আপনি যদি মিলিয়ন বারের উপর ‘Back to the future’ দেখে থাকেন, তবে আপনি জানেন যে, কলার খোসা চমৎকার জ্বালানি তৈরি করে। কিন্তু আপনি যদি আপনার টাইম ট্রাভেলিং যন্ত্রে এটিকে মি. ফিউশন হিসেবে ব্যবহার না করে জ্বালানি হিসেবে আপনার বাগানে ব্যবহার করেন তাহলে আরো উপকার পাবেন। কলার চিকন খোসা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে আপনার ছোট্ট ছোট্ট সবুজ বন্ধুদের খুশি রাখতে পারেন!
কলার খোসার পুষ্টিগুণ
কলা হল সেরা খাবার, এবং কলার খোসা প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর যা আপনার সবজির প্রতি যে দুর্বলতা আছে তার অভাব পূরণ করে। এর আগে আমরা জেনেছিলাম কলার সূতার উপকারিতা।
সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হল পটাশিয়াম। পটাশিয়াম আপনার উদ্ভিদের স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। এটি ফলের কোষদেয়ালকে মজবুত রাখে। এটি ব্যবহারে উদ্ভিদের কান্ডকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মূলের উপযুক্ত বৃদ্ধিতে সহায়ক।
কলার খোসায় থাকা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খনিজ উপাদান হল ফসফরাস। এটি খুবই চমৎকার! কারণ আপনার বাগানের মাটি ফসফরাস খুবই ভালবাসে। এটি অঙ্কুরোদগম, স্বাস্থ্যকর মূল এবং ফুল ফোটাতে, পরাগরেণু তৈরিতে এবং ফল তৈরি ত্বরান্বিত করে।
কলার খোসাতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ও থাকে, এটি ভুলে গেলে চলবে না!যা আপনার বাগানের সুন্দর উন্নয়নে সাহায্য করে।কলার খোসায় নাইট্রোজেন থাকেনা। কিন্তু ক্যালসিয়াম মাটিতে পুষ্টি বাড়াতে সহায়তা করে, কারণ নাইট্রোজেন উদ্ভিদে বেশি সহজলভ্য থাকে।
কিভাবে তৈরি করবেন কলার খোসার সার
আপনার রান্নাঘর থেকে বাগানে কীভাবে এসকল চমৎকার উপাদান স্থানান্তরিত করবেন? শুধুমাত্র কলার খোসা আপনার বাগানে ব্যবহার করতে পারবেন তবে সাথে অন্য কোন উপাদান মিশিয়ে নিলে এটি আরও কার্যকরী হবে। এক্ষেত্রে কিছু কার্যকরী প্রক্রিয়া আছে। কম্পোস্ট চা অথবা শুকনো সার তৈরি করে নিন।
ক) কলার খোসার কম্পোস্ট চা তৈরি রি করতে পারেন খুবই সহজ উপায়ে। একটি জগে এই জগের ৩/৪ ভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ করে নিন ও ফ্রিজে রাখুন। যখনি আপনি কলা খাবেন কলার খোসা ঐ জগে জমা করবেন।
খ) জগটি কলার খোসা দিয়ে পূর্ণ না হয়া পর্যন্ত অথবা এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।এরপর নতুন একটি জগে তরলটি ছেঁকে নিন। কলার খোসার অবশিষ্টাংশটি রেখে দিন কারণ এটি ও কাজে লাগবে!
এই চা পুষ্টিগুণে ভরপুর। কারণ খোসার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান (পটাশিয়াম, ফসফরাস) গুলো ধীরে ধীরে চায়ের পানিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এটির ঘনত্ব খুবই বেশি হবে তাই বাগানে প্রয়োগের পূর্বে পানিতে মিশিয়ে নিন। এক গ্যালন পানিতে এক কাপ চা দিলেই যথেষ্ট হবে। এটি বাগানের উদ্ভিদ যেখানে আছে সে মাটিতে প্রয়োগ করুন এবং দিনে ৩ বার নজরদারি করবেন।
খোসার অবশিষ্টাংশ গুলো কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না? ওগুলো দিয়ে আপনার উদ্ভিদের জন্য আরও খাবার তৈরি করুন। সবচেয়ে সহজ হল খোসাগুলো কম্পোস্ট বিন এ ফেলে দিন।
কিন্তু আপনি যদি সময় নষ্ট না করতে চান তবে ওগুলো ব্লেন্ডারে পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে খাঁটি সার তৈরি করে নিন।
আপনি জানেন কি? এই কলার খো পাউডার হিসেবে ও তৈরি করে রাখতে পারেন এবং পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারবেন!
একটি ফুড ডিহাইড্রেটর নিয়ে ওতে কলার খোসা ১৬০° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ৮-১০ ঘন্টা রেখে দিন অথবা পার্চমেন্ট কাগজে নিয়ে ওভেনে রান্না করুন ৮-১০ ঘন্টা খুবই কম তাপমাত্রায়।আপনি এটি সূর্যের আলোয় ও শুকাতে পারেন।
একবারে শুকিয়ে গেলে একটি ফুড প্রসেসর বা কফি গ্রাইন্ডারে কুচি করে নিন। এটি পরবর্তীতে আপনার বীজে বা চারায় ব্যবহার করুন।
কিভাবে কলার খোসার সার প্রয়োগ করবেন
এক গ্যালন পানিতে এক কাপ খোসার চা মিশিয়ে নিন। এটি আপনার বাগানের গাছের নিচে মাটির উপরে প্রয়োগ করুন।
কিছু বাগানীরা তাজা কলার খোসাও ব্যবহার করে থাকেন। তাজা কলার খোসা মাটির গভীরে গাছটির চারপাশে পুঁতে ফেলা হয় যাতে পোকা ও প্রানীরা গাছ থেকে দূরে সরে থাকে।
কলার খোসা খুব তাড়াতাড়ি উদ্ভিদের দেহে পুষ্টি প্রবেশে সহায়তা করে।মাটি নরম হয়ে যাতে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কলার খোসা একটি পরিপূর্ণ সার নয়। তাই শুধুএটি মাটিতে ব্যবহার করা যাবে না বিশেষ করে উদ্ভিদের যখন নাইট্রোজেনের খুব প্রয়োজন পড়ে। এটি যেসকল উদ্ভিদ পটাশিয়ামপ্রেমী কলার খোসার সার তাদের জন্য খুবই কার্যকরী যেমন: টমেটো ও পটাটো। তাই এই সারটির সর্বোচ্চ উপকারীতাটি পাবেন যদি নাইট্রোজেন মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
এফিড পোকা প্রতিরোধে কলার খোসা
কলার খোসা উদ্ভিদের এফিড তাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এফিড কলার গন্ধ সহ্য করতে পারে না। কলার খোসার চা স্প্রে করে এফিড থেকে আপনার উদ্ভিদকে দূরে রাখতে পারেন।
এজন্য ১ ভাগ কলার চাকে ৫ ভাগ পানিতে মিশিয়ে গাছের পাতা ও কান্ডে স্প্রে করতে হবে।
কলার খোসা রসুন ও টমেটো গাছে যেভাবে ব্যবহার করবেন
আমি ভাবছি কলার খোসার সার আমার টমেটো ও রসুনের গাছে ব্যবহার করে দেখব। কারণ, টমেটো গাছের তেযন নাইট্রোজেনের প্রয়োজন নেই বলে কলার খোসার সার এর জন্য খুবই উপযোগী। রসুনের বাল্বের আকার বৃদ্ধিতে পটাশিয়াম অপরিহার্য।
কিন্তু রসুনের বৃদ্ধির সময়কালে এর অনেক নাইট্রোজেনের প্রয়োজন যা কলার খোসার সারে নেই। যাইহোক, নাইট্রোজেনের প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের পূর্বে। স্কেপ আসার পূর্বে এটি করতে হবে।
- জেনে নিন গোল মরিচের ১০ টি চমৎকার উপকারিতা - September 11, 2020
- মালবেরি বা তুঁত চাষ পদ্ধতি - May 23, 2020
- ছাদবাগানে আম চাষ – আম গাছের জোড় কলম পদ্ধতি - March 20, 2020