Skip to content

বাংলাদেশে এভোক্যাডো চাষের সম্ভাবনা

ভোক্যাডো পশ্চিমা দেশের বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। স্বাদে ও গন্ধে আকর্ষণীয় নয়, কিন্তু এর বিশেষ গুণের কারণে এই ফল মধ্য আমেরিকাতে বেশ সুপরিচিত। বাংলাদেশে এভোক্যাডোর চাষের মাধ্যমে এর উপকারি অংশগুলোকে মানবকল্যাণে কাজে লাগানো যেতে পারে। এই ফলে প্রচুর তেল থাকে, কোনো কোনো বিশেষ জাতের ফলের ৩০ ভাগই তেল। এই ফলে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ তুলনামূলক কম। ডায়েবেটিস রোগীদের জন্যে এই ফল বিশেষভাবে কার্যকরী।এর শাস ও তেলের আধিক্যের কারণে একে অনেকে মাখন ফল হিসেবে আখ্যায়িত করে। পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশেও এর চাষ সফল হয়েছে।

এভোক্যাডো ইংরেজিতে Alligator Pear নামে পরিচিত। মেক্সিকো থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এর উৎপত্তিস্থান। উৎপত্তি, জলবায়ুগত ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে একে তিনটি গোত্রে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।

এভোক্যাডো’র যত গুণ

  • উচ্চ ফ্যাট এবং প্রচুর ভিটামিনসমৃদ্ধ ফল।
  • তেল মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত সহায়ক।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি দীর্ঘস্থায়ী করে।
  • হাড়ের ক্ষয় রোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • শরীরের কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
  • এভোক্যাডো তেলে প্রায় সব প্রকার ভিটামিন থাকায় এটি চুলের জন্য অতিশয় কার্যকর। বিশেষ করে ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-এ, যা চুলের গোড়া মজবুত করে ও চুল গজাতে সহায়তা করে। এই তেল চুল ও ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করা যায়।
এভোক্যাডোর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ

এভোক্যাডোর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ

আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং মাটি এভোকাডো চাষের জন্য উপযোগী। এভোক্যাডোর চারা যে কোন নার্সারীতে খোঁজ করলে ৩০০-৫০০ টাকা বা এর চেয়ে কম মূল্যে সহজেই পেয়ে যাবেন।

মেক্সিকান – এই জাতের ফল ছোট হয়, ২৫০ গ্রামেরও কম, ফলের ত্বক পাতলা ও মসৃণ, ৬-৭ মাসে পাকে, বীজ বড় ও শাঁস থেকে আলাদা হয়ে যায়, শাঁসে সর্বাধিক ৩০ ভাগ তেল বিদ্যমান, গাছ মাইনাসের নিচেও তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এর উৎপত্তি মেক্সিকো।

আরও পড়ূনঃ ছাদে খুব সহজেই ভিয়েতনামী জাতের নারিকেল চাষ

গুয়াতেমালান – এর ফল মেক্সিকানের চেয়ে বড় হয়, প্রা ৪০০-৮০০ গ্রাম, পুরু ত্বক, ছোট বীজ, ৯-১০ মাসে পাকে, ৮-১৫ ভাগ তেল থাকে। এর উৎপত্তিস্থল গুয়াতেমালার পার্বত্য অঞ্চল।

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান – বড় ফল, মসৃণ ত্বক, ৬-৮ মাসে ফল পাকে, বীজ বড়, তেল মাত্র ৩-১০ ভাগ, নিম্ন তাপমাত্রায় গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মধ্য আমেরিকার নিম্নভূমি এলাকা এর উৎপত্তিস্থল।

বিভিন্ন গোত্রের সংকরায়নের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট জাতের এভোক্যাডো সৃষ্টি হয়েছে।

জাত

ফুয়ার্টে- পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত জাত। মেক্সিকান ও গুয়াতেমালান জাতের সংকর। ফল সবুজ ও নাশপাতির আকারে। ওজনে ৩০০ গ্রাম। ফলে ২৬% তেল থাকে।

হাশ – গুয়াতেমালান জাত, ফল গোলাকার ও পাকা অবস্থায় বেগুনী, ওজনে ২৫০ গ্রাম হয়ে থাকে।

লুলা – গুয়াতেমালান ও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জাতের সংকর। নাশপাতির আকার, ত্বক মসৃণ ও সবুজ। তেলের পরিমাণ ১২-১৫%।  এ ধরণের গাছ দ্রুত বাড়ে ও উচ্চ ফলনশীল।

পলক – ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জাতের। ফল ৮০০-১৪০০ গ্রাম হয়ে থাকে। তেলের পরিমাণ ৩-৫%।  নিরক্ষীয় এলাকার আর্দ্র জলবায়ুতে ভাল জন্মে।

জলবায়ু ও মাটি

বাংলাদেশের জলবায়ু এভোক্যাডোর জন্য উপযোগী প্রমাণ হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার রাইখালী ও মধুপুরে মিশনারীদের খামারে লাগানো গাছ ফল ধারণ করছে। এভোক্যাডোর জন্যে মাটির নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল থাকা জরুরী। নইলে শিকড় পচা রোগ হতে পারে। বৃষ্টিপাতের আধিক্যতা তেমন ক্ষতি করে না।

Avocado

এভোক্যাডো বীজসহ

চারা উৎপাদন

বীজ, শাখাকলম, অঙ্গ ও কুড়ি সংযোজন করে এভোক্যাডোর বংশবিস্তার সম্ভব। বীজের অঙ্কুরণ ক্ষমতা ভাল না তেমন। বীজের উপরে ১ সেন্টিমিটারের বেশি মাটি দেওয়া উচিত নয়। বীজ রোপনের পূর্বে উপরের আশ সরিয়ে নিলে দ্রুত অঙ্কুরণ হয়। বীজ লম্বালম্বি ৪-৫ টুকরো করে প্রত্যেক ভাগ থেকেই চারা তৈরি হয়। অবশ্য প্রত্যেক টুকরোয় ভ্রুণের অংশ থাকতে হবে। অযৌন পদ্ধতিতেই মূলত এর বংশবিস্তার বাণিজ্যিকভাবে স্বীকৃত। শাখাকলম করতে পাতাসহ নিতে হয়। অঙ্গ সংযোজনে ভিনিয়ার ও ক্লেফট পদ্ধতি ও কুড়ি সংযোজনে বর্ণ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

উৎপাদন পদ্ধতি

বাগানে বাণিজ্যিকভাবে এভোক্যাডো চাষের ক্ষেত্রে ৯-১০ মিটার দূরে দূরে চারা রোপন করতে হয়। গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপনের জন্যে ৫০ সেন্টিমিটার গভীর ও ১ মিটার চওড়া গর্ত করে সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরাট করতে হবে। গর্ত প্রতি ২-৩ টুকরা গোবর এবং ৩০০ গ্রাম টিএসপি মেশানো যেতে পারে। উপরের অংশে উঁচু করে দিতে হবে, যেন পানি না জমে। চারা রোপনের ২ সপ্তাহ পর চারার গোড়ার মাটির সাথে ২০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া ও মিউরেট অব পটাশ মিশিয়ে দিতে হবে।

সার ও সেচ

পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি গাছে বছরে ৫০০ গ্রামহারে ইউরিয়া ও ৩০০ গ্রাম করে টিএসপি ও মিউরেট অব পটাশ প্রয়োগ করা যেতে পারে। পাঁচ বছর পর সারের পরিমাণ ক্রমে বাড়িয়ে দিতে হবে। বছরে প্রতি গাছে ৩-৪ টুকরা গোবর প্রয়োগ করা উচিত।

এসব সার দুই কিস্তিতে ফেব্রুয়ারি-মার্চো অক্টোবর-নভেম্বরে গোড়ার চতুর্দিকে মিশিয়ে দিতে হবে। এভোক্যাডোতে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে শুকনো মওসুমে সেচ দিলে উপকার পাবেন। চারাগাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্যে সেচ প্রয়োজন।

পরিচর্যা

গাছের গোড়ার মাটি গভীরভাবে কোপানো উচিত না। গাছের আকৃতি সুন্দর রাখতে ছাটাই রাখার প্রয়োজন নেই। উর্ধ্বমুখী জাত্র বীজের চারার প্রধাণ কাণ্ড এক মিটার উপরে কেটে দিলে ডালপালা ছড়িয়ে বিস্তার লাভ করে।

ফল সংগ্রহ

বীজের গাছ ৫-৬ বছরে ফল ধারণ করে। কোনো কোনো জাতে ফল ধারণ অনিয়মিত। চক্রাকারে গাছের কান্ডের ছাল তুলে নিলে এসব গাছে বেশি ফল পাওয়া যায়। পাকা ফল অনেকদিন গাছে ঝুলে থাকে। পরিণত হয়েছে অথচ পাকেনি এমন অবস্থায় পেড়ে ২০℃-২৫℃ তাপমাত্রায় সপ্তাহ খানেক রেখে দিলে ফল পেকে যায়, ৫০℃ তাপমাত্রায় পাকাতে মাসখানেক লেগে যায়

Ahmed Imran Halimi
Follow Me