উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। উদ্ভিদ ৯০ টিরও বেশী পুষ্টি উপাদান ধারণ করে।
এর মধ্যে ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান।
উপাদানগুলো হচ্ছে – কার্বন(C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন(O), নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), পটাশিয়াম (K), সালফার (S), ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেশিয়াম (Mg), আয়রণ (Fe), ম্যাঙ্গানিজ (Mn), জিংক (Zn), কপার (Cu), বোরণ (B), মলিবডেনাম (Mo), ক্লোরিন (Cl), কোবাল্ট (Co), এছাড়াও গাছ কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O) বাতাস ও পানি থেকে পায়। এর কোন একটির অভাব হলে গাছের বৃদ্ধি সঠিক ভাবে হয় না। এমন কি গাছ মারাও যেতে পারে!
চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আমরা গাছের এইসব অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপদানগুলোর অভাব বুঝতে পারবো।
নাইট্রোজেনের অভাবজনিত লক্ষণ
১) গাছের পাতা হালকা সবুজ ও হলদে হয়ে যায়।
২) প্রাথমিক পর্যায়ে পুরো জমির ধান গাছ হলদে দেখায়।
৩) বেশি অভাবে গাছের পাতা হলদে বাদামী হয়ে যায়।
৪) দানা জাতীয় ফসলের কুশি ও শীষের সংখ্যা কম হয়।
৫) ফুল ও ফলের আকার ছোট হয়।
৬) ফল ও গাছের পাতা ছোট হয় এবং শুকিয়ে যায়।
৭) গাছের পার্শ্ব কুঁড়ি শুকিয়ে যায়।
৮) গাছের অন্যান্য উপাদানের পরিশোষণের হার কমে যায়।
ফসফরাসের অভাবজনিত লক্ষণ
১) ধান গাছের পাতা খাড়া হয়, পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণ থাকে।
২) ফসফরাসের অভাবে গাছের কান্ড ও মূলের রৃদ্ধি হয় না।
৩) উদ্ভিদের কোষ বিভাজন হার কমে যায়।
৪) গাছে পাতা ছড়ানো থাকে (বাধাকপি) অর্থাৎ বাধাকপি পাতা বাঁধে না।
৫) উদ্ভিদে আমিষের পরিমাণ কমে যায়।
৬) ফুলের ও ফলের সংখ্যা কম হয় এবং আকারে ছোট হয়।
৭) গাছে ফুল ফল হয় না।
৮) বেগুনের পাতা নীলাভ হয় কিন্তু ফল ধরে না।
৯) দানা জাতীয় ফসলে চিটা বেশি হয়।
১০) বাধাকপি/ফুলকপি ফুল ও বীজ হয় না।
১১) গাছের পাতা অনেক সময় গাঢ় সবুজ দেখায় অথচ গাছের বৃদ্ধি বন্ধ থাকে।
১২) ভুট্টা গাছের পাতা নীলচে বর্ণ ধারণ করে।
১৩) গাছে কুঁশি সংখ্যা কমে যায়।
পটাশিয়ামের ঘাটতিজনিত লক্ষণ
১)গাছের পাতার কিনারা পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়।
২) উদ্ভিদ সহজেই রোগাক্রান্ত হয়।
৩) উদ্ভিদে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বাড়ে।
৪) পুরা জমিতে ধানের পাতা বাদামি হয়ে যায়।
৫) সালোকসংশ্লেষণের হার হ্রাস পায়।
৬) গাছ সামান্য খরাতেই নেতিয়ে পড়ে।
৭) গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, তবে পাতা সবুজ থাকে।
8) গাছের পাতা বাদামি বর্ণ ধারণ করতে থাকে।
৯) শিকড়ের বৃদ্ধি ঘটে না।
১০) অধিক ঘাটতিতে পাতা বিবর্ণ ও বাদামি হয়ে যায়।
১১) পাতার উপর মরা দাগ পড়ে।
১২) টমেটো ফেটে যায়।
১৩) ক্যালশিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণঃ
১৪) কচি পাতার অগ্রভাগ মুড়িয়ে থাকে।
১৫) গাছের ডগায় বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
১৬) বেগুনের পাতায় কুঁকড়ে যাওয়ার মত দেখায়।
১৭) পাতা ও কান্ডের ভঙ্গুরতা বেড়ে যায়।
১৮) গাছ টান দিলে সহজেই মাটি থেকে শিঁকড় ছিড়ে উঠে আসে।
১৯) মরিচের ও ফুলকপির পাতা মুড়িয়ে যায়।
২০) ডাল ফসলের ফলন কমে যায়।
২১) শিমের পাতা বিকৃত হয়ে যায়।
২২) দানা বীজে পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়।
২৩) মাঠ থেকে তোলা শাকসবজি অল্প সময়ের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে।
২৪) শাক-সবজির উজ্জলতা বিনষ্ট হয়।
ম্যাগনেশিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ
১) গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
২) গাছের আন্তঃশিরাস্থান সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়।
৩) ফলের আকার ছোট হয়।
৪) আখ গাছের পাতার সংখ্যা কম হয়।
৫) গোল আলুতে সালোক-সংশ্লেষণের হার খুবই কমে যায়।
৬) গাছ সজীবতা ও উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে।
৭) ডাল ফসলে গুটির সংখ্যা কমে যায়।
৮) দানার আকার ছোট হয়।
৯) রোগ, পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়।
সালফারের অভাবজনিত লক্ষণ
১) গাছের কচিপাতা হলদে হয়। পরবর্তীতে পুরাতন পাতা হলদে হতে থাকে।
২) উদ্ভিদ কোষের বিভাজন বিঘ্নিত হয়ে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
৩) গাছের আকার খর্ব হয়।
৪) জমিতে গাছ হালকা সবুজ বর্ণ ধারণ করে।
৫) গাছের কান্ডে সজীবতার বদলে শুস্কতা দেখা দেয়।
৬) তোলা শাক-সবজি অল্প সময়ের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে।
৭) ধানের কচি পাতা বিবর্ণ হয়।
৮) ফসলের পরিপক্কতা বিলম্বিত হয়।
৯) তৈলবীজ জাতীয় ফসলেন ফলন কমে যায়।
১০) সরিষা গাছে ফলের সংখ্যা কম হয়।
১১) পেঁয়াজের আকার ছোট হয়।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021