ইদানীংকালে সৌখিন বাগানীরা শতভাগ প্রাকৃতিক সামগ্রী ব্যবহারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্লাস্টিকের বদলে পচনশীল বিকল্প বস্তু কিংবা রাসায়নিক সার, কীটনাশকের বদলে বিকল্প প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাগান করার দিকে ঝুঁকছে। শতভাগ অর্গানিক লাইফস্টাইল কঠিন মনে হলেও বাস্তবে এখন খুব সহজেই কৃত্রিমতা ত্যাগ করা সম্ভব। মানুষ বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাদ্য, রূপচর্চা সামগ্রী ও চাষাবাদ সরঞ্জামের ব্যবহার করছে। শহুরে সৌখিন কৃষকরা রাসায়নিক সার, কীটনাশক, রোগ-বালাই দমন প্রযুক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জৈব পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে চাষাবাদের খরচ বেড়ে গেলেও আগামীর ভবিষ্যতের জন্যে সুস্থ ও নির্মল পরিবেশ বজায় রাখতে প্রকৃতির কাছে ফিরে আসার বিকল্প নেই। অভিজ্ঞরা বলেন শতভাগ জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্যে সাদা ভিনেগার বা সিরকার বেশ কিছু ব্যতিক্রমী ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে বাগানের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে নিরাপদ ও ঝুকিহীন রাখতে সাদা ভিনেগার অনেকটাই সক্ষম।
১. আগাছা নির্মূলে
আগাছা ও অবাঞ্চিত উদ্ভিদ সময়মতো দূর করা বাগান করার জন্যে খুবই কঠিন ও পরিশ্রমের কাজ। একটু অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে আপনার শখের ছাদবাগানটি। ছাদবাগানে আপনার রোপনকৃত গাছ ছাড়া অন্য যেকোনো গাছ দেখলেই তার উপর আপেল ভিনেগার ছিটিয়ে দিবেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেটি মরে যাবে।
২. খাদ্যের মাধ্যম
এমন কিছু উদ্ভিদ রয়েছে, যারা ভিনেগার ব্যবহারে খুব সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে। এজালিস নামক উদ্ভিদটি অম্লীয় মাটিতে খুব ভালভাবে বেড়ে ওঠে। শুধুমাত্র এক কাপ সাদা ভিনেগার এক গ্যালন পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন একটু একটু গাছে দিলেই সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে। আরও পড়ুন বাগানে ইপসম লবনের ব্যবহার।
৩. মাছি দূর করে
চিনি, পানি ও মোলাসেসের সাথে সাদা ভিনেগার মিশিয়ে ঘরে রাখলে ফলের মাছিপোকা ও ঘরোয়া মাছি দূর হয়। মিশ্রণটি তৈরি করে গাছের আশেপাশে রেখে দিলে যখনই কোনী মাছি ঘোরাফেরা করলে মিশ্রণে আটকে পড়ে যাবে।
৪. এলার্জি দূর করে
অনেকক্ষণ কাজ করলে বাগানে কাজ করতে গেলে এমনিতেই হাত ময়লা হয়ে যায়। এতে অনেকের হাত পায়ে চুলকানির উপদ্রব দেখা দিতে পারে। এটি খুবই বিরক্তিকর সৌখিন বাগানীদের জন্যে। এর থেকে বাঁচতে অভিজ্ঞরা মতামত দেয় বাগান থেকে ফিরে ডিস্টিল্ড ভিনেগার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা উচিত।
৫. চিকা ইদুর দূরে রাখতে
বাগানে অনেকসময় ইদুর চিকার আক্রমণে গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এক্ষেত্রে ভিনেগার অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্যে শুধুমাত্র আপনাকে ভিনেগারের মধ্যে তুলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই তুলাকে কটন বল আকারে টব বা কন্টেইনারের উপরের অংশে গর্ত করে ঢুকিয়ে রাখত হবে। ইদুর চিকা আর আপনার বাগানে ভিড়বেও না।
৬. পিপড়ার মরণনাশক
ভিনেগার পিপড়ানাশক হিসেবে দারুণ কার্যকরী। ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে পিপড়ার ঘর থেকে মাটি মিশিয়ে পিপড়া আক্রান্ত স্থলে ছিটিয়ে দিন। পিপড়া দূর হয়ে যাবে।
৭. বাগানের সরঞ্জাম পরিচ্ছন্নতায়
বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্টিলের সরঞ্জাম অনেক।দিন ব্যবহার করতে করতে ময়লা হয়ে যায়, সাথে জংও ধরে যেতে পারে। একটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে মরিচা ধরা সরঞ্জামগুলো কয়েক ঘণ্টার জন্যে ডুবিয়ে রাখলে মরিচা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আরও পড়ুন ১১টি সহজে পরিচর্যাযোগ্য ঘরোয়া উদ্ভিদ।
৮. শামুক দূর করতে
শামুক উদ্ভিদ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে ধরা হয়। এরা পাতা ও কচি কাণ্ড খেয়ে ফেলে গাছের ক্ষতিসাধণ করে। এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে খাটি ভিনেগার গাচগের উপর ঢেলে দিয়ে রাখতে পারেন।
৯. বিড়াল দূরে রাখে
আপনার পোষা বিড়াল যদি ছাদবাগানের বালির বাক্স কিংবা কোকোপিটের ড্রামে বসে এলোমেলো করে দিয়ে আসার অভ্যাস থাকে তবে ০৫ নং পদ্ধতির মতো বিড়ালকেও বাগান।থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
১০ পাখির কৃত্রিম স্নানাগার পরিচ্ছন্নতায়
পাখির স্নানাগার বাগানীদের তৈরি এক রকম কৃত্রিম পুল যা কিনা বাগানে আসা পাখিদের পানি খাওয়া ও গোসল করার জন্যে তৈরি করা হয়। পাখিদের জন্যে তৈরি এই কৃত্রিম বাথটাবে মরিচা ধরে যেতে পারে কিছুদিন পর। পাত্রে কিছু সাদা ভিনেগার ও পানি ব্যবহার করে ৭ নং প্রক্রিয়ার মতো মরিচা দূর করা সম্ভব।
১১. ফুলকে দীর্ঘ সময় সজীব রাখতে
বাগান থেকে সদ্য তোলা ফুলকে কে না বেশিক্ষণ সতেজ রাখতে চায়। কিন্তু পানি দিয়ে আর কতক্ষণই রাখা যায়! ২ টেবিল চামচ ভিনেগারের সাথে সামান্য চিনি মিশিয়ে ফুলে ছিটিয়ে দিতে পারেন। দীর্ঘসময় গাছ থেকে তোলা ফুলের সতেজতা থাকবে।
শেষ কথা
উপরের সমস্ত তথ্যাদি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে পরীক্ষিত। প্রাকৃতিক এন্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে ভিনেগারকে বাগানে ব্যবহার করে আপনার বাগানকে আরও বেশি দীর্ঘায়ু করতে পারবেন।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020