মার্গারেট মিচেলের লেখা “Gone With The Wind” একটি জনপ্রিয় রোমান্টিক উপন্যাস। এই বই থেকে পরবর্তীতে দারুন একটি ক্লাসিক সিনেমা তৈরি করা হয়। গল্পের নাম দেখলেই মনে হয় বাতাসের সাথে উড়ে বেড়ানোর একটা সাক্ষাৎ মিল আছে। আমরাও জীবনে কোনো না কোনো সময় বাতাসের সাথে উড়ে বেড়াতে কল্পনা করেছি। তবে গাছপালা বাতাসের সাথে উড়ে বেড়ানো আশাব্যঞ্জক কোনো ঘটনা নয়। আমরা কোনাভাবে যদি আকাশে বাতাসে ঝড়ের আলামত দেখি, দ্রুতই ছাদ ও বারান্দার নাজুক উদ্ভিদগুলিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উদ্ধ্বত হই। ছোট ছোট গাছগুলি শক্তসামর্থ্য গাছ এবং গুল্মের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আবার এদেরকে ঝড়ো বাতাস, ঝাপটা বৃষ্টি থেকে রক্ষা করাও সহজ।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
আসুন, মূল লেখায় যাওয়ার পূর্বে কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
১) জৈব কম্পোস্ট
২) কন্টেইনার, ঝুড়ি, বড় গামলা, বালতি
৩) সিমেন্ট ব্লক বা বড় শিলা
৪) পলি
৫) খুঁটি
৬) নাইলনের সূতা
ঝড়ে গাছপালায় যেসব ক্ষতি হতে পারে
ঝড় বড় উদ্ভিদের জন্যে বিশেষত বজ্রপাত। বজ্রপাতের ফলে বায়ুর নাইট্রোজেন বৃষ্টির পানির সাথে যুক্ত হয়ে ধরণীতে পতিত হয়। যেটা গাছের জন্যে এক দারুণ প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এই অল্প কিছু উপকারিতার সাথে সাথে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় বাগান মালিকদের।
এখন ঘূর্ণিঝড় আমফানে দুলছে সারাদেশ। এই সময়ে অনেক ছাদ বাগান মালিকদের অনেক দিনের সাজানো গোছানো গাছ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আকস্মিক ঝড়, ঝাপটা বাতাসে গাছপালার ডাল-কান্ড ভেঙ্গে যায়, দূর্বল গাছপালা উড়ে যায়, আর্দ্রতা ও শীতল পরিবেশের কারণে অনেক গাছের শিকড় মরে যায়।
শিকড় পচন থেকে বাঁচতে
ঝড়ের ফলে আকস্মিক শৈত্য আবহাওয়া থেকে শিকড়কে রক্ষা করার জন্য গাছের মূল অঞ্চল জুড়ে একটি ৩ ইঞ্চি জৈব সার বা রান্নাঘরের বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন। গাছের পাতা থেকে কমপক্ষে ৩ ইঞ্চি দূরত্বে রাখুন।
ছোট উদ্ভিদগুলো যেভাবে রক্ষা করবেন
ঝড়ো বাতাস থেকে রক্ষা করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরির জন্য ছোট গাছের উপর বড় হাড়ি, ঝুড়ি, বড় গামলা, বালতি দিয়ে ঢেকে দিন। বড় বাতাসের ঝাপটা লক্ষ করলে কোনো দেওয়ালের আবডালে লুকিয়ে রাখুন, কিংবা বাসায় নিয়ে আসুন। এছাড়াও বারান্দায় রাখা গাছগুলো বাঁচাতে পলিথিন দিয়ে গ্রিল মুড়িয়ে দিন।
বাতাস বা ঠান্ডা প্রতিরোধের জন্য মজবুত পলির সাহায্যে বড় গাছপালা, দ্রাক্ষালতা এবং গুল্মকে মুড়িয়ে দিন। মজবুত পাটের বস্তা বা ত্রিপলি দিয়ে ঢেকে দিন। প্রয়োজনে গাছের চারপাশে চারটি খুটি গেড়ে পলির একটি ফ্রেম তৈরি করুন। শক্ত সুতা দিয়ে কাপড়ের উপর বেঁধে রাখুন।
বড় বাগান রক্ষা করতে
ঝড়ের আগে আগে তিন বা চারটি কন্টেইনার বাগানের চারিপাশে স্থাপন করুন। ভারী কন্টেইনার হলে ঝড় শুরু হওয়ার আগে আগে সেগুলো কয়েকজনে মিলে স্থাপন করুন। ২ থেকে ৩ ফুট খুঁটি মাটির ২০ ইঞ্চি গভীরে স্থাপন করে মজবুত পলি দিয়ে খুঁটির জোড়গুলিতে সংযুক্ত করে চারপাশে মুড়িয়ে দিন, তবে এদের সংযোগগুলো আলগা রাখুন যেন বাতাসে কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত বাঁকতে পারে।
নতুন উদ্ভিদের জন্যে
নতুনভাবে লাগানো গাছের কাণ্ডগুলি আলগাভাবে পলি দিয়ে জড়িয়ে রাখুন যেন ঠান্ডা তাপমাত্রায় এরা ক্ষতিগ্রস্থ না হতে পারে। আরও বেশি সুরক্ষার জন্যে পুরো গাছটিকে মুড়িয়ে দিন। একটি অল্প বয়সী গাছের চারপাশে বেশ কয়েকবার মোড়ানোর জন্য যথেষ্ট বড় আকারের পলি ট্যাপের আকারে কেটে নিন। অল্প বয়স্ক গাছের উপরের অংশ থেকে পলি মোড়ানো শুরু করুন এবং তারপরে এটিকে চারদিকে জড়াতে থাকুন, নীচে নামতে নামতে কয়েকটি স্তর ওভারল্যাপ করবে। এর উপর দিয়ে আবার সূতা বেধে দিন।
পরামর্শ
ক) ঝড়ের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য ঝুলন্ত ঝুড়ি সহ প্ল্যান্ট, গ্যারেজ বা বা বারান্দা আচ্ছাদিত করে রেখে দিন।
খ) বড় আকারের উদ্ভিদ যেটি নিয়ে টানাহেচড়া করা কষ্টকর সেটিকে উপরের পদ্ধতিতে পলি মুড়িয়ে রেখে দিন। মাঝারি সাইজের টবের গাছকে ছাদের কার্ণিশের পাশে শুইয়ে দিন।
গ) আপনি যদি ছাদে বা বাগানে ফল বা শাকসব্জী চাষ করেন, তবে নিয়মিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে রাখুন।
ঘ) ঝড় থেকে বাগান ও ছোট ছোট গাছ রক্ষার্থে পুর্বেই সরঞ্জাম কিনে রাখুন। গ্রীষ্মকাল ও শীতের শুরুতে বাংলাদেশে ঝড়ের প্রকোপ বেশি থাকে। আকস্মিক ঝড়ে আপনার বাগানের ইশাল ইনভেস্টমেন্ট নিমিষেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাতে পারে।
ঙ) যারা ছাদের কার্ণিশে গাছ রাখেন, তারা এটা এখনই পরিহার করুন। হালকা বাতাসেই এগুলো উড়ে গিয়ে বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে। বড় কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে আধাপাকা ফল, সবজি সংগ্রহ করে ফেলুন।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Shadrul Anirban
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020