লাউ একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু দেশীয় সবজি। বাংলাদেশের জনপ্রিয় সব শীতকালীন সবজির অন্যতম এই লাউ। লাউ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে “কদু” নামেও সুপরিচিত। লাউ গাছ লতানো উদ্ভিদ। লাউ পৃথিবীর আদিম চাষকৃত সবজির মধ্যে অন্যতম। এ্রর আদি নিবাস আফ্রিকা মহাদেশে। লাউ এর রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব অন্যান্য সবজি জাতীয় উদ্ভিদের চেয়ে বেশ কিছুটা বেশি। আমরা এই পর্বে জানব কিছু মারাত্মক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়।
লাউ এর ডাউনি মিলডিউ রোগ
লাউ এর ডাউনি মিলিডিউ একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এই রোগ মূলত লাউ গাছের পাতার মধ্যে পানি জমে থাকার কারণে ছড়ায়।
![লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল - পর্ব ১ 2 Bottle Gourd Downy Mildew](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/09/Bottle-Gourd-Downy-Mildew.jpg)
লক্ষণ
১। পাতার উপরের পৃষ্ঠে ফ্যাকাশে সবুজ থেকে হলুদ দাগ গঠন করে এবং পরে বাদামি হয়ে যায়।
২। পাতার দাগগুলি পাতার শিরা দ্বারা আবদ্ধ হয়।
৩। উচ্চ আর্দ্রতার মধ্যে পাতার নীচে বেগুনী, বদামী আঁশ গঠন করে।
৪। ভেজা বা খুব আর্দ্র অবস্থায়, রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
ডাউনি মিলডিউ যেহেতু জল জমে থাকার কারণে হয় তাই খেয়াল করতে হবে পাতার ফাঁকে যেন পানি জমে না থাকে। সবসময় গাছের নিচ থেকে পানি দিতে হবে। গাছের চারপাশে আদ্রতা দূর করতে হবে। গাছ এর চারপাশে পরিমিত বায়ু সঞ্ছালনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতি লিটার পানিতে, ১-২ গ্রাম সিকিউর বা ম্যানকোজের ২ গ্রাম বা রিডোমেল গোল্ড ২ গ্রাম মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।
লাউ এর পাউডারি মিলডিউ রোগ
পাউডারি মিলডিউ একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এই রোগ পাতার অকাল মৃত্যু ঘটায়, ফলন কমায় এবং ফলের গুণগত মান হ্রাস করে। এটি সাধারণত আর্দ্র আবহাওয়াতে আক্রমণ করে যখন তাপমাত্রা ৬৮-৮১ ডিগ্রী ফারেনহাইট থাকে। বয়স্ক পাতায় আগে আক্রমণ করে এই রোগ।
![লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল - পর্ব ১ 3 Bottle Gourd Powdry Mildew](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/09/Bottle-Gourd-Powdry-Mildew.jpg)
লক্ষণ
১। পাউডারী মিলিডিউ এর প্রথম লক্ষণ হলো পাতায় ফ্যাকাশে হলুদ দাগ দেখা দেয়।
২। পাতা উপর এবং নিচে উভইয় পাশেই সাদা পাউডারী দাগ গঠন করে এবং তা দ্রুত বড় ব্লচ (ফোঁড়া) তে পরিণত হয়। এই ব্লচ গুলি আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ পাতা, কান্ড ছেয়ে ফেলে।
৩। যখন পাউডারী মিলিডিউ গাছের বেশিরভাগ পাতাকে সংক্রমিত করে তখন গাছটি দূর্বল হয়ে যায় এবং অসময়েই ফল পেকে যায়।
প্রতিকার
মাটি পরীক্ষা করে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন প্রয়োগ কমাতে হবে। গাছের চারপাশের আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে এবং গাছের মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান রাখতে হবে যাতে করে বায়ু ভালোভাবে চলাচল করতে পারে। গাছ থেকে রোগাক্রান্ত পাতা গুলোকে কেটে ফেলতে হবে, গাছের আশে পাশে পরে থাকা ময়লা,আবর্জনা পরিস্কার রাখতে হবে।
সংক্রমণ রোধ করতে সংবেদনশীল গাছগুলোর ক্ষেত্রে সালফার ও কপার ভিত্তিক ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।ভালো ফলাফলের জন্য সংক্রমণের প্রথম দিকে পুরো গাছকে স্প্রে করতে হবে ফসল কাটার দিন পর্যন্ত ৭-১ দিনের ব্যবধানে পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
গ্রিন কিউর ফানজিসাইড সংক্রমণের প্রথম দিকে ১-২ টেবিল চামচ প্রতি গ্যালন পানির সাথে মিশিয়ে গাছের উন্মুক্ত জায়গাগুলোতে স্প্রে করতে হবে।
লাউ এর গামী স্টেম ব্লাইট রোগ
লাউ এর গামী স্টেম ব্লাইট রোগ ছত্রাকজনিত রোগ। সংক্রমিত বীজ ও মাটি দ্বারা এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। উচ্চ আর্দ্রতা অঙ্কুরোদ্গম এ সহায়তা করে।
![লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল - পর্ব ১ 4 Bottle Gourd Gummy Stem Blight](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/09/Bottle-Gourd-Gummy-Stem-Blight.jpg)
লক্ষণ
১। গামী স্টেম ব্লাইট সংক্রমণ হলে কান্ড কালো হয়ে যায় ও কান্ডের পচন ধরে।
২। কান্ড কিছুদিন পর ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায় এবং লালচে বাদামী বর্ণের আঠালো পদার্থ নিঃস্বরণ হয়।
৩। পাতায় কালচে বাদামী, আঠালো, গোল গোল দাগ দেখা যায়।
৪। কান্ড ও পাতায় প্রজননকারী ছাত্রাক বিন্দু দেখা যায়।
প্রতিকার
১। রোগমুক্ত চারা ও বীজ ব্যবহার করতে হবে ।
২। সংক্রমিত গাছ বাছাই করে তুলে ফেলতে হবে।
৩। ম্যানকোজেব অথবা ম্যানকোজেব+মেটালক্সিল যেমন, রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/লিটার হারে পানির সাথে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করতে হবে
লাউ এর রেড পাম্পকিন রোগ
উদ্ভিদ রেড পাম্পকিন বিটল বা কীট দ্বারা আক্রান্ত হয়। পোকার নিম্ফ ও পূর্ণ বয়স্ক পর্যায় উদ্ভিদের পাতা, কচি পাতা, ফল, ও ফুল এসব অংশে আক্রমণ করে থাকে। চারা এবং ফল এর বাড়ন্ত পর্যায়ে সংক্রমণ ঘটে থাকে।
![লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল - পর্ব ১ 5 Bottle Gourd Red Pumpkin Bettle](https://greeniculture.com/wp-content/uploads/2020/09/Bottle-Gourd-Red-Pumpkin-Bettle.png)
লক্ষণ
১। পূর্ণবয়স্ক পোকা গাছের সম্পূর্ণ পাতা কিনারা থেকে খেয়ে ফেলে পাতার শিরা উপশিরা রেখে দেয়।
২। ফুল ও কচি ফল এ আক্রমণ করে ।
৩। পোকা মাটির নিচের কান্ড খেয়ে ফেলে তাই গাছ নিচের দিকে ঢলে পরে পরবর্তীতে গাছ শুকিয়ে মরে যায়।
প্রতিকার
আক্রান্ত উদ্ভিদ থেকে হাত দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। উদ্ভিদের চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রমণের হার বেশি হলে পানির সাথে কার্বোফুরান জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত পোকার আগমন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পাতার নিচে শুকনা ছাই ছিটাতে হবে।
আরও পড়ুনঃ লাউ উৎপাদনের কলাকৌশল
- লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল – পর্ব ২ - September 24, 2020
- লাউয়ের বিভিন্ন রোগ-বালাই ও এর দমন কৌশল – পর্ব ১ - September 17, 2020