এসে পড়েছে ইদুল আযহা। অনেকেই কোরবানি করবেন পছন্দের পশু। পছন্দের তালিকায় বেশিরভাগই থাকে গরু। এ বছর করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে শুরুতে জনপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে অনলাইন হাট। এইসব হাটের কোনো কোনোটিতে পশু বিক্রেতা ও ক্রেতাদের এক করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কোনো কোনো হাটে নিজেদের পশুই বিক্রেতারা বিক্রির জন্যে তুলছে। গরু পছন্দ হলে থাকছে দর কষাকষির করে দাম নির্ধারিত হচ্ছে। এরপর সেটিকে ক্রেতার ঠিকানায় ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।
এ বছর অনলাইনের সবচেয়ে বড় হাটটি তৈরি করেছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ডিজিটাল হাট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কোরবানির পশু বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়। করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, আইসিটি বিভাগ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৪০০০ এর অধিক গরু বিক্রিত হয়েছে।
এছাড়াও বেসরকারিভাবে কিছু প্রাইভেট অর্গানেইজেশন এই উদ্যোগ নেয়। তন্মধ্যে ecab এর (https://digitalhat.net/) Parmeeda (https://parmeeda.com/qurbani/), Sadeeq Agro(https://sadeeqagro.com/), Bengal Meat (qurbani.bengalmeat.com), গোরিলা মুভ (https://www.gorillamove.com/categories/gorilla-haat-1) অন্যতম। এরা কেউ কেউ নিজেদের পালিত গরুই হাটে তুলেছে, এবং কেউ কেউ গরু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এক করে দিয়েছেন। কিছু মার্কেটপ্লেসে অংশীদা্রি ভিত্তিতে গরু বিক্রয় হচ্ছে। উক্ত মার্কেটপ্লেস-ই কোরবানির দিন গরু কোরবানি দিয়ে প্রসেস করে গ্রাহকের বাসায় ডেলিভারি দিয়ে যাবে। তবে এই পদ্ধতিটি এখনো জনপ্রিয়তা পায় নি।
অন্যদিকে কিছু প্ল্যাটফর্মে দামাদামির সুযোগ রাখা হয়েছে। মার্কেটপ্লেসই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অনলাইনে দামদামি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে মিলছে গরুর কসাই-ও। আপনি এখন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কসাইও অর্ডার করতে পারবেন অনলাইন মার্কেতপ্লেস থেকে। টাইম স্লট বুক দিয়ে রাখলেই কসাই চলে আসবে আপনার নির্ধারিত সময়ে। কসাইকে ঈদের সকালে আগে আগে পেতে গুণতে হবে বাড়তি টাকা। একদম নিলামে তোলার মত ব্যাপার। তবে এসব মার্কেটপ্লেস থেকে কোরবানির পশু কেনা-বেচার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অনলাইনে পশু কিনতে যে অসুবিধায় ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি পরেন, তা হল গরুর ওজন। গরুর দাম ঠিক আছে কিনা সেটা বুঝতে গেলে আগে গরুর ওজন জানতে হবে৷ কিন্তু গরুর ওজন তো মাপা এতো সহজ না। আর অনলাইনে ছবি কিংবা ভিডিও দেখে গরুর ওজন আন্দাজ করাও বেশ কষ্টকর।
তাই অনলাইনে গরু বিক্রয়ে এবার ব্যবহার হয়েছে লাইভ ওয়েট পদ্ধতি। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিটি আগেও ছিল। তবে অনলাইনে ডিজিটাল হাট পদ্ধতি আসার পর এটির গুরুত্ব আরও বেড়েছে। গরুর ওজনের ধারণা পেতে লাইভ ওয়েট কার্যকরী পদ্ধতি। এখন ঘরে বসেই ক্রেতারা গরুর ওজন জেনে দরদাম করতে পারছেন। অনলাইনে ওজন এবং নিট মাংস কত কেজি হবে এসব বের করে দেয়ার কারণে অনেকে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
তবে একটা সহজ সূত্র প্রয়োগ করে বের করে ফেলতে পারেন গরুর ওজন৷ গরু কিনতে যাওয়ার সময় সাথে নিয়ে যায় ইঞ্চি টেপ৷ আর সাথে তো মোবাইলের ক্যালকুলেটর আছেই। গরু যেটা পছন্দ করবেন সেটার আনুমানিক ওজন বের করে ফেলুন। প্রথমে, সামনের পায়ের কাঁধের জয়েন্ট থেকে পেছনের পায়ের উপরের পিন বোন পর্যন্ত কত ইঞ্চি সেটা বের করুন। তারপর বুকের বেড় ইঞ্চিতে বের করে সেটার বর্গ করুন এবং দুইটা হিসাব গুণ করুন এবং সবশেষে গুণফলকে ৬৬০ দিয়ে ভাগ করুন। যে ফলাফল আসবে সেটিই হবে গরুর ওজন কেজিতে।
গরুর ওজন (কেজি)= [সামনের পায়ের কাঁধের জয়েন্ট থেকে পেছনের পায়ের পিন বোন পর্যন্ত (ইঞ্চি) x বুকের বেড়^২ (ইঞ্চি)] ÷ ৬৬০
লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরু কেনা বেশ চমৎকার ও একটি ঝামেলাবিহীন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ক্রেতাদের ঠকার সুযোগ থাকছে না। মূলত একটি ১০০ কেজি ওজনের গরু/মহিষ/ষাড় থেকে প্রায় ৬০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। বাকি ৪০ কেজিতে নাড়িভুঁড়ি থাকে। অভিজ্ঞ কসাই দিয়ে গরু কাটানো হলে সবচেয়ে বেশি মাংস পাওয়া যাবে। এটা মাথায় রেখেই মাপটা করতে হয়।
গত কয়েক মাসে করোনা আমাদের অনলাইনের প্রতি নির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেস, ভিডিও স্ট্রিমিং, অনলাইন টুলসের ব্যবহার এইসময়ের মধ্যে অনেক গুণ বেড়েছে। তবে এখনো আমাদের দেশে অনলাইন মার্কেটপ্লেস শক্তিশালি ভীত গড়ে তুলতে পারেনি। এর প্রধান কারণ দর কষাকষির সুযোগহীনতা, অতিরিক্ত দাম, প্রতারণা, ধীরগতির ডেলিভারি ও সঠিক পণ্যটি ক্রেতকে না সরবরাহ করা। এর পুরো দায় মার্কেটপ্লেসের একার না। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে অসংখ্য সেলার থাকায় তাদের উপর সঠিকভাবে তদারকি করা সম্ভব হয় না। এছাড়া আমাদের কঞ্জিউমার এসোসিয়েশন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর এখনো অনলাইন কেনাবেচায় প্রতারণায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সাড়া দিতে ব্যর্থ। ক্রেতারাও এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল নয়। নিরাপদ ও স্বচ্ছ মার্কেটপ্লেস বজায় রাখা গেলে বাংলাদেশে অনলাইন বেচাকেনার আরও দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এইজন্যে মার্কেটপ্লেসের উদ্যোক্তা, সেলার ও সরকার প্রত্যেককেই এগিয়ে আসা জরুরি।
সহযোগিতায়-
ডাঃ আবদুর রহমান (রাফি)
বি. এস. সি. ভেট সায়েন্স এন্ড এ. এইচ.
এম. এস. (ডেইরি সায়েন্স)
প্রয়োজনে: 01987899651
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021