চালতা আচার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। শহর ও গ্রামাঞ্চলে চালতার বিভিন্ন রকম আচার আমরা খেয়ে থাকি। যদিও আচার আকর্ষণীয় করতে ব্যবহৃত হয় কাপড়ের ডাই যা কিনা আমাদের জন্যে ক্ষতিকর। কচি অবস্থায় চালতাকে সবজি হিসেবে বিভিন্ন পদের সাথে রান্না করা হয়। এছাড়া লবণ, মরিচ মাখিয়েও চালতা খাওয়া হয়। উপমহাদেশে যে সব ফলের উৎপত্তি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এই চালতা। মাঝারী আকারের চিরহরিৎ বুনো প্রকৃতির গাছ দেশের সর্বত্রই জন্মে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় অঞ্চলে চালতা বেশি জন্মে। চালতার ইংরেজি নাম Elephant Apple. চালতার বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica.
জলবায়ু
প্রায় সবধরণের মাটিতেই চালতার চাষ করা যায়। এটি আর্দ্র ও উর্বর জমিতে বেশ ভালভাবে জন্মে। মাটির প্রকৃতি সামান্য অম্ল হওয়া ভাল। চালতার গাছ অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু এবং বিনা যত্নেই ভাল ভাবে বেঁচে থাকে। সাময়িক জলাবদ্ধতা এর তেমন ক্ষতি করে না। আরও পড়ুন সিলেটের প্রসিদ্ধ সাতকরার চাষপদ্ধতি।
জাত
বাংলাদেশে অনুমোদিত চালতার জাত নেই। চাষকৃত জাতগুলোর মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় যেগুলো থেকে উন্নত জাত উদ্ভাবন সম্ভব।
চালতার পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম চালতায় থাকে-
আমিষ ০.৮ গ্রাম
শ্বেতসার ১৩.৪ গ্রাম
চর্বি ০.২ গ্রাম
খনিজ ০.৮ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম
শক্তি ৫৯ কিলোক্যালোরি
চালতার ঔষধি গুণাগুণ
চালতা ঔষধি গুণাগুণে অনন্য। কচি চালতা পেটের গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও কফ, বাত ও পিত্তনাশক হিসেবে কাজ করে। পাকা ফলের রস চিনিসহ খেলে সর্দিজ্বর নিয়ন্ত্রিত হয়।
রোপণের সময়
মে থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে নির্বাচিত জমিতে চারা রোপণ করতে হবে।
বংশবিস্তার
সাধারণত বীজ থেকে চালতার বংশবিস্তার ঘটানো হয়। বীজ পরিপক্ক ফল থেকে সংগ্রহ করে যত দ্রুত সম্ভব বীজতলায় বা পলিব্যাগে বীজ বপন করতে হয়। গুটিকলমের মাধ্যমে চালতার বংশবিস্তার দ্রুত করা সম্ভব। এজন্যে ১০-১২ মাস বয়সী ডাল সংগ্রহ করতে হবে। জুলাই থেকে আগস্ট মাসে গুটিকলম করার জন্যে উপযুক্ত। শিকড় গজাতে ১-১.৫ মাস সময় লাগে। গুটি কলম থেকে ১০-১১ মাসে রোপনের উপযোগী হয়ে যায়। আরও পড়ুন রেড লেডি পেঁপে চাষ।
রোপণ পদ্ধতি
সমতল ভূমিতে চালতার চারা সাধারণত বর্গাকার বা ষড়ভূজাকার প্রণালীতে লাগানো যেতে পারে। উঁচু নিচু জমিতে কন্টুর রোপণ পদ্ধতি মেনে রোপন করতে হয়।
মাদা তৈরি
৭মি x ৭ মি করে গাছে গাছে দূরত্ব রাখা উচিত। ১মি x ১ মি x ১ মি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে। চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে ১৫-২০ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমওপি ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
.
মাদা ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর চারা সোজাভাবে রোপন করে বাঁশের খুটি দিয়ে সোজা করে রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ
মূলত চারার রোপনের পূর্বেই যে সার দেওয়া হয়, সেটিই উপযুক্ত। এরপর তেমন একটা সার প্রয়োগ না করলেও চলে। তবে পূর্ণবয়স্ক গাছে প্রতিবছর নিম্নোক্ত পরিমাণ সার দিলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।
গোবর সার ১৫-২০ কেজি
ইউরিয়া ১ কেজি
টিএসপি ৫০০ গ্রাম
এমওপি ৫০০ গ্রাম
উপরোক্ত সার সমান দুইভাগে ভাগ করে বর্ষার শুরুতে একবার ও বর্ষার শেষে আরেকবার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি সেচ দিতে হবে।
আগাছা দমন
নিয়মিত গাছের আশেপাশে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। মূলত খরা মৌসুমে জন্মানো আগাছা বেশ ক্ষতিকর। সেজন্যে ওই মৌসুমে গাছের চারিপাশে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে, হাত দিয়ে জন্মানো আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে।
ডাল ছাঁটাই
ফল সংগ্রহের পর রোগ-বালাই ও পোকামাকড় আক্রান্ত ডাল কেটে ফেলে দিতে হবে। চারা অবস্থায় গাছকে সুন্দর আকৃতি প্রদান করার জন্যে প্রয়োজনমত ডাল ছাঁটাই করতে হবে। আরও পড়ুন বিদেশী ফল এভোক্যাডোর চাষ সম্ভাবনা।
রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন
চালতার কচি পাতা পোকা খেয়ে ফেলতে পারে। এছাড়া ফল চিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এদের আক্রমণ দেখা দিলে সুমিথিয়ন ২ মিলিলিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফল সংগ্রহ
ফল পরিপক্কতা লাভ করে যখন হালকা হলুদ কিংবা ফ্যাকাশে সবুজ বর্ণ ধারণ করে। ওইসময়ে ফল সংগ্রহ করতে হবে। আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে ফল পরিপক্কতা লাভ করে। আঘাতপ্রাপ্ত ও পোকামাকড় আক্রান্ত ফল আলাদা করে রাখতে হবে। ভাল মানের ফল রোদে কিছুক্ষণ ছড়িয়ে রেখে পতপবর্তীতে শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
ফলন
৮-১০ বছরের চালতা থেকে প্রতিবছর ২৫০-৩০০ টি ফল পাওয়া যায়।
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020