ছাদবাগান ও ব্যক্তিগত বাগানে জৈব কীটনাশক ব্যবহারের উপযোগিতা ব্যাপক। একে তো ঘরেই প্রস্তুত করা যায় এসব জৈব কীটনাশক, অন্যদিকে রাসায়নিক কীটনাশকের মত এরা ক্ষতিকরও নয়। ঘরে বানানো জৈব কীটনাশক তৈরির টিপস বিষয়ক বিশেষ পর্বের আজকের লেখায় আমরা তুলসী ও তামাকের প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার সম্বন্ধে জানব।
জৈব কীটনাশক – তুলসী
প্রধান উপকরণ
১) পরিষ্কার পাত্র,
২) পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি,
৩) তুলসী,
৪) সাবান/ সাবান গুঁড়া/ তরল সাবান ( সাধারণ সাবান, কাপড়ধোয়ার সাবান, থালা-বাসন পরিষ্কার করার শুকনো/ তরল সাবান, শ্যাম্পু, হ্যান্ডসোপ ইত্যাদি)।
প্রণালী
ক) ১০০ গ্রাম তুলসী পাতা ভালোভাবে বেটে/পেস্ট করে একটি পরিষ্কার পাত্রে নিতে হবে।
খ) ৪ লিটার পানিতে বাটা/পেস্ট তুলসী পাতা ভালোভাবে মিশিয়ে ১২ঘন্টা রেখে দিতে হবে।
গ) এরপর দ্রবণটিকে ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে।
ঘ) ছাঁকার পর প্রাপ্ত দ্রবণটির সাথে ৫গ্রাম গুঁড়া সাবান অথবা ৫চা চামুচ তরল সাবান যোগ করে ভালোভাবে ঝাকিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবে তুলসী পাতার তৈরি কীটনাশক।
ঙ) এখন এটি সাথে সাথেই বাগানে স্প্রে করার জন্য প্রস্তুত ।
প্রয়োগ সময়
সকালে বা দিনের যেকোনো সময় স্প্রে করতে পারবেন।
![ঘরোয়া পরিবেশে প্রস্তুত করুন জৈব কীটনাশক - পর্ব ৪ 2 Tulsi Flower 1](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/07/Tulsi-Flower-1.jpg)
ব্যবহার ও উপকারিতা
ক) ফলের মাছি/ ভনভনে মাছি (blowfly) দুর করা যায়।
খ) লেদা পোকা যেগুলো গাছের পাতা খায় সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
গ) তুলসী বাগানে বেশি থাকলে বাগ পোকা (bug) ও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ঘ) লাল মাকড় যেগুলো গোলাপ ফুল গাছে আক্রমণ করে সেগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
ঙ) ধানের হাতি পোকা (rice weevil) নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
চ) নির্দিষ্ট পোকা দমন করা যায়, নির্দিষ্ট প্রজাতির পোকা ছাড়া অন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা কম থাকে।
ছ) কিছু কিছু রাসায়নিক কীটনাশক থেকে কম ক্ষতিকর ও অধিক কার্যকারিতা দেখায়।
জ) পরিবেশে সহজে ভেঙে যায় (biodegradable) বা নষ্ট হয়ে যায় তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় না। পরিবেশ বান্ধব।
ঝ) রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার না করেই স্বাস্থ্যকর ও শতভাগ জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়।
সতর্কতা
ক) যেহেতু জৈবিক প্রক্রিয়ায় বা প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক তৈরী করা হচ্ছে সেহেতু মাটির পাত্র ব্যবহার করলে ভালো হয়।
খ) বিশুদ্ধ পানিতে কোনোরুপ ক্ষতিকর পদার্থ, অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা আয়ন দ্রবীভুত থাকবে না।
গ) স্প্রেয়ারের স্প্রে নলের ছিদ্রপথে যেন আটকে না যায় তাই মিশ্রণটিকে খুব ভালোভাবে ছেঁকে তারপর স্প্রেয়ারে ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) সরাসরি রোদে বা প্রখর সূর্যালোকে এটি প্রয়োগ না করা গাছের জন্য ভালো।
আগের পর্ব পড়ুনঃ ঘরোয়া পরিবেশে প্রস্তুত করুন জৈব কীটনাশক – পর্ব ৩
জৈব কীটনাশক – তামাক পাতা
প্রধান উপকরণ
১) পরিষ্কার পাত্র,
২) পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি,
৩) তামাক পাতা,
৪) সাবান/ সাবান গুঁড়া/ তরল সাবান ( সাধারণ সাবান, কাপড়ধোয়ার সাবান, থালা-বাসন পরিষ্কার করার শুকনো/ তরল সাবান, শ্যাম্পু, হ্যান্ডসোপ ইত্যাদি)।
প্রণালী
ক) স্থানীয় কাঁচা-বাজার বা পানের দোকান থেকে তামাক পাতা সংগ্রহ করবেন। ৫০ গ্রাম তামাক পাতা ১ লিটার পানিতে ১২ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
খ) অপর একটি পরিষ্কার পাত্রে ৫গ্রাম সাবান গুঁড়া/ ৫ চামুচ তরল সাবান ঐ ১লিটার পানির থেকে কিছু পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
গ) ১২ ঘন্টা পর প্রথম মিশ্রণটি থেকে তামাক পাতা ছেঁকে আলাদা করে শুধু দ্রবণ/পানি নিতে হবে।
ঘ) তামাক পাতার দ্রবণ/ পানিতে সাবান পানি ভালোভাবে মেশালে প্রস্তুত হয়ে যাবে তামাক পাতার জৈব কীটনাশক যা সাথে সাথেই বাগানে প্রয়োগ করার উপযোগী ।
প্রয়োগ সময়
প্রখর রোদ ছাড়া দিনের যেকোনো সময়।
![ঘরোয়া পরিবেশে প্রস্তুত করুন জৈব কীটনাশক - পর্ব ৪ 3 tobacco 1](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/07/tobacco-1-1024x576.jpg)
ব্যবহার ও উপকারিতা
ক) এফিড বা জাবপোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।
খ) চোষক পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।
গ) বিটল বর্গের ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।
ঘ) স্লাগ (slug – খোলসহীন শামুক জাতীয়/ মলাস্কা পর্বভুক্ত এক জাতীয় প্রানী) আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।
ঙ) নির্দিষ্ট পোকা দমন করা যায়, নির্দিষ্ট প্রজাতির পোকা ছাড়া অন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা কম থাকে।
চ) এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্ট (anti-bacterial agent) হিসেবে কাজ করে।
ছ) এন্টিফাঙ্গাল এজেন্ট (anti-fungal agent) হিসেবে কাজ করে।
জ) তামাক পাতা থেকে তৈরী তেল আগাছানিধক হিসেবে কাজ করে।
ঝ) রাসায়নিক কীটনাশক থেকে কম ক্ষতিকর। পরিবেশে সহজে ভেঙে যায় (biodegradable) বা নষ্ট হয়ে যায় তাই পরিবেশের ক্ষতি হয় না। পরিবেশ বান্ধব।
ঞ) রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার না করেই স্বাস্থ্যকর ও শতভাগ জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়।
সতর্কতা
ক) এটি ব্যবহারে বাগানে দূর্গন্ধ ছড়াতে পারে তাই, দূর্গন্ধ এড়াতে চেষ্টা করবেন সন্ধ্যাবেলা স্প্রে করতে।
খ) স্প্রে করার সময় মাস্ক ও হাত মোজা ব্যবহার করতে পারেন।
গ) যেহেতু জৈবিক প্রক্রিয়ায় বা প্রাকৃতিকভাবে কীটনাশক তৈরী করা হচ্ছে সেহেতু মাটির পাত্র ব্যবহার করলে ভালো হয়।
ঘ) বিশুদ্ধ পানিতে কোনোরুপ ক্ষতিকর পদার্থ, অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা আয়ন দ্রবীভুত থাকবে না।
ঙ) স্প্রেয়ারের স্প্রে নলের ছিদ্রপথে যেন আটকে না যায় তাই মিশ্রণটিকে খুব ভালোভাবে ছেঁকে তারপর স্প্রেয়ারে ব্যবহার করতে হবে।
চ) তামাক পরিবারের গাছ, আলু, বেগুন, টমেটো ইত্যাদি গাছে এই কীটনাশক প্রয়োগ না করাই ভালো। কারণ, সমপরিবারের গাছে এটি প্রয়োগ করা হলে ঐ পরিবারের সকল গাছ কমন(common) রোগবহণকারী জীবাণু তার জীবনচক্র সম্পন্ন করার সুযোগ পায়। অর্থাৎ, নিয়মিত জীবানু বহন করার সুযোগ পেয়ে গাছ রোগাক্রন্ত হয়। (যেমন- টোবাকো মোজাইক ভাইরাস ইত্যাদির সংক্রমণ হতে পারে।)
ছ) ক্ষতিকর পোকার উপদ্রব যেখানে সেখানেই কেবল এটি ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় আক্রমণহীন সুস্থ গাছে এটি ব্যবহার করলে সেখানে উপকারী পোকা আসতে পারে না। বাগানে বিটল বর্গের উপকারী পোকা যেমন- লেডি বার্ড বিটল (lady bug) পোকার উপস্থিতিতে এটি প্রয়োগ করা উচিত না।
জ) ফুল ফোটার পর প্রয়োগ করা উচিত নয়।
আগের পর্ব পড়তেঃ ঘরোয়া পরিবেশে প্রস্তুত করুন জৈব কীটনাশক – পর্ব ২
- কার্তিক মাসের কৃষি - October 19, 2020
- আশ্বিন মাসের কৃষি - September 19, 2020
- ভাদ্র মাসের কৃষি - August 23, 2020