পুঁই (Basella alba) এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। পুঁই গাছের পাতা ও ডাঁটি শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে সচরাচর একে পুঁই শাক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পুঁই Basellaceae গোত্রভুক্ত বহুবর্ষজীবী উষ্মমন্ডলীয় গাছ। বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে, আসামে এবং ত্রিপুরায় সর্বত্র এর চাষ হয়ে থাকে। এর ভাজি এসব এলাকার মানুষের প্রিয় সহযোগী খাদ্য।
পুঁইশাকের বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে। তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য জাতের নামঃ
জাত | কোম্পানির নাম | বপনের সময় |
বারি ডাটা-১(লাবনি) | BARI | ফেব্রুয়ারি-জুন |
বারি ডাটা-২ | BARI | ফেব্রুয়ারি-জুন |
বাঁশপাতা,আখি,সুফলা-১ | ব্র্যাক সীড | — |
অন্যান্য ফসলের মতো পুঁইশাকেরও বিভিন্ন ধরনের রোগ দ্বারা সংক্রমিত হয়। তার মধ্যে পুঁইশাক পাতার দাদ রোগ অন্যতম।রোগটির কারন, লক্ষণ ও প্রতিকারসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
পুঁইশাক পাতার দাদ রোগ
পাতার দাগ রোগটি Cercospora beticola নামক ছত্রাক দ্ধারা সংঘটিত হয়ে থাকে। রোগটি মূলত বীজ বাহিত।
রোগের লক্ষণ
বাতাস, বৃষ্টি ও সেচের পানি দ্ধারা রোগটির জীবাণুর বিস্তার ঘটে থাকে। এ রোগ হলে প্রথমে পাতায় ছোট ছোট স্পট বা দাগ দেখা যায়।
পরবর্তীতে দাগগুলো একত্রিত হয়ে বড় আকার ধারণ করে। এক সময় পুরো পাতায় দাগ ছড়িয়ে পড়ে। তখন পাতার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে পুরো গাছ মরে যায়।
রোগটি দমনে করনীয়
- বপনের আগে প্রোভেক্স ২০০ দ্ধারা বীজ শোধন করতে হবে। প্রতি কেজি বীজের জন্য মাত্র ২.৫ গ্রাম ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
- রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা উঠিয়ে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত পাতা খাওয়াতে কোন অসুবিধে নেই।
- যদিও এ রোগ দমনের জন্য কোন নির্দিষ্ট ছত্রাকনাশক নেই। রোগের মাত্রা বেশি হলে কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে@ এক গ্রাম/মিলি হারে ব্যবহার করা যায়।
- এছাড়াও কার্বেন্ডাজিম বা ডাইফেনোকোনাজল বা প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। পড়ন্ত বিকেল বেলায় স্প্রে করলে ভাল হয়।
ছত্রাকনাশক ব্যবহারের আগে অবশ্যই খাওয়ার উপযোগী পাতা উঠিয়ে নিতে হবে। স্প্রে করার এক সপ্তাহ পর খাওয়ার জন্য পাতা সংগ্রহ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ হাইড্রোপনিকস বাগান – ঘরে বসেই যে ৮ টি গাছ পানির জারে চাষ করতে পারবেন
কাটুই পোকা বিকৃতি রোগ
কাটুই পোকা (Agrotis ipsilon )
ছোটো শুয়ো পোকা কচি পাতায় অনিয়মিত ছোট ছোট গর্ত করে এবং কান্ডের কাছাকাছি মাটির নিচে থাকে।
বয়স্ক কীড়া ফসলের কান্ডের গোড়ায় খাওয়ার জন্য রাতে মাটি থেকে বাইরে আসে।
রোগের লক্ষণ
অপ্রাপ্ত বয়স্ক কাটুই বা শুয়োপোকা কচিপাতায় অনিয়মিতভাবে ছোট ছোট ছিদ্র করে এবং মাটির কাছাকাছি পত্রপল্লবে থাকে। এদের অনুরূপ বয়স্ক পোকা বাঁধাকপি গাছের গোড়া খাওয়ার জন্য রাতে মাটি থেকে বেরিয়ে আসে। কচি বাঁধাকপি গাছ মাটির নিচে টেনে নিয়ে যেতে পারে। মাটির নিকটের কান্ড বেশি খায় যা ফসলের বর্ধিষ্ণু কলার ক্ষতি বা বৃদ্ধি ব্যাহত করে বা মৃত্যু ঘটায়।কাটুই পোকা কান্ডের মধ্যেও সুরঙ্গ তৈরি করে, যার ফলে বয়স্ক গাছ ঝিমিয়ে বা ঢলে পড়ে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- পোকার সর্বোচ্চ সংখ্যা এড়াতে আগাম চাষ করতে হবে।
- রোপনের পূর্বে এবং অঙ্কুরোদগমের পর জমির সর্বত্র আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- মথ পর্যবেক্ষণ এবং ধরার জন্য আলো ও ফেরোমেন ব্যবহার করা যায়।
- ফসল সংগ্রহের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
- রোপনের পূর্বে জমি কয়েক সপ্তাহ পতিত ফেলে রাখতে হবে।
পুঁইশাকের কৃমিজনিত শিকড় গিট রোগ বা রুটনট নেমাটড
লক্ষণ
- আক্রান্ত গাছ ছোট, দুর্বল ও হলদে হয়ে যায়।
- শিকড়ে ছোট ছোট গিট দেখা যায়।
- গিটগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়।
- রোগাক্রান্ত শিকেড়ে সহজেই পচন ধরে।
- মাটিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ে।
- একসময় গাছ মরে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
- ফুরাডান( যেমনঃ কার্বোফুরান) হেক্টর প্রতি ৪৫ কেজি হারে ব্যবহার করে কৃমি রোগ দমনে করা যায় ।
- একই জমিতে বারবার পুইশাক চাষ করবেন না।
- চারা উৎপাদনের আগে বীজতলায় ৬ সেঃমি পুরু-স্তরে কাঠের গুড়া বিছিয়ে দিযে পুড়িয়ে কৃমি ও অন্যান্য রোগ জীবাণু দমন করুন।
- বীজ বা চারা লাগানোর তিন সপ্তাহ আগে হেক্টর প্রতি আধা পচা মুরগীর বিষ্ঠা ৫-১০ টন ও সরিষার খৈল ৩০০-৬০০ কেজি প্রয়োগ করে জমিতে পচালে কৃমি দমন করা যায় ।
- জমিতে কয়েকবার দানাদার শস্য আবাদ করে জমির শিকড় গিট কৃমি কমিয়ে আবার পুইশাক চাষ করা যায় ।
- ফসলি জমিতে গাদা ফুলের চাষ করেও কৃমির বংশ বিস্তার কমানো যায় ।
আরও পড়ুনঃ ছাদে ও বারান্দায় পুষ্টিকর পুঁইশাক চাষ
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021
অনেক উপকৃত হলাম। পাতার দাদ রোগের ঔষধ কোথায় পাব আর কেমন দাম। তা জানালে ভাল হত।