গোল মরিচ খুব পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি মশলা। রান্নায় স্বাদ আনতে এর জুড়ি নাই। গরম সিদ্ধ ডিমে একটু অন্যরকম এবং মজাদার স্বাদ আনতে চাইলে লবণ এর সাথে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়াই যথেষ্ট। Piper nigrum গাছের ফল হল গোলমরিচ।
আমরা মনের অজান্তেই, এর কোন প্রকার উপকারিতা সম্পর্কে না জেনেও অনেক সময় গোলমরিচ খাই। আপনি জানেন কি? গোলমরিচের আছে অসংখ্য গুনাবলি। যেমন- গোলমরিচ ওজন কমাতে সাহায্য করে, এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি গুনাবলি। এছাড়াও গোলমরিচের আরও চমৎকার উপকারিতা আছে যা সম্পর্কে আমরা সবার অজানা।
চলুন জেনে নেওয়া সেরকমই ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে।
গোলমরিচের গুরুত্বপূর্ণ অজানা কিছু উপকারিতা
স্বাদ বৃদ্ধি
লিখার শুরুতেই এই বিষয়ে অল্পবিস্তর বলা হয়েছে। মুখের স্বাদ বৃদ্ধিতে আমরা লবণ খাই। কিন্তু আপনি যদি লবনের পাশাপাশি গোলমরিচ যোগ করেন তবে স্বাদ বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে।
মজার বিষয় হল লবণ বেশি খেলে দেহের ক্ষতি হতে পারে যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি, কিন্তু গোলমরিচের এরকম কোন ক্ষতিকর দিক নেই। বরং এটি খাবার হজমে সহায়তা করে। দেহ সহজে খাবারের পুষ্টি গ্রহন করে নেয়।
ধূমপান আসক্তি হ্রাস
জার্নাল অফ অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লেমেন্টারি মেডিসিন তাদের ছোট একটা স্টাডির মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছে যে যাদের ধূমপানে আসক্তি আছে, তারা গোলমরিচের ধোঁওয়া দুই মিনিটের জন্য গ্রহন করেছে এতে তাদের নিকটিনের প্রতি আসক্তি খুব তাড়াতাড়ি কমতে থাকে, পরবর্তীতে সিগারেট গ্রহন ও কমে গিয়েছে।
আপনি যদি ধূমপায়ী হন এবং আসক্তি কমাতে চান তবে এখনি চেষ্টা করে দেখুন-
- একটি বাটিতে হাফ কাপ গোল মরিচের গুড়ো নিন।
- আপনার নাক গুঁড়োর ঠিক উপর বরাবর রাখুন এবং ২ মিনিটের জন্য বারবার লম্বা শ্বাস নিন।
নার্ভাস সিস্টেমের উন্নতি
ম্যাককরমিক সাইন্স ইন্সিটিউট এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, গোল মরিচের নির্যাস স্ট্রোকের রোগীর দেহের ভেতরের ফোলা ভাব কমায়। কারণ এই নির্যাসটি তাদের মস্তিস্কের একটি নির্দিষ্ট অংশকে সচল করে তুলে।
এছাড়াও বায়োঅরগানিক অ্যান্ড মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি ২০১২ সালের গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, গোল মরিচের একটি অন্যতম সক্রিয় উপাদান পাইপেরাইন এক ধরণের খারাপ এনজাইমের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে। কারণ এটি মস্তিকের নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামাইন কমিয়ে ফেলে। যা খুবই ক্ষতিকর।
আপনাদের জন্য দারুণ একটি টিপস দিচ্ছি! ঘরে বসে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। গোলমরিচের এসেনশিয়াল তেল অর্থাৎ নির্যাসকে দুইভাবে গ্রহণ করতে পারেন, একটি হল সরাসরি উপায় অথবা একটি টিস্যুতে সামান্য পরিমাণে ঢেলে নিন। তারপর সেটি নাক দিয়ে শুকতে থাকুন। এই পদ্ধতি দিনে একবার প্রয়োগ করাই যথেষ্ট।
ত্বকের কালো দাগ কমায়
গোলমরিচের দানাদার ভাবের জন্য এটি ত্বক পরিস্কারক হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। এটি এক্সফলিয়াটর হিসাবে খুব চমৎকারভাবে আপনার ত্বকের মৃত কোষগুলো তুলে ত্বককে করে তুলবে সজীব ও প্রাণবন্ত। এছাড়াও ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ থাকলে তা কমাতে সাহায্য করবে।
কারণ এক্সফলিয়াটর হচ্ছে দানাদার বস্তু যা আপনার ত্বকে ঘর্ষণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ফলে ত্বকে অক্সিজেন পৌছায় পাশাপাশি ত্বকে পুষ্টি যোগায়।
গ্রিনিকালচার টিপসঃ কিছু গোলমরিচ যতটা সম্ভব মিহি গুঁড়ো করে নিন । সামান্য একটু নিয়ে আপনার প্রিয় ফেসপ্যাকে মিশিয়ে নিন। এবার আলতো করে আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে হাল্কা গরম পানি দিয়ে ধীরে ধীরে দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে সার্কুলার মোশনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তুলে ফেলুন।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ
গোলমরিচের প্রধান উপাদান হল পাইপেরাইন যা তরকারিতে স্বাদ আনতে ভূমিকা পালনের পাশাপাশি এর রয়েছে অনন্য গুনাবলি। এটি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ল্যাব গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এটি স্তনের স্টেম কোষগুলো বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে। এছাড়াও গোলমরিচে রয়েছে কারকুমিন যা স্তনে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে।
গ্রিনিকালচার টিপসঃ সেরকম কিছুইনা! আপনার খাবারের সাথে গোলমরিচ পরিমাণ মত মিশিয়ে গ্রহণ করুন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি
গোলমরিচ শুধুমাত্র রান্নার স্বাদই বৃদ্ধি করেনা বরং এটি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। কারণ আপনি যখন গোলমরিচ খাবেন তখন আপনার মস্তিক পাকস্থলিকে এক প্রকার সংকেত প্রদান করবে যা বেশি পরিমাণে হায়ড্রক্লরিক এসিড নিঃসরণে সহায়তা করবে।
ফলে প্রোটিনসহ অন্যান্য উপাদান গুলো সহজে ভেঙ্গে যাবে এবং হজম হবে। পাকস্থলীতে বেশিক্ষণ খাদ্য থাকবেনা।
আরও পড়ুনঃ শালগমের ১০ টি উপকারিতা ও চাষপদ্ধতি
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
গোলমরিচের আরেকটি অনন্য গুন হল, এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখবে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ হলে তা কমিয়ে আনবে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি যদি হাইপারটেনশনের ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তবে গোলমরিচ গ্রহণের পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
কারকুমিনের শোষণক্ষমতা বাড়ায়
আমরা তরকারিতে হলুদ দেই যাতে করে তরকারির স্বাদ বৃদ্ধি পায় ও রং সুন্দর হয়। আপনারা জানেন কি হলুদে আছে কারকুমিন নামক উপাদান যার আছে অনেক গুন।
কিন্তু সমস্যা হল কারকুমিন ভালভাবে দেহে শোষণ হয়না। এতে করে উপকারিতাগুলো আমরা পাইনা। এর উপকারিতা যাতে আমাদের দেহ পেতে পারে সে জন্য হলুদ ও গোল মরিচ একসাথে তরকারিতে ব্যবহার ক্রতে হবে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গোলমরিচে থাকা পাইপেরাইন কারকুমিনের শোষণক্ষমতা ২০০০% বৃদ্ধি করে।
গলা ধরা, ঠাণ্ডা ভাব কমায়
অনেকসময় ঠাণ্ডা লাগলে আমাদের গলা ধরে আসে, গলা ব্যাথা হয়, কাশি ও কফ জমে। গোলমরিচ এই সকল ক্ষেত্রে মারাত্মক টনিক হিসাবে কাজ করে। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ইমিউন সিস্টেম কে সচল রাখে ও প্রদাহ কমায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
আপনি কি সব্জি ও মাংস গ্রিল করে খেতে ভালবাসেন? তবে আপনার জন্য রয়েছে একটি দুসংবাদ! গ্রিল পদ্ধতিতে তৈরি খাবার খেতে মজা হলেও এটি ক্যান্সারের জন্য দায়ি কেমিকাল আপনার দেহে তৈরি করে। ফলে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
তাই বলে কি গ্রিল করা খাবার খাওয়া ছেড়ে দিবেন? মোটেই না! গ্রিলের মশলায় মিশিয়ে নিন গোলমরিচ। কারণ কান্সাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি ক্যান্সারের জন্য দায়ী ক্যামিকাল হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইন ধ্বংস করে ফেলে।
ওজন কমায়
আপনি কি অনেক মোটা? ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নাই! ওজন কমানোর সঠিক উপায় খুঁজে পাচ্ছেননা? তাহলে গোলমরিচ খান। কারণ এর পাইপেরিন উপাদান আপনার বৃদ্ধি হতে থাকা চর্বি কোষগুলো কে ভেঙ্গে ফেলে।
গোলমরিচ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
- জেনে অবাক হবেন যে গোলমরিচ একটি মশলা না বরং এটি একটি ফল। বেরি আকৃতির ফল যা হরেক রঙের হয়ে থাকে। যেমন- সাদা,কাল, সবুজ।
- গোলমরিচ অন্যান্য মরিচের থেকে ভিন্ন। কারণ, অন্যান্য মরিচের সক্রিয় উপাদান হল ক্যাপসিসিন যা এর ঝাল বৃদ্ধি করে। অপরদিকে গোলমরিচের সক্রিয় উপাদান হল পাইপেরাইন ।
- গোলমরিচ হল ভিটামিনের খনি। দুই চা চামুচ সমপরিমাণ গোলমরিচে আছে-
- ১০ ভাগেরও বেশি ভিটামিন কে।
- ৩০ ভাগের উপর ম্যাঙ্গানিজ।
- ন্যূনতম ৫ ভাগ ফাইবার।
- ৯ ভাগ কপার।
এই হল গুণবতী গোলমরিচের চমৎকার ১০ গুনাবলি। আশা করি , নিয়মিত গোলমরিচ গ্রহণে থাকবেন সুস্থ ও সজীব। তবে গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন কারণ এর গুনাবলি নিয়ে এখন গবেষণা শেষ হয়নি।
আরও পড়ুনঃ বাদামের অসাধারণ পুষ্টিগুণ
.
- জেনে নিন গোল মরিচের ১০ টি চমৎকার উপকারিতা - September 11, 2020
- মালবেরি বা তুঁত চাষ পদ্ধতি - May 23, 2020
- ছাদবাগানে আম চাষ – আম গাছের জোড় কলম পদ্ধতি - March 20, 2020