ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ০.৬৪ মি. গ্রাম লৌহ, ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ২৭ মি. গ্রাম ভিটামিন ‘সি’।

টমেটো

টমেটো

টমেটোর পুষ্টিগুণ

ক) টমেটো উচ্চপুষ্টিমান সম্পন্ন একটি সবজি। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন থাকে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়া  এতে রয়েছে ভিটামিন – সি,  ভিটামিন – ডি, পটাশিয়াম, লবণ, লোহা, চুন আর ম্যাঙ্গানিজ।

খ) হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

গ) ব্লাড প্রেশার কমায়, স্কিন কেয়ার করে।

ঘ) কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

ঙ) গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে খুবই উপকারী।

চ) টমেটো সালাদ বা রস করে খেলে ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধি পায়।

ছ) বাচ্চাদের অল্প পরিমাণ টমেটো সালাদ করে খাওয়ালে তারা সবল ও নীরোগ থাকে।

জ) দৈনিক একটি করে পাকা টমেটো খেলে চেহারার ফ্যাকাশেত্ব কমে।

ঝ) নিয়মিত টমেটো খেলে পাকস্থলী ও অন্ত্র সুস্থ-সবল থাকে।

ঞ) টমেটো মূত্রথলির অম্লতা দূর করে। ফলে বৃক্কে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়।

Suriya Jaman Barsha
Follow Me

Leave a Reply