ঘরে বসেই খুব সহজে পানিয়ে ফেলতে পারেন কোকোপিট। খুব বেশি পরিশ্রম ও উপাদানের প্রয়োজন নেই এ ক্ষেত্রে। কোকোপিট বায়োডিগ্রেডেবল, এটি পরিবেশের জন্যে অক্ষতিকর ও পূণঃব্যবহারযোগ্য।
যেভাবে কোকোপিট তৈরি করবেন
ক) এক্ষেত্রে প্রথমেই নারিকেলের শুকনো ছোবড়া জোগাড় করতে হবে। সেগুলো পরিচ্ছন পরিবেশে সংরক্ষণ করবেন। সেখান থেকে আঁশ তুলে এনে শুকাতে দিতে হবে। কাচি বা ছুড়ি দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে নিতে হবে। গুড়ো করার মেশিন দিয়ে ভাল করে গুড়ো করে নিতে হবে।
খ) কোকোপিটের পাউডারি অংশ থেকে চালুনী দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশ বের করে নিতে হবে করে নিতে। প্রয়োজনে হাত দিয়ে বেছে বেছে বের করে নিতে হবে। আলাদা করা পিটকে লবণ ও র্যাডিকেল মুক্ত করতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এটি বিদ্যুৎ পরিবাহিতা কমায়। পিটকে পানিতে নিমজ্জিত করে রাখতে হবে। ঘন্টাখানেক পর পানি থেকে তুলে এনে হাত দিয়ে চিপে চিপে পানি বের করে নিতে হবে।
গ) যে শেইপের ব্লক তৈরি করতে চাই সেই আকৃতির কন্টেইনারে ভর্তি করে রেখে দিতে হবে। সরাসরি সূর্যালোকের নিচে একদিন রেখে দিতে হবে। কোকোপিট ব্যবহারের জন্যে উপযুক্ত হয়ে যাবে। আপনি যদি নিজের বাগানেই ব্যবহার করতে চান তবে ভেজা পানি থেকে তুলে এনেই টব/পট/ব্লকে ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন।
যেভাবে রেডিমেইড কোকোপিট এর ব্লক ব্যবহার করবেন
প্রথমে বড় একটি কন্টেইনার বা পাত্র নিন। একটি ব্লক এর জন্যে প্রায় ৩.৫ লিটার গরম পানির প্রয়োজন। ককোপিট ব্লকটি গরম পানির সাহায্যে ভিজিয়ে রাখবেন ২-১ ঘন্টার জন্যে। ব্লকে থাকা লবণ দূর করতে ২-৩ বার পানি পরিবর্তন করুন।
পানিতে ভেজানোর ফলে কোকোপিট পানি শুষে নিবে। অতিরিক্ত পানি ফেলে দিন। হাত বা যন্ত্রের সাহায্যে ব্লক ভেঙ্গে দিন। পিট একসাথে মিশিয়ে ফেলুন। আরও পানির দরকার হলে যুক্ত করুন। ২-১ দিনের জন্যে তৈরিকৃত পিটকে সরাসরি সূর্যালোকের নিচে রাখুন।
আপনার কোকোপিট ব্যবহারের জন্যে তৈরি।
আরও পড়ুনঃ কোকোপিটের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহার
কোকোপিটকে কমপোস্ট হিসেবে ব্যবহারের নিয়ম
একটি ছায়াযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। ১০০ গ্রাম ছোবড়ার গুড়ো চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এর উপরে প্লিউরোটাস এর গুড়া(পিট প্লাস) ৩০০ গ্রাম দিতে হবে। এর উপরে আবারও ১০০ গ্রাম ছোবড়া গুড়া দিতে হবে। এরকম একটির পর একটি লেয়ার তৈরি করতে হবে ১ মিটার পর্যন্ত। ১ মিটার হয়ে গেলে উপর থেকে পানি ঢালতে হবে। কয়েকদিন এভাবে পানি ঢালতে হবে। পচতে ১ মাস সময় দিতে হবে।
কোকোপিট+পিট প্লাস ইউরিয়া+পানির সমণ্বয়ে তৈরি করবে জৈব সার। ভাল জৈব সার পেতে ৩০-৪০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এই কোকোপিট জৈব সারটি প্রয়োজনীয় প্রায় সকল জৈব ও অজৈব মৌল দ্বারা গঠিত। এটি মাটির কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
আরও পড়ুনঃ ঘরেই তৈরি করুন পটিং মিক্স
কোকোপিট ব্যবহার করে বীজ থেকে চারা তৈরীর নিয়ম
বীজ থেকে চারা তৈরীর জন্য ঝুর ঝুরে হয়ে যাওয়া কোকো ডাস্ট গুলোকে চাল ধোয়ার মত ২-৩ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া শেষ হয়ে গেলে ধান শুকানোর মত কর করা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। সম্পুর্নভাবে শুকিয়ে যাওয়া কোকো ডাস্ট গুলো দিয়ে বীজের ট্রে অথবা কালো রং এর প্লাস্টিকের ১২০-১৫০ মিঃলিঃ কাপ / গ্লাস ভরাট করুন। বীজের ট্রে অথবা প্লাস্টিকের কাপ/গ্লাস কোকো ডাস্ট দিয়ে ভরাট করে নেওয়ার পর এগুলোর উপর ঝর্নার মত পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে নিন এরপর এক এক করে বীজ গুলে বুনে দিন। খেয়াল রাখবেন কোকো পিটের বীজতলায় অতিরিক্ত পানি থাকলে বীজ পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বীজ বোনার আগে জেনে নিন আপনি যে বীজ বুনবেন সেগুলো আগে থেকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে কি না? বীজ বোনা শেষ হেয় গেলে বীজের ট্রে অথবা প্লাস্টিকের গ্লাস গুলো ঘোলাটে বা কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন যাতে বাতাস স্বাভাবিক ভাবে আসা যাওয়া করতে পারে এবং রোদ সরাসরি না পড়ে। বীজ গজানোর পর উপযুক্ত সময়ে টব / ড্রাম / বেড এ চারা রোপন করে দিন।
কোকোপিটে রাসায়নিক সার ব্যাবহার করেও চাষ করা যায়। মাটিতে যে পরিমান রাসায়নিক সার ব্যাবহার করে চাষ করা হয় ঠিক সেই পরিমান সার কোকোপিটে ব্যবহার করে চাষ করতে পারবেন।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020