শিম (ইংরেজি: Bean) বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত লতাজাতীয় গুল্ম। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির শিম চাষ করা হয়। শিম মানুষ ও পশুর খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। পেকে শুকিয়ে যাবার আগে শিমের বীজ তুলে কাঁচা কিংব রান্না করে খাওয়া সম্ভব।
শিমে রয়েছে নানান উপকারিতা
ক) রোগ প্রতিকার ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে।
খ) শিমের খনিজ সমৃদ্ধতার কারণে এটি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
গ) শিম কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ঘ) গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর অপুষ্টি দূর করতে শিম বেশ উপকারী।
ঙ) নিয়মিত শিম খেলে তা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
চ) শিমে সিলিকনজাতীয় উপাদান থাকে যা হাড় সুগঠিত করে।
ছ) শুম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আমাদের শরীরের শর্করার নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বলা চলে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিম দারুন ভূমিকা পালন করে।
জ) নিয়মিত শিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
ঝ) শিমের ফুল রক্ত আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে।
ঞ) শিমের দানায় ভিটামিন বি সিক্স ভালো পরিমাণে থাকায় তা স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শিম মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে ও এলার্জির সমস্যার প্রতিকারক হিসেবে বেশ কার্যকর।
বীজ বপনের সময়
আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত শিমের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
মাটি তৈরি
বেলে বা বেলে দো-আঁশ শিমের জন্যে উপযোগী মাটি।
জমি তৈরি
বেশী জমিতে আবাদ করা হলে কয়েকবার উপযুক্ত চাষ দেওয়া উচিত, চাষ শেষে মই দেওয়া ভাল।
পিটের দুরত্ব
ছাদে বড় কন্টেইনারে জমি তৈরি করে শিম গাছ লাগালে এক পিট থেকে অন্য পিটের দুরত্ব ৩.০ মিটার রাখতে হবে।
বীজ বপনের নিয়ম
প্রতি পিটে ৪ থেকে ৫ টি করে বীজ বোনা সর্বোত্তম। বীজ বপনের পূর্বে ১০-১২ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি পিটে ২-৩ টি করে সুস্থ চারা রেখে বাকী চারা তুলে ফেলতে হয়।
পরিচর্যা
বাড়ন্ত শিম গাছের গোড়ায় পানি না জমে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি। শুষ্ক মৌসুমে জমিতে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এছাড়া গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন পিটে গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
সার
গোবর | ১০ কেজি |
---|---|
খৈল | ২০০ গ্রাম |
ছাই | ২ কেজি |
টিএসপি | ১০০ গ্রাম |
এমওপি | ৫০ গ্রাম |
মাদা তৈরির সময় উপরের তালিকাভুক্ত সারসমূহ প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজালে ১৪-২১ দিন পর পর দুটি কিস্তিতে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম করে মিউরেট অব পটাশ বা এমওপি সার দিতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা শিমকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। চারা অবস্থায় পাতা ছিদ্রকারী পোকা বিকাশকে ব্যাহত করে। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ও অনেক সময় ক্ষতি করে থাকে। ফুল ফোটার সময় থ্রিপস পোকা ক্ষতি করতে পারে। ফল পাকার সময় গান্ধি পোকা দ্বারা শিম আক্রান্ত হতে পারে।
রোগ
শিমের মূলত দুটি রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। মোজাইক ভাইরাস ও অ্যানথ্রাকনোজ। মোজাইক রোগের বাহক মূলত জাবপোকা হয়ে থাকে। এই রোগ দমনের জন্যে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ২-৩ মিলিলিটার) প্রতি ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে শিম গাছে ১০ দি পর পর ২থেকে ৩ বার করে স্প্রে করতে হবে। সতর্কতার সাথে ঔষধ স্প্রে করুন। অ্যানথ্রাকনোজ হলে মেক্সজিল ৭২ WP জাতীয় ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ পরোপকারী লেবু
ফসল সংগ্রহ
আশ্বিন-কার্তিক মাসে শিম গাছে ফুল আসে। ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর বাগান থেকে শিম তোলা যায়। ৪ মাসেরও বেশী সময় ধরে এরা ফল দিতে পারে।
ফসলী জমিতে ফলন
প্রতি শতক ফসলী জমিতে ৩৫-৭৫ কেজি, প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021