উদ্ভিদ মাটি ও বাইরের পরিবেশ থেকে কিছু অজৈব উপাদান গ্রহণ করে যা কিনা তার বিকাশ ও সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্যে অত্যাবশকীয়। এরকম প্রায় ১৬ টি অজৈব উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু উপাদান অতীব জরুরী, যা একেবারে না হলেই নয়। আর কিছু উপাদান প্রয়োজনানুসারে দরকার হতে পারে। এসব উপাদানের অভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা দেয়। সেইসব উপসর্গগুলোই চিনবো আমরা।
বোরনের অভাব জনিত লক্ষণ
লাউ ও কুমড়া
স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়। প্রজনন বাধাগ্রস্থ হয়। লতার গিঁট খাটো হয়ে যায়, পাতা ছোট হয়ে যায় ও পাতা হলদে হতে শুরু করে। ফল ফেটে যায়, ফলে মরা দাগ পড়ে।
শিম ও বরবটি
নতুন বের হওয়া পাতা গাঢ় সবুজ ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। নিচের পাতায় আন্তঃশিরা হলুদ হয়। পরে পাতা গোড়া থেকে শুকাতে শুরু করে। কান্ড ও পাতার বোঁটা ভঙ্গুর হয়। প্রান্তিক মুকুল কালো হয়ে মরে যায়। ফুল আসতে দেরী হয়। শিমে বীজ হয় না বা কম হয়।
আলু
বাড়ন্ত ডগা মরে যায়। পাতা পুরু, ভঙ্গুর ও গুটিয়ে কাপের মত হয়ে যায়। শিকড়ের মাথা শুকিয়ে যায়। আলুর খোসা খসখসে হয়। আলুর গায়ে ফাটল ধরে ও আলু ছোট হয়ে যায়। আলুর ভেতর বাদামী দাগ দেখা যায়। আরও পড়ুনঃ এলার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে যেসব ঘরোয়া উদ্ভিদ।
টমেটো
বোরনের অভাব হলে টমেটো গাছের বর্ধনশীল ডগার খুব ক্ষতি হয়। ডগা ভেতরের দিকে কুঁকড়ে শুকিয়ে মরে যায়। বোরনের অভাবে পড়া টমেটো গাছের পাতা ছোট হয়ে যায়, কুঁকড়ে যায়, বিকৃত হয়ে যায় এবং পাতার খানিকটা জায়গা ধরে ধরে বিবর্ণ হয়ে যায়। চারা গাছে উজ্জ্বল বেগুনী রঙ দেখা যায়। টমেটো গাছে শিমের চেয়েও বেশি বোরনের দরকার হয়। পরিমানমতো না পেলেই এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। আবার কখনো কখনো টমেটো ক্ষেতে অধিক চুন দেয়ার জন্যও বোরনের ঘাটতি দেখা যায়।
বেগুন
ফল ফেটে যায়।
মূলা ও শালগম
মূলার মধ্যে বাদামী থেকে কালো পচন দেখা যায়। একে ‘ব্রাউন হার্ট’ লক্ষণ বলে। চারা শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায় ও বেঁকে যায়। ডগার মুকুল শুকিয়ে যায়। কচি পাতার বৃদ্ধি কমে যায় ও বিকৃত হয়ে যায়। পাতার রঙ প্রথমে বাদামী ও পরে কালো হয়ে যায়। ফুল ফোটার আগেই ঝরে পড়ে। গাছ ছোট হয়ে যায়।
গাজর
অণুপত্রের কিনারা ক্ষয়ে যায় ও কুঁকড়ে যায়।
বাঁধাকপি
মাথা ঠিকমত বাঁধে না। মাথা ফাঁপা হয়। একে ফাঁপা কান্ড বা ‘হলো হার্ট’ লক্ষণ বলে। মাঝে কালো গর্তসহ দাগ দেখা যায়। মাথার ভিতর কচি পাতাতে বাদামী রঙের পচন শুরু হয়। কান্ডের মধ্য অংশে পচা গর্ত লক্ষ্য করা যায়।
ফুলকপি
ফুলকপি বোরনের প্রতি বেশ সংবেদনশীল। বোরনের অভাবে চারার পাতা মোটা হয়, চারা বেঁটে হয়। প্রথমে ফুলের উপর জলভেজা দাগ পড়ে। সেই দাগ প্রথমে গোলাপী ও পরে কালচে বাদামী হয়ে শক্ত হয়ে যায়। পাতা নিচের দিকে বেঁকে যায় ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। বয়স্ক পাতায় সাদা দাগ পড়ে। পরে ঐ দাগগুলো উঁচু খসখসে বাদামী দাগে রুপান্তরিত হয়। ফুলের নিচে কান্ডের মধ্যে ফাঁপা হয় ও ফাটল দেখা যায়। পরে কান্ডের মধ্য অংশ পচন ধরে ফাঁপা হয়ে যায়। আরও পড়ুনঃ ইপসম লবনের ১০ টি ব্যবহার।
মলিবডেনামের অভাব জনিত লক্ষণ
লাউ ও কুমড়া
ছোট অবস্থায় গাছের পুরনো পাতা হালকা সবুজ রঙ হয় এবং আন্তঃশিরা মটলিং বা ছিট ছিট দাগ পড়ে।
লাউ ও কুমড়ায় মলিবডেনামের অভাবজনিত রোগ
ফল ছোট হয়ে যায় এবং কচি পাতা মুচড়ে যায় ও ছিঁড়ে যায়। গাছ বেশি বাড়ে না।
শিম
পাতা ফ্যাকাশে হয়। পাতার কিনারা উপরের দিকে বেঁকে যায় এবং কিনারা ঝলসে যেতে পারে। পাতার শিরা ও মধ্যশিরা সবুজ থাকে। পাতা ছোট হয়। অনেক সময় কান্ডে কোন পাতা থাকে না।
আরও পড়ুনঃ বিভিন্ন শাক-সবজির ক্লোরিন, জিঙ্ক ও ম্যাঙ্গানিজের অভাবজনিত রোগ
বাঁধাকপি
বাঁধাকপির পাতা ঠিকমত বাঁধে না এবং পাতা উপরের দিকে বেঁকে কাপের মত আকার ধারণ করে। পাতার কিনারা হয় অনিয়মিত। পুরোনো পাতায় হলদে ছোপ দাগ পড়ে ও বিবর্ণ হয়ে ঝলসে যায়।
ফুলকপি
পাতায় পত্রফলক নাম মাত্র থাকে বা থাকে না। মধ্য শিরা খুব বাড়ে। পাতা লম্বাটে ও পাকানো হয়। সদ্য বের হওয়া পাতার ফলক মুড়ে থাকে, খোলে না। ফলকহীন কেবলমাত্র মধ্যশিরাযুক্ত পাতাকে ‘কাস্তে পাতা’ বলে। আবার প্রায়ই পাতার ফলক পুরু হয় ও বাটি আকৃতির হয়। পাতার রঙ কালচে সবুজ বা নীলাভ সবুজ দেখায়। পাতা ভাঙ্গলে সবুজ রস বের হয়। পাতার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। ফুল তেমনভাবে ফোটে না।
আলু
পাতায় হলদে ছোপ দাগ পড়ে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কখনো কখনো সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। পাতার কিনারা উপরের দিকে পাকিয়ে ওঠে। কচি পাতা ও ফুলের মুকুট তামাটে হয়। ফুল ফোটার আগে মুকুল শুকিয়ে যায়। কান্ডের অগ্রভাগের কুড়ি মারা যায়।
মূলা
পাতা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তারপর পাতায় উজ্জল হলুদ ছোপ পড়ে। পাতার কিনারা বেঁকে উপরের দিকে উঠে বাটির আকৃতি ধারণ করে।
গাজর
পাতার আগা ঝলসে যায়। পুরানো পাতায় হলদেটে সবুজ রঙ হয়।
আরও পড়ুনঃ বেগুনের স্বাস্থ্য ও আয়ুর্বেদিক গুণাগুণ
- বাংলাদেশে পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাবনা - July 10, 2020
- রকমেলন চাষ ও এর পরিচর্যা - July 6, 2020
- ঘরোয়া উদ্ভিদের রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণ – দ্বিতীয় পর্ব - July 3, 2020