কুয়াশার চাঁদর মুড়িয়ে আবার আসছে শীত। ঢাকার বুকে শীতের ধাক্কা এখনো না লাগলেও ঢাকার বাইরে এসে পড়েছে শীতের আমেজ। নবান্নের দোলা দিয়ে যাওয়ার পর গ্রামের মাঠে মাঠে এখন শীতের শাকসবজি চাষের হিড়িক পড়ে গেছে। জীর্ণ শহরের বুক জূড়ে দালান-কোঠার সমারোহ রইলেও শীত আসতে না আসতেই নানারকম শীতের ফুল দিয়ে সৌন্দর্য্যবর্ধণের কাজ শুরু হয়ে যায়। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আঙ্গিণায় ইতোমধ্যে উঁকি দেওয়া করেছে খুবই সুপরিচিত একটি ফুল, যাকে আমরা এক নামে জানি গাঁদা ফুল হিসেবে।
হলুদ, কমলা, লালচে আভার এই সাধারণ ফুলটি শহর কি গ্রাম, সবখানেই অর্থনৈতিকভাবে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে আসছে। বিয়ে, পূজা-পার্বণ, আনন্দ-আয়োজন, সভা;মিছিল, কিংবা শোক দিবসের বিশেষ শ্রদ্ধার জন্যে তৈরি ফুলের তোড়া, কোথায় নেই গাঁদা ফুল। তাই এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম। জানুন বেলি ফুল নিয়ে।
সারা দেশেই গাঁদা ফুলের চাষ হয়। ৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে এই ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা শুরু হয়। যশোরের গদখালী, ঝিকরগাছা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও পটিয়া, ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষ হয় ব্যাপকহারে।
গাঁদা ফুলের গুরুত্ব
১) গাঁদা উদ্যানের অলঙ্করণের জন্য জনপ্রিয় ফুলগুলির মধ্যে একটি এবং ধর্মীয় এবং সামাজিক আয়োজনে মালা, ফুলের তোড়া তৈরির জন্য এই ফুল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
২) এর সহজে চাষপ্রক্রিয়া ও অভিযোজনযোগ্যতার কারণে এটি বাগানীদের নিকট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
৩) গাঁদা ফুল স্বল্প সময়কালের অধ্যে বাজারজাতযোগ্য, আকর্ষণীয় বিস্তৃত বর্ণালী, দুর্দান্ত আকার এবং ভাল গুণমান থাকার কারণে ফুল চাষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
৪) গাঁদা ফুল, বিশেষত মালা তৈরির জন্য আদর্শ।
৫) এগুলি বিস্তৃত মাটিতে তৈরি বেডে বা টবে জন্মাতে পারে। ফ্রেঞ্চ গাঁদা ফুলগুলো ঝুলন্ত ঝুড়ি এবং ছোট টবে চাষ করার জন্য উপযুক্ত।
গাঁদা ফুলের ব্যবহার
চোখের প্রদাহ এবং কনজেক্টিভাইটিস হ্রাস করে
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় যে, গাঁদা ফুলের নিষ্কাশিত রস দিয়ে কনজেক্টিভাইটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী চক্ষু প্রদাহজনক সমস্যার চিকিৎসা করতে সক্ষম।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে
গাঁদা ফুলের রস নিয়ে একটি গবেষণা করতে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া কানের সংক্রমণ এবং ব্যথা হ্রাস করতে চিকিৎসা করতে কানের গহ্বরে অভ্যন্তরে ড্রপ আকারে প্রয়োগ করা হয়ে। গবেষণায় এটি পাওয়া গেছে যে গাঁদা ফুলের রস ব্যবহারের মাত্র দু’দিনের মধ্যে অভ্যন্তরী-কানের ফোলাভাব এবং প্রদাহকে হ্রাস করতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ছাড়াই।
আরও পড়ুনঃ সূর্যমুখী ফুল চাষ
ত্বকের ক্ষত, পোড়া ও ফুসকুড়ি নিরাময় করে
ঐতিহাসিকভাবে, এবং এখনও, গাঁদা ফুলের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যবহার হল এটি চুলকানি, লালচে ভাব, সংবেদনশীলতা, শুষ্কতা এবং ফোলাভাব হ্রাস করতে (বা চোখের পাতা এবং অন্য কোথাও) বহুল্ভাবে প্রসিদ্ধ। এটি পাওয়া গেছে যে ক্যালেন্ডুলায় স্বাস্থ্যকর নতুন টিস্যুগুলির বৃদ্ধি উন্নত করতে, আক্রান্ত স্থানে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে, কোলাজেন উত্পাদন বাড়াতে যা ত্বককে দৃঢ় ও মজবুত করে, শুষ্ক ত্বককে আর্দ্র করে এবং অস্ত্রোপচারের পরে ত্বকের মেরামত প্রক্রিয়াটিকে গতিশীল করে।
ক্ষতিগ্রস্থ ত্বক দ্রুত সারিয়ে তুলতে গাঁদা ফুলের বিকল্প নেই। গাঁদা ফুলের রস নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে এক বিশেষ ভেষজ উপাদান তৈরি করা যায়, যেটি আমাদের অনেক কাজেই লাগতে পারে। তন্মধ্যে-
১) পোকা-মাকড় কামড়ের চিকিৎসায়
২) পোড়াস্থানের চিকিৎসায়
৩) ডার্মাটাইটিস এবং একজিমা হ্রাস করতে
৪) ক্ষত কমাতে
৫) সংক্রমিত কাটা নিরাময়
৬) দাড়ি শেভ করার পরে ত্বক প্রশমিত করতে
৭) নতুন চুল গজানোর চিকিৎসায়
৮) মাথার ত্বকে খুশকি হ্রাস করণে
৯) দুর্বল রক্ত প্রবাহ এবং ত্বকে প্রভাবিত প্রদাহের অন্যান্য লক্ষণগুলি হ্রাস করতে
মশা মাছি প্রতিরোধ করে
এর তীব্র গন্ধ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রী এবং উদ্বায়ী তেলের কারণে, গাঁদা প্রাকৃতিকভাবে মশা, কীটপতঙ্গ এবং অন্যান্য পোকামাকড়কে দূরে রাখতে ব্যবহার করা হয়। এই কারণে গাঁদা ফুলকে সাধারণত বাগানে রোপণ করা হয় এবং এর থেকে নিষ্কাশিত রস দিয়ে স্প্রে তৈরি করে ঘরে ছিটানো হয় কিংবা লোশন তৈরি করে সারা শরীরে মাখালে পোকা-মাকড় বা মশা শরীরের আশেপাশে ঘেষতে পারেনা।
সর্দি সারাতে গাঁদার চা
দক্ষিণ আমেরিকার এক ধরণের বিশেষ জাতের গাঁদা ফুল রয়েছে। এদের পাতায় সুগন্ধ আছে। এই কারণে সুগন্ধী চা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে গাঁদার পাতা ব্যবহার করা হয়। মূলত সর্দির জন্য এই গাছের রস বিশেষভাবে উপকারী। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি ততটা দেখা যায় না।
গাঁদা গাছের বিশেষ ব্যবহার
ঋতু শেষে গাঁদা ফুলের গাছ যখন তুলে ফেলা হয়, ফেলে না দিয়ে সেটিও এক বিশেষ কাজে ব্যবহার করতে পারেন খুব সহজেই। মাটি থেকে তুলে গাছকে শুকিয়ে ছড়িয়ে দিতে পারেন পুরো জমিতে। এটি জমিকে নেমাটোডের মতো মারাত্মক রোগের উপদ্রব থেকে রক্ষা করে।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020