ছোট বড় সকলের খুব পছন্দের মুখরোচক ফলগুলোর মধ্যে একটি হল আমড়া। মুখের অরুচি ভাব দূর করতে ও ক্ষুধা বাড়াতে আমড়ার জুড়ি নাই! বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ভাইরাস জনিত রোগ সহ অন্যান্য রোগ দূরীকরণে আমড়া পথ্যর মত কাজ করে। আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। এছাড়া ও ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই রয়েছে। এরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আয়রন রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া ও আমড়া গাছের। ছাল চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
পুষ্টিমান
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় রয়েছে,
১) ১.১ গ্রাম প্রোটিন,
২) ১৫ গ্রাম শ্বেতসার,
৩) .১০ গ্রাম স্নেহ পদার্থ,
৪) ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারাটিন,
৫) .২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন,
৬) .০৪ গ্রাম রিবোফ্লেভিন,
৭) ৯২ মিলি ভিটামিন সি,
8) ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,
৯) ৩.৯ মিলি আয়রন,
১০) ০.৬ গ্রাম খনিজ ও মিনারেল।
আমড়ার ব্যবহার
আমড়া দিয়ে ভর্তা, আচার, চাটনি, জেলি, শরবত বানানো যায়। এছাড়াও টক তরকারি রান্না করা সম্ভব। এগুলো খুবই সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবার।
আমড়া চাষের সময়
বাংলাদেশে আমড়া ফলনের প্রধান সময় শরৎকাল। কিন্তু বারোমাসি জাতের ফলন সারাবছরই হয়।
আমড়ার জাত
বাংলাদেশে উদ্ভাবিত একটি বারোমাসি জাত হল বারি আমড়া-১।
বারোমাসি আমড়ায় এপ্রিল-মে মাসে ফুলের আগমন ঘটে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ফুল আসতে থাকে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে গাছে পাকা ফল পাওয়া যায়। বারোমাসি জাতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ ব্যাতিত বছরের অন্যান্য ১০ মাসে গাছে ফুল ও ফল পাওয়া যায়। গাছের বয়স একবছর হলেই ফল ধরতে শুরু করে।বয়স যতই বাড়ে ফলন ও বাড়ে! একটি চার বছর বয়সী আমড়া গাছে২০০/২৫০ আমড়া পাওয়া যায়।বারোমাসি আমড়া টকমিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়।
মাটি
আমড়া চাষের জন্য উপযোগী মাটি হল উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি।
ছাদে চাষের পদ্ধতি
ক) ছাদে আমড়া চাষের জন্য ড্রাম বা টব ব্যবহার করা হয়। ২০/২৫ ইঞ্চি রং যুক্ত ড্রাম বা টব নিতে হবে। ড্রাম বা টব এর নিচে ৩/৫ টা ছিদ্র করে নিতে হবে যাতে পানি গাছের গোড়ায় জমতে না পারে।
খ) মাটি প্রস্তুত করতে ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি,১ভাগ গোবর,২কেজি কাঠের ছাই,২০০ গ্রাম হাড়ের গঠন ড়া মিশিয়ে নিতে হবে এরপর ড্রাম বা টব এ ১০ থেকে ১২ দিন রাখতে হবে। ১০/১২ দিন পর মাটি খুঁচিয়ে দিয়ে ৪-৫ দিন একি ভাবে রাখতে হবে।
গ) মাটি ঝরঝরে হলে চারা কলম রোপন করতে হবে। মাটি চারা থেকে আলাদা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঘ) গাছের গোড়ায় পানি যাতে না জমে তাই মাটি বেশি দিয়ে উপরে উঁচু করে নিতে হবে।
চারাগাছ সোজা রাখতে লম্বা লাঠি দিয়ে গাছকে বেঁধে দিতে হবে।
ঙ) গাছকে সবসময় সূর্যের আলোর নিচে রাখতে হবে।
চ) বর্ষার শেষে চারা লাগানো উচিত কারন আমড়া গাছ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না।
দ্বিতীয় বছরের বর্ষার শেষদিকে একবার টবের গা ঘেঁষে ২ ইঞ্চি প্রস্থে ও ৮ ইঞ্চি গভীর করে মাটি ফেলে দিতে হবে। সেই জায়গায় নতুন সারযুক্ত মাটি দিয়ে ভরাট করে নিতে হবে। একি নিয়ম প্রতি বছর অনুসরণ করতে হবে।
ছ) বীজ থেকে চারা তৈরি করে ও টবে চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে ২-৩ বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। টবে লাগানো র জন্য অবশ্য কলমের চারাই বেশি উপযোগী।
রোগজীবাণু ও পোকা মাকড় দমন
ক) আমড়া গাছে ছোট মাকড়সার আক্রমণ হয় এতে পাতা কুঁকড়ে যায় এছাড়াও ফলে মাছি পোকার আক্রমণ দেখা যায় ।Podontia 14-punctata কীটনাশক স্প্রে করে দিতে হবে।
খ) বিষ টোপ ব্যবহার করতে হবে।
গ) Tilt250 EC ছত্রাকনাশক হিসেবে স্প্রে করে দিতে হবে যাতে বর্ষাকালে ছত্রাকের আক্রমণ না ঘটে।
বারোমাসি আমড়া চাষ করে আমরা অনেক সুফল পেতে পারি। তাই ছাদে বাগান করার জন্য অন্যান্য ফল এর পাশাপাশি বারোমাসি আমড়া চাষ করার কথা বিবেচনায় রাখতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ছাদে ড্রাগন ফল চাষপদ্ধতি
- জেনে নিন গোল মরিচের ১০ টি চমৎকার উপকারিতা - September 11, 2020
- মালবেরি বা তুঁত চাষ পদ্ধতি - May 23, 2020
- ছাদবাগানে আম চাষ – আম গাছের জোড় কলম পদ্ধতি - March 20, 2020