স্কোয়াশ একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং এটি একটি ভেষজ বর্ষজীবি লতানো উদ্ভিদ। স্কোয়াশ ফল বিভিন্ন ধরণের আকার, এবং রঙের হয়ে থাকে। এই সবজিটি কুমড়া (cucurbit) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এটি ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ। স্কোয়াশ পলিশেড, গ্রিনহাউস এবং নেটশেডেও চাষ করা হয়। এর সুপরিচিত স্বাস্থ্য উপকারিতা যেমন – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা; হাঁপানি, হৃদরোগ, চোখের রোগীদের জন্যে খুবই প্রয়োজনীয় এবং ত্বকের সমস্যা প্রতিকারে এবং সুগঠিত হাড় তৈরিতে কাজ করে। এটিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাগুণ রয়েছে। জমিতে ঢেঁড়স বা ভেন্ডির চাষ নিয়ে বিস্তারিত পড়তে পারেন।
মাটি
বেলে দো-আঁশ থেকে শুরু করে দো-আঁশ মাটি স্কোয়াশ চাষের জন্য আদর্শ। ৫.৫-৬.৫ পিএইচ(pH) সমৃদ্ধ মাটি গ্রীষ্মের স্কোয়াশ চাষের জন্য উপযোগী।
জমি প্রস্তুতি
গ্রীষ্মকালীন স্কোয়াশ চাষের জন্য, ভালভাবে জমি প্রস্তুত করা প্রয়োজন। মাটি ঝুরঝুরে করতে ২-৩ টি চাষের কাজ করা হয়। ১৫ সেন্টিমিটার গভীরতার সাথে ২ মিটার দুরত্ব বজায় রেখে জমিটি তৈরি করে নিতে হবে।
বপন
বপনের সময়
বপনের সর্বোত্তম সময় হল জানুয়ারী থেকে মার্চ এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। আগাম শীতকালীন স্কোয়াশ চাষের জন্যে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে চাষ করবেন।
ব্যবধান
৪৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুটি বীজ বপন করুন।
বপন গভীরতা
বীজ ২.৫-৩.৫ সেমি গভীরে রোপণ করা উচিত।
বপনের পদ্ধতি
ডিবলিং পদ্ধতি
বীজ
বীজের হার
গ্রীষ্মকালীন স্কোয়াশ চাষের জন্য, প্রতি একরে ২ কেজি বীজ হার ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন
বপনের আগে বীজ ১২-২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এটি অঙ্কুরোদগমের হার বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। মাটিবাহিত ছত্রাক থেকে বীজকে রক্ষার জন্য, বীজ বপনের আগে কার্বেন্ডাজিম (Carbendazim) @ ২ গ্রাম / কেজি বীজ বা থিরাম (Thiram) @ ২.৫ গ্রাম / কেজি বীজ দিয়ে শোধন করুন। রাসায়নিক চিকিৎসার পরে, ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি (Trichoderma Viride) 4 গ্রাম / কেজি বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসিস (Pseudomonas fluroscens) @ ১০ গ্রাম / কেজি বীজ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করুন।
ছত্রাকনাশকের নাম | পরিমাণ (প্রতি কেজি বীজের পরিমাণ) |
কার্বেণ্ডাজিম | 2 গ্রাম |
থিরাম | ২.৫ গ্রাম |
সার
সারের প্রয়োজনীয়তা (কেজি / একর)
ইউরিয়া | সিঙ্গেল সুপার ফসফেট | মিউরেট অব পটাশ |
৯০ | ১২৫ | ২৫ |
পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা (কেজি / একর):
নাইট্রোজেন | ফসফরাস | পটাশিয়াম |
৪০ | ২০ | ১৫ |
বিছানার প্রস্তুতির আগে একর প্রতি ১৫ টন পচা গোবর সার প্রয়োগ করা হয়। সার ডোজ নাইট্রোজেন @ ৪০ কেজি / একর (ইউরিয়া @ ৯০ কেজি / একর), ফসফরাস @ ২০ কেজি / একর (সিঙ্গেল সুপার ফসফেট @ ১২৫ কেজি / একর) এবং পটাশ @ ১৫ কেজি / একর (মিউরেটস অব পটাশ @ ২৫ কেজি / একর) আকারে প্রয়োগ করুন। জমির প্রস্তুতির সময় নাইট্রোজেনের অর্ধেক ডোজ এবং ফসফরাস এবং পটাশের সম্পূর্ণ ডোজ প্রয়োগ করুন এবং নাইট্রোজেনের বাকি অর্ধেক ডোজ বপনের এক মাস পর প্রয়োগ করুন।
সেচ
বীজ বপনের পরে তাৎক্ষণিক সেচ প্রয়োজন এবং তারপরে প্রয়্যোজন অনুসারে পরবর্তীতে ৭ দিনের ব্যবধানে সেচ দেওয়া হয়। মোট, ৯-১০ টি সেচ প্রয়োজন।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
আগাছা নিয়ন্ত্রণে হ্যান্ড উইডিং বা হাত দিয়ে তুলে ফেলা অধিকতর শ্রেয়। আগাছা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য রোপনের ২ সপ্তাহ পর উদ্ভিদের অগভীর চাষ করা উচিত।
স্কোয়াশের রোগ ও পোকা-মাকড় দমন
ব্যাকটেরিয়া উইল্ট
এটি Erwinia tracheiphila এর কারণে হয়ে থাকে। এটি গাছের ভাস্কুলার টিস্যুগুলিকে প্রভাবিত করে যার ফলস্বরূপ পাতার তাজা ভাব হারিয়ে যায়।
দমন
ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ফোলিয়ার কীটনাশক স্প্রে করা হয়।
পাউডারি মিলিডিউ
পাতার উপরের পৃষ্ঠে সাদা গুঁড়ো দাগ দেখা দেয়। যার ফলে পাতা শুকিয়ে যায়।
দমন
১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম কার্বেনডাজিম ব্যবহার করলে পাউডারি মিলিডিউ নিরাময়ে সহায়তা করবে। এটি ক্লোরোথালোনিল, বেনোমিল বা ডাইনোক্যাপের (Chlorothalonil, benomyl or dinocap) স্প্রে দ্বারাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ নিরাপদ ও জৈব উপায়ে আম উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি
কিউকাম্বার মোজাইক ভাইরাস
এর আক্রমণে গাছের বৃদ্ধি আটকে যায়, পাতাগুলি নেতিয়ে আসে এবং ফলের গিট হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
দমন
মোজাইক রোগ নিরাময়ে ডায়াজিনন (Diazinon) প্রয়োগ করা হয়। ১০ লিটার পানিতে ৭ মিলি ইমমিডাক্লোপ্রিড – ১৭.৮% জলীয় (Immidachloprid-17.8% SL) রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ফলের মাছি
এটি লাউয়ে পাওয়া একটি মারাত্মক কীট। স্ত্রী পোকা উড়ে তরুণ ফলের এপিডার্মিসের নীচে ডিম পাড়ে। পরে শূককীটরা ফলের রস খেতে থাকে, ফলে স্কোয়াশ পচতে শুরু করে এবং পড়ে যায়।
দমন
ফলের এই মাছি থেকে ফসলের নিরাময়ের জন্য নিম তেল @ ৩% হারে প্রয়োগ করা হয়।
এফিড এবং থ্রিপস
এগুলি পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলে। ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে। থ্রিপসের ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়, পাতা কাপ আকারের উর্ধ্বমুখী হয়ে বাঁকাতে শুরু করে।
দমন
যদি জমিতে পোকামাকড় লক্ষ্য করা যায় তবে থায়ামেথক্সাম (Thiamethoxam) @ ৫ গ্রাম / ১৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে।
মাছি পোকা
এগুলি ছোট চকচকে কালো বিটল বা পোকা যা কচি গাছ খেয়ে ফেলে।
দমন
ম্যালাথিয়ন (Malathion) ৫০ ইসি @ ১ মিলি বা ডাইমাথোয়েট (Dimethoate) ৩০ ইসি @ ১ মিলি প্রতি এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
ফসল তোলা
মৌসুমের উপর নির্ভর করে বপনের ৬০-৮০ দিন পরে প্রথমবার স্কোয়াশ তোলা হয়। ফল পরিপক্ক হওয়ার ৭ দিন পর থেকে সংগ্রহ করা হয়। ফল সংগ্রহ ২-৩ দিনের ব্যবধানে করা উচিত।
বীজ উৎপাদন
গ্রীষ্মের অন্যান্য স্কোয়াশের জাত থেকে আপনার বাছাইকৃত জাতের বীজটি কমপক্ষে ৮০০ মিটার দূরে রাখুন। উৎপাদন চলাকালীন তিনবার পরিদর্শন করা উচিত, প্রথমবার ফুল ধরার আগে, দ্বিতীয়টি ফুল ও ফলজ বিকাশের সময় এবং তৃতীয়টি ফল তোলার আগে আগে করা হয়। দূর্বল এবং রোগাক্রান্ত গাছের বিনষ্ট করে ফেলতে হবে। ফল উজ্জ্বল হলুদ থেকে কমলা রঙে পরিবর্তিত হলে বীজ উৎপাদনের জন্যে তোলা হয়। ফলকে দুটি ভাগে কাটা হয় এবং তারপরে বীজগুলি হাত দিয়ে আলতোভাবে তুলে ফেলা হয়। বীজগুলি তখন পানি দিয়ে ধুয়ে ফলের অংশ দূর করা হয়। এরপর উত্তোলিত বীজগুলি শুকানো হয়। গড় ফলন দেয় ২-২.৫ কুইন্টাল/ একর।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020