এই কারণেই দারুচিনি গুঁড়ো এবং মশলার প্যাকেট বাজার থেকে কিনে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করার সাথে আপনার বাগানের জন্যেও চাষ করতে পারেন।
সঠিক অবস্থা
ঘরে নাকি ছাদে?
দারুচিনি গাছগুলি ঘরে এবং বাগানে/ছাদে উভয় জায়গাতেই উপযুক্ত, প্রধান জিনিসটি তাদের রোদে থাকতে হবে।
তাপমাত্রা যখন ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে নেমে যায় অর্থাৎ বাংলাদেশের জলবায়ুতে যখন শীতকাল, তখন বাড়ির ভিতরে দারুচিনি রোপণ করা ভাল।
বাগানের জমিতে রোপন করার ক্ষেত্রে বর্ষায় উঁচু জমিতে চাষ করতে হবে। দারুচিনি গাছে ফুল ফোটে জানুয়ারিতে এবং ফল পাকতে শুরু অরে জুলাইতে। তখনই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে বাগানে রোপন করে দেওয়াই শ্রেয়।
আরও পড়ুনঃ গ্রিন টি – উপকারি নাকি বিপজ্জনক?
কতটুকু রোদ লাগবে?
পূর্ণ সূর্যকিরণ দারুচিনি জন্য অত্যাবশ্যক, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি অন্দরের জন্য আপনাকে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, বেলকুনিতে কিংবা আপনার টেরেসের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।
কেমন মাটি?
একটি ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক এবং বাগানের মাটি ব্যবহার করবেন না কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানোর চেষ্টা করি। অনেকসময়ই সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই প্র্যাক্টিস ফলপ্রসূ হয় না।
নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। দারুচিনি খরা একেবারেই সহ্য করতে পারে না।
এছাড়াও মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
বাইরে চাষ করার জন্য আপনার এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করতে হবে।
ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের জন্যে একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে (আপনি শুরুতে একটি ছোট্ট পাত্র ব্যবহার করতে পারেন এবং একটু বড় হলে গাছটিকে অন্য পাত্রে প্রতিস্থাপন করতে পারেন)।
দারুচিনি রোপণ
ক) আপনি নিজেই বীজ সংগ্রহ করতে পারেন বা নার্সারি থেকে একটি দারুচিনি গাছ কিনতে পারেন।
বাইরে চাষের ক্ষেত্রে
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করতে হবে।
মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করুন।
অন্দর
নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করুন।
পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূর্ণ করুন।
খ) ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করুন। আপনি যদি বীজ ব্যবহার করেন তবে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করুন।
গ) গাছটি গর্তের মধ্যে রাখুন এবং মাটি দিয়ে চাপা দিন। আপনি যদি বীজ ব্যবহার করেন তবে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুতে দিন এবং মাটি দিয়ে বিজটি ঢেকে দিন।
ঘ) মাটি সার্বক্ষণিক সিক্ত রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিতে থাকুন নিয়মিত। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে পানি বের না হওয়া পর্যন্ত পানি দিতে থাকুন। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে পানি দিন।
আরও পড়ুনঃ ক্যাকটাসের পচন থেকে রক্ষা পেতে করণীয়
পরিচর্যা
দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
প্রথম দারুচিনি ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিবে। তবে আমার নিজের চাষ করা দারুচিনি থেকে সেরা মানের দারুচিনি পাবেন যে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।
দারুচিনি গাছ ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত ডাল ছাঁটাই করে ছোট রাখা যায়। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব।
দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হযবে সেগুলি থেকে আপনাকে বাকল তুলে ফেলতে হবে, সেই বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে ভালভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020