চাষব্যবস্থায় কীটনাশকের ব্যবহার অপরিহার্য। দিন দিন রাসায়নিক কীটনাশকের পাশাপাশি জৈব কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েই চলছে। ঘরে বানানো জৈব কীটনাশক তৈরির আজকের পর্বে আমরা গোলমরিচ ও ধনিয়ার প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার জানব।
জৈব কীটনাশক – গোলমরিচ
প্রধান উপকরণ
১) পরিষ্কার পাত্র,
২) পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি,
৩) গোলমরিচ
প্রণালী
ক) একটি পরিষ্কার পাত্রে ১ লিটার পানি নিয়ে তাতে ৫০গ্রাম গোলমরিচ ১২ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
খ) ১২ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর পানি থেকে শুধু গোলমরিচ তুলে নিয়ে ভালোভাবে বেটে/ পেস্ট করে, সেই পেস্ট/ বাটা গোলমরিচ আবার ঐ পানির সাথে মেশাতে হবে।
গ) এরপর দ্রবণটিকে ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে সাথে আরও ৩ লিটার পানি যোগ করে ভালোভাবে ঝাকিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবে গোলমরিচের কীটনাশক।
ঘ) এখন এটি সাথে সাথেই বাগানে স্প্রে করার জন্য প্রস্তুত ।
প্রয়োগ সময়
সন্ধ্যাবেলা।
ব্যবহার ও উপকারিতা
এটি স্প্রে করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এর অতুলনীয় কার্যকারিতা দেখতে পাবেন। বাগানের যাবতীয় ক্ষতিকর পোকা দমন করে।
ক) মিলিবাগ, জাবপোকা দমন করে।
খ) বাগান পিঁপড়ামুক্ত থাকে।
গ) মথ ও শুঁয়োপোকা দমন করে।
ঘ) ঘরোয়া মাছি দমন করে।
ঙ) তুলা গাছের লাল বাগপোকা(red cotton bug) দমন করে।
চ) আটা/ সুজি খাদক লালপোকা (Red flour beetle) দমন করে।
ছ) ভুট্টা শস্যের হাতিপোকা (maize weevil), ইত্যাদি পোকা দমনে ম্যালাথায়ন গ্রুপের কীটনাশক থেকে বেশি কার্যকর। ভুট্টা শস্য সংরক্ষণে ভূমিকা অনন্য।
জ) গাছের পাতায় বা অন্যান্য অংশে পোকামাকড়ের ডিমপাড়া ব্যহত করে, ডিম/ লার্ভা নষ্ট করে ফেলে।
ঝ) এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্ট (anti-bacterial agent) হিসেবে কাজ করে।
ঞ) এন্টিফাঙ্গাল এজেন্ট (anti-fungal agent) হিসেবে কাজ করে।
ট) কিছু কিছু রাসায়নিক কীটনাশক থেকে কম ক্ষতিকর ও অধিক কার্যকারিতা দেখায়।
ঠ) বাগান ও গাছকে গৃহপালিত পশুপাখির অযাচিত স্পর্শ থেকে মুক্ত রাখে ও সুরক্ষিত রাখে।
ড) পরিবেশে সহজে ভেঙে যায় (biodegradable) বা নষ্ট হয়ে যায় তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় না। পরিবেশ বান্ধব।
ঢ) রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার না করেই স্বাস্থ্যকর ও শতভাগ জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়।
আগের পর্ব পড়ুনঃ ঘরোয়া পরিবেশে প্রস্তুত করুন জৈব কীটনাশক – পর্ব ২
সতর্কতা
ক) যেহেতু জৈবিক প্রক্রিয়ায় বা প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক তৈরী করা হচ্ছে সেহেতু মাটির পাত্র ব্যবহার করলে ভালো হয়।
খ) বিশুদ্ধ পানিতে কোনোরুপ ক্ষতিকর পদার্থ, অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা আয়ন দ্রবীভুত থাকবে না।
গ) স্প্রেয়ারের স্প্রে নলের ছিদ্রপথে যেন আটকে না যায় তাই মিশ্রণটিকে খুব ভালোভাবে ছেঁকে তারপর স্প্রেয়ারে ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) সরাসরি রোদে বা প্রখর সূর্যালোকে এটি প্রয়োগ না করা গাছের জন্য ভালো।
জৈব কীটনাশক – ধনিয়া
প্রধান উপকরণ
১) পরিষ্কার পাত্র,
২) পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি,
৩) ধনিয়া পাতা
প্রণালী
ক) শিকড়বিহীন ৫০০ গ্রাম ধনিয়াপাতা নিয়ে ভালোভাবে বেটে নিতে হবে।
খ) এরপর একটি পরিষ্কার পাতিলে বাটা ধনিয়া পাতার সাথে ৫০০মিলিলিটার পানি মেশাবেন।
গ) তারপর মিশ্রণটিকে ১০মিনিট চুলার কম আঁচে ফুটিয়ে নিবেন।
গ) এরপর মিশ্রণটি চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করবেন।
ঘ) ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালোভাবে ছেঁকে নিলেই প্রস্তুত হয়ে যাবে ধনিয়া পাতার কীটনাশক।
ঙ) এখন তা সাথে সাথেই বাগানে প্রয়োগ করার উপযোগী হয়ে গেছে।
প্রয়োগ সময়
প্রখর রোদ ছাড়া দিনের যেকোনো সময়।
ব্যবহার ও উপকারিতা
এফিড বা জাবপোকা,ও মাইটস বা মাকড় এর আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।
ক) নির্দিষ্ট পোকা দমন করা যায়, নির্দিষ্ট প্রজাতির পোকা ছাড়া অন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা কম থাকে।
খ) রাসায়নিক কীটনাশক থেকে কম ক্ষতিকর।
গ) পরিবেশে সহজে ভেঙে যায় (biodegradable) বা নষ্ট হয়ে যায় তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় না। পরিবেশ বান্ধব।
ঘ) রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার না করেই স্বাস্থ্যকর ও শতভাগ জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়।
আগের পর্ব পড়ুনঃ ঘরোয়া পরিবেশে প্রস্তুত করুন জৈব কীটনাশক – পর্ব ১
সতর্কতা
ক) যেহেতু জৈবিক প্রক্রিয়ায় বা প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক তৈরী করা হচ্ছে সেহেতু মাটির পাত্র ব্যবহার করলে ভালো হয়।
খ) বিশুদ্ধ পানিতে কোনোরুপ ক্ষতিকর পদার্থ, অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা আয়ন দ্রবীভুত থাকবে না।
গ) স্প্রেয়ারের স্প্রে নলের ছিদ্রপথে যেন আটকে না যায় তাই মিশ্রণটিকে খুব ভালোভাবে ছেঁকে তারপর স্প্রেয়ারে ব্যবহার করতে হবে।
রেফারেন্সঃ https://www.cabi.org/isc/abstract/19881106311
- কার্তিক মাসের কৃষি - October 19, 2020
- আশ্বিন মাসের কৃষি - September 19, 2020
- ভাদ্র মাসের কৃষি - August 23, 2020