মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা এক ধরনের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ। এদের দেহ প্রকৃতির প্যারাবোলা আকৃতির এবং মুখে এন্টেনা ও চোষক অঙ্গ বিদ্যমান। জায়ান্ট মিলিবাগ পাওয়া যায় পাতা, শিকড় এবং ফল এ যা তাঁর পুরো শরীরে সাদা গুড়ো আবৃত করে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে মিলিবাগ নির্মূল করা বেশ কষ্টসাধ্য।
জায়ান্ট মিলিবাগ বা ছাতরা পোকার নিম্ফ এবং পুষ্প মঞ্জুরি দন্ড, কচি পাতা, ডগা, ফলের পুষ্পদন্ড- এসব অংশের রস চুষে খায়। এর ফলে আক্রান্ত অংশ সংকুচিত হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত গাছ শুটি মোল্ড দ্বারা আবৃত হয়ে যায়।
যেভাবে মিলিবাগ সংক্রমণ ছড়ায়
জায়ান্ট মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা একটি সংক্রামিত উদ্ভিদ থেকে অসংক্রামিত উদ্ভিদ এ ছড়াতে পারে। এছাড়াও উদ্ভিদ থেকে উদ্ভদে স্থানান্তরের অন্য মাধ্যমগুলো হল বৃষ্টি, পাখি, পিপীলিকা ইত্যাদি। এরকম নতুন উদ্ভিদের উপর স্থায়ী হয়। স্ত্রী মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা উড়তে এবং তেমন সক্রিয় হয় না। মজার ব্যাপার হল, মানুষ মিলিবাগ পরিবহন এর প্রধানতম বাহক।
ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ এর শুককীট মুকুল, কচি পাতা, কচি ডগা ও ফলের ডাঁটি এর থেকে পুষ্টি শোষন করে নেয়। এছাড়াও অন্য জায়গা থেকে আসা স্ত্রী মিলিবাগ ও কান্ডের উপরে এবং বৃক্ষকে ঘিরে মাটির উপরে দেখা যায় এবং এরা এসব স্থানে ডিম পাড়ে। কীটের আক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে তা হোস্ট ফলের গঠনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ফল অকালে গাছ থেকে ঝরে যেতে পারে। ছাতরা পোকা এক ধরনের আকর্ষণীয় মধু নিঃসরণের ফলে পিপড়ার দল আকর্ষিত হয়। মধু নিঃসৃত স্থানে কালো মোল্ড সৃষ্টি হয়। এর ফলে ওই স্থানে ছত্রাক বৃদ্ধি পায়। ছত্রাকের কলোনী তৈরী হওয়ার ফলে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। এতে ফলের উৎপাদন হ্রাস পায়। নিম্ফ এবং প্রাপ্তবয়স্ক কীটগুলি পাতা থেকে রস শুষে নেয়। ফলে পাতা হলুদ হয়ে নেতিয়ে ঝরে পড়ে যায়। ফলের বোঁটা দূর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে গাছ থেকে ফল খসে পড়ে। আক্রমণ চরমভাবে দেখা দিলে ফল পরিপক্ক হওয়ার আগেই তা ঝরে যায়।
দমন ব্যবস্থা
ক) মিলিবাগ/ছাতরা পোকার নিম্ফ শিকড় বেয়ে বেয়ে গাছের উপরে উঠে থাকে। এজন্যে শীতের শুরুতে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই আম গাছের গোড়া অঞ্চল মাটি হতে ১ মিটার উঁচুতে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি প্লাস্টিকের চওড়া পিচ্ছিল ব্যান্ড গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলেই এরা উঠতে বাধাগ্রস্থ হয়। অনেক সময় প্লাস্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ডের নিচের অংশে উঠতে ব্যর্থ নিম্ফ জমা হয়। এ অবস্থায় এদের সংগ্রহ করে পুড়িয়ে মারা সম্ভব। অথবা পোকার উপর উপযুক্ত কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন। এই ক্রিটিকাল সময়ে নিম্ফকে গাছে উঠা হতে বিরত রাখা সম্ভব হলে ছাতরা পোকার আক্রমণ শুরুতেই দমন করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ আমের বোঁটা পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
খ) অল্প কিছু নিম্ফ গাছ বেয়ে উপরে উঠে গেলে গুঁড়া সাবান বা ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি (৫-১০ গ্রাম/ লিটার পানিতে) স্প্রে করে এ পোকার আক্রমণ থেকে আম গাছকে বাঁচানো সম্ভব। তবে ব্যাপকভাবে মিলিবাগ বা ছাতরা পোকার আক্রমণ ঘটলে কীটনাশক প্রয়োগের বিকল্প নেই। মিলিবাগ বা ছাতরা পোকার বহিরাবরণ মোম জাতীয় পদার্থ আবৃত থাকে, সেহেতু উপযুক্ত কীটনাশক ছাড়া এটি দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা অনুচিত। এ ক্ষেত্রে প্রথমে ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা এ জাতীয় কীটনাশক ৩ মিলি/প্রতি লিটার পানিতে) এবং এটি প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর গিয়ে কার্বারাইল (সেভিন ৮৫ SP বা এ জাতীয় কীটনাশক ২ গ্রাম/ প্রতি লিটার পানিতে) মিশিয়ে আক্রান্ত অংশে স্প্রে করতে হবে। ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার এভাবে স্প্রে করলে এ পোকা সম্পূর্ণভাবে দমন করা সম্ভব। গাছের গোড়ার চারদিকের মাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে এল্ড্রিন ১০ গ্রাম মিশিয়ে দিলে ডিম ধ্বংস হবে। গাছের গোড়া পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে আম বাগানে মিলিবাগ বা ছাতরা পোকার ডিম মারা যাবে। এরপর গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সূর্যের তাপে আলগা করে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ আমের মুকুল ঝরা প্রতিরোধে করণীয়
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021