লেটুস একটি বারোমাসি উদ্ভিদ। লেটুস গাছের পাতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তরকারি হিসেবে জন্মানো হয়, তবে মাঝে মাঝে এর ডাটা এবং বীজও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রাচীন মিশরীয়রা আগাছা থেকে সর্বপ্রথম লেটুস আবিষ্কার করে। লেটুসের বীজ ব্যবহার করে তেল তৈরী করা হত এবং এর রসালো পাতাগুলো খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। তেলসমৃদ্ধ বীজের কারণে এই পাতা গ্রিক এবং রোমানদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় ল্যাকটুকা, যার ইংরেজী আধুনিক নামকরণই হল কিনা ‘লেটুস’। মূলত ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা লেটুসের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে তবে বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে লেটুসের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করে।
লেটুসের উপকারিতা ও ব্যবহার
১) কিছু লেটুসের জাত রয়েছে যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। বিপাকক্রিয়ায় এর ভূমিকা অপরিহার্য। তা ছাড়া এই পুষ্টি উপাদানকে বলা হয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
২) কিডনির সমস্যার জন্য যেসব রোগীদের প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় তাদের জন্য লেটুসপাতা ভীষণ উপকারী। এই পাতার সোডিয়াম ভিটামিন ‘বি’ ওয়ান, ‘বি’ টু, ‘বি’ থ্রি শরীরের যেকোনো অঙ্গে পানি জমে যাওয়া রোধ করে।
৩) আঁশযুক্ত খাবার দেহের জন্য উপকারী। এটি হজমও হয় দ্রুত। লেটুস একটি আঁশযুক্ত সবজি। এতে অতি অল্প পরিমাণ কোলেস্টরেল রয়েছে এবং হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
৪) লেটুস পাতাতে ৯৫.৫ গ্রাম পানি থাকে। এই পানি রক্তের লোহিত রক্তকণিকা বা RBC, শ্বেতকণিকা বা WBC, অনুচক্রিকা বা Platelate ও অন্যান্য উপাদানকে সুস্থ-সবল রাখে। এতে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ার জন্য মোটা ব্যক্তিদের চর্বি ও ওজন কমায়।
৫) যারা লেটুসপাতা নিয়মিত খান তাদের পেট ভার হয়ে থাকা, গ্যাস হওয়া, ক্ষুধা না লাগা, অ্যাসিডিটি—এই সমস্যাগুলো দূর হয়। বার্ধক্য আসে দেরিতে, ত্বকে বলিরেখাও পড়ে দেরিতে।
৬) ত্বকের কোথাও কেটে গেলে এই পাতাকে থেঁতলে ব্যথার স্থানে লাগালে ব্যথা ভালো হয়।
৭) সব ধরনের সবুজ পাতার সবজিতে কিছু না কিছু আয়রন রয়েছে। তাই খাবারের সঙ্গে পছন্দমতো উপায়ে লেটুস ব্যবহার করুন।
৮) প্রেগ্নেন্সির সময় কয়েক টুকরা কাঁচা লেটুসপাতা মা ও শিশু উভয়ের শরীরেই রক্তের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তাই গর্ভবতী মায়েদের জন্যে এটি হতে পারে দৈনন্দিন আহার্য।
৯) বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন-বি রয়েছে। ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৬, বি-১২। এই নানান ধরণের ভিটামিন-বি ভিন্ন ভিন্ন খাবারের উৎস থেকে আসে। বিশেষ করে প্রোটিন জাতীয় খাদ্যে পাওয়া যায়। কিন্তু লেটুসে কয়েক ধরনের ভিটামিন ‘বি’ রয়েছে।
১০) চোখের ইনফেকশনজনিত বিভিন্ন সমস্যায় (যেমন—চোখ ওঠা) ১ লিটার পানিতে কয়েক টুকরা লেটুসপাতা (৫০ গ্রাম) ছয় মিনিট ধরে ফুটিয়ে সেই পানিতে চোখ ধুলে চোখ ওঠা দ্রুত ভালো হয়।
১১) এই উপাদানটি রক্তের জন্য ভীষণ উপকারি। রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ অতিমাত্রায় কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। লেটুস পাতা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পটাসিয়াম পাওয়া যায়।
১২) খুশকির বিরুদ্ধেও কাজ করে এই পাতা। অনেক শ্যাম্পুতে লেটুসপাতার গুঁড়া ব্যবহার করা হয়।
১৩) দীর্ঘ সময় রৌদ্রে থাকলে ত্বকে কালচে পোড়া ভাব হয়। লেটুসপাতা থেঁতলে ত্বকে দিলে ত্বকের উপকার হয়।
আরও পড়ুনঃ ক্যান্সার প্রতিরোধী করোসল এর ঔষধি গুণাগুণ
জাত
লেটুসের বিভিন্ন জাতের মধ্যে বিগ বোস্টন, হোয়াইট বোস্টন, প্যারিস হোয়াইট, গ্র্যান্ড ব্যাপিড, নিউইয়র্ক-৫১৫, কিং ক্রাউন, কুইন ক্রাউন, ডার্ক, গ্রিন, ইম্পিরিয়াল-৫৪, সিম্পসন, গ্রেটলেক উল্লেখযোগ্য।
লেটুস চাষের পদ্ধতি
বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই লেটুস চাষ করা যায়।
লেটুস চাষে টবের মাটি
গাছের বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। সাধারণ ভাবে প্রত্যেক টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫/৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মিশাতে হবে।
লেটুস চাষের সময়
ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মধ্যকাল পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগানোর সঠিক সময়।
লেটুস চাষে বীজ বা চারা
গামলা আকৃতির টবে বীজ বুনলে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই চারা গজাবে। চারায় ৪ থেকে ৫ টি পাতা গজালে টবে লাগিয়ে দিতে হবে। সাধারণত লেটুস চাষের জন্য খুব বড় টবের প্রয়োজন হয় না।
লেটুস চাষে চারা রোপণ
শেষ বিকেলে লেটুসের চারা লাগানো ভাল ফলাফল দেয়। চারা লাগানোর সময় চারার গোড়ার মাটি হাত দিয়ে খুবই হালকা চেপে দিতে হবে যাতে চারার নরম শিকড় চাপে ছিড়ে না যায়। চারা লাগানের পর ৩ থেকে ৪ দিন ঢাকনী দিয়ে চারাকে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সকাল-বিকাল চারার গোড়ায় পানি ঢালতে হবে।
লেটুসের রোগ বালাই
গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলা উচিত। জাব পোকা লেটুসের জন্যে ক্ষতিকর। জাব পোকা দেখা দিলেই জৈব পেস্টিসাইড স্প্রে করতে হবে। জৈব পেস্টিসাইড ছিটানোর ৭ দিনের মধ্যে লেটুস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ছাদবাগানে ইপসম লবণের সেরা ১০টি ব্যবহার
লেটুস চাষে পরিচর্যা
টবে চারা লাগানোর পরেই অনেক সময় দেখা যায় চড়ুই, শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা এবং ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে কয়েকটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে আলতো ভাবে টবটি ঢেকে রাখতে হবে। তাছাড়া শুকনো পাতা বা রোগাক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে।
লেটুস সংগ্রহ
চারা লাগানোর ৩০ দিনের মধ্যেই লেটুস পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021