রূপে-গুনে এবং স্বাদে অনন্য একটি শাক হল লালশাক৷ ইংরেজিতে যার নাম রেড স্পিনাচ বা Red Spinach.
লালশাক রান্না করে খেতে ভালবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর৷ বাচ্চাদের জন্য একটি আদর্শ ও আকর্ষণীয় খাবার৷ আমাদের দেশে মূলত লাল শাক অল্প তেল দিয়ে ভেজে খাওয়া হয়।
লাল শাক আমারান্থাসিয়া পরিবার এর আমারান্থাস গনের অন্তর্ভুক্ত৷ যার বৈজ্ঞানিক নাম আমারান্থাস জেনেটিকাস৷
ইতিহাস
স্পিনাচ যার উৎপত্তিস্থল পারস্য৷ এখনো ইরানের বনে জঙ্গলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে থাকে৷ মধ্যযুগীয় সময়ে এটা ইউরোপে পরিচিতি লাভ করে৷ ইউরোপীয়দের হাত ধরে আসে আমেরিকায়৷ তবে বর্তমানে আমরা যে লালশাক খেয়ে থাকি এটা আসলে উন্নত ব্রিডিং এর মাধ্যমে করা হয়েছিল নেদারল্যান্ডে৷
বাংলাদেশের সব জায়গাতেই এটা চাষ করা হয়৷ এমন কি শহুরে পরিবেশে বাসা বাড়ির ছাদে বা আঙ্গিনায় চাষ করা যেতে পারে৷
লালশাক চাষ পদ্ধতি
ক) মাঝারী অথবা বড় মাপের আয়তাকার টব বা কন্টেইনার নিতে হবে৷
খ) পানি নিষ্কাশনের জন্য তলায় ছিদ্র থাকা জরুরী৷
গ) এবার প্রস্তুত করে রাখা মাটি গুলো এতে নিয়ে নিন৷
ঘ) বীজ দুইভাবে রোপন করা যেতে পারে৷ লাইন করে অথবা ছিটিয়ে লাগাতে পারেন৷
ঙ) তবে লাইন করে লাগালে পরিচর্যা করা সহজ হয়৷
চ) বীজ বপন করা হয়ে গেলে বীজগুলোর উপরে হালকা করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে৷
ছ) এবার টব টা যথাস্থানে রেখে দিন এবং পরের দিন বিকেলে হালকা করে পানি ছিটিয়ে দিন৷
জ) বীজ বপনের তিন দিন পরই চারাগাছ দেখা যাবে৷
সময়কাল
লাল শাক সারা বছরই চাষ করা যায়৷ তবে শীতের শুরুতে এর ফলন ভালো হয়৷ ঠান্ডা আবহাওয়া এর বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে৷
আরও পড়ুনঃ ছাদবাগানে গুণবতী লেটুসের চাষপদ্ধতি
লালশাকের জাত
লালশাকের জাত:বারি লালশাক- ১ চাষ করা ভালো ৷ এটা দেখতে উজ্জ্বল লাল রঙের এবং পাতা ও কান্ড নরম৷প্রতি গাছে ১৫-২০টা পাতা থাকে এবং এর উচ্চতা ২৫-৩৫ সেমি৷
লালশাকের যত্ন-আত্তি
ক) চারা গজানোর কিছু দিন পর অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে ফেলতে হবে এতে চারাগুলো সঠিক পরিমান পুষ্টি পাবে যা চারার বৃদ্ধি কে তরান্বিত করবে৷
খ) হালকা করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে যেন চারা গুলো নেতিয়ে না পড়ে৷
গ) মাঝে মাঝে ছাই ছিটিয়ে দিলে আর কোন ক্ষতির ভয় থাকে না৷
ঘ) সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন দেখা দিলে ব্যবহার করতে হবে৷
সার/মাটি তৈরি
সব ধরনের মাটিতেই লালশাক ভালো জন্মে৷ তবে দোআশ বা বেলে দোআশ মাটি ব্যবহার করা উত্তম ৷ মাটি প্রস্তুত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন একভাগ মাটি ও একভাগ জৈব সার থাকে৷ মাটি গুলো যেন ঝুরঝুরে থাকে৷ হালকা পানি ছিটিয়ে নিতে পারেন ৷
লালশাকের রোগ বালাই
টবে লালশাক চাষ করার জীবনব্যাপ্তি ২১ দিন৷ এতে তেমন কোন রোগবালাই নেই৷ তবে এর পাতা প্রথমে হলুদ রঙ ধারন করে পরবর্তীতে সাদা হয়ে যেতে পারে৷ ফলে পুরো পাতা নষ্ট হয়ে যায় এবং এটা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়৷
কীটনাশক
ক) ছাই ছিটিয়ে দেয়া খুবই ভালো ৷ কেননা ক্যামিক্যাল জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারে কিছুটা স্বাস্থ্যঝুকি রয়েছে ৷
খ) রোগাক্রান্ত পাতা নষ্ট করে ফেলা ৷
গ) রোভরাল ২ গ্রাম/ডাইথেন ৪৫২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে৷ ১০-১২ দিন পর পর৷
লালশাকের পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে যা আছে-
১) ৩৭৪ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম
২) ৮.৯৬ মিলিগ্রাম শর্করা
৩) ৫.৩৪ মিলিগ্রাম প্রোটিন
৪) ০.১৪ মিলিগ্রাম স্নেহ
৫) ০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ১
৬) ০.১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ২
৭) ৪২.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
8) ১১.৯৪ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন
৯) ১.০৬ মিলিগ্রাম অন্যান্য খনিজ
১০) মোট শক্তি.৪৩ কিলোক্যালরি।
লাল শাকের উপকারিতা
ক) লালশাকে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম৷ এটি বাচ্চাদের দাঁত ও হাড় গঠনে খুবই কার্যকরি৷
খ) ক্যালসিয়ামের অভাবে বাচ্চাদের রিকেটস এবং বড়দের অস্টিওপরোসিস রোগ হতে পারে৷ তাই লালশাক খাওয়ার অভ্যাস করুন৷
গ) গর্ভবতী দের জন্য এটা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরন করে থাকে৷
ঘ) কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগের ঝুকি কমায়৷
ঙ) এতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধোন সহায়তা করে ৷
চ) মস্তিষ্ক ও হৃদপিন্ড কে ভালো রাখতে এর জুরি নেই৷
ছ) কিডনি কে সচল রাখতে ভূমিকা পালন করে৷
জ) দেহে রক্ত গঠনে সহায়তা করে৷
ঝ) রক্তশূণ্যতা কমাতেও লাল শাকের ভূমিকা অপরিসীম।
ট) আজকাল চোখে সমস্যা নেই এমন মানুষ খুব কমই আছে৷
ঠ) লালশাক আপনার চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে৷
লালশাকের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তবে আর দেরি কেন? আজই আপনার ছাদে অথবা বারান্দায় এই গুনবতী শাকের চাষ শুরু করে দিন৷
আরও পড়ুনঃ জমিতে ঢেঁড়স বা ভেন্ডির চাষ
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021