আমাদের ডায়েট চার্টে ব্যবহৃত সবজির মধ্যে অন্যতম একটি সবজি হলো শসা। আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই এই সব্জিটি অনেক পছন্দ করে থাকে। এই সবজিতে অনেক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Cucumis sativus। এটি কিউকারবিটাসিয়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। শসা দেখতে কিছুটা বেলনাকার এবং বাইরে গাঢ় সবুজ ভিতরে সাদা ও বীজে ভরা, মাঝে মাঝে পাকলে ভিতরে লাল হয়ে যায়।
পুষ্টি উপাদান
শসার প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে থাকে-
জলীয় অংশ – ৯৬%
আমিষ – .৬ গ্রাম
শ্বেতসার – ২.৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম – ১৮ মিঃ গ্রাম
লৌহ – ০.২ গ্রাম
ক্যারোটিন – ৪০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন-সি – ১০ মিঃ গ্রাম
স্বাস্থ্য গুণাগুণ
ক) শসায় ক্যলরির পরিমাণ কম হলেও এতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি ও প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। শসার ছোলা সহ খাওয়া আরো বেশি ভালো, কারণ শসার খোসায় আরও বেশি ভিটামিন রয়েছে।
খ) শসায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমনঃ ফ্লেভনয়েডস, ট্যানিন্স যা দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
গ) শসায় ৯৬% রয়েছে জলীয় অংশ যা শরীর হাইড্রেট করতে সাহায্য করে।
ঘ) ওজন কমাতে সাহায্য করে কেননা এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম। তাই যারা মনে করে পেট বড় হয়ে যাচ্ছে বা শরীর মুটিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিদিন নিয়মিত শসা খাওয়া উচিত।
ঙ) শসা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে এছাড়া ডায়বেটিস রোগের জটিলতা প্রতিকারে সাহায্য করে।
চ) শসায় আছে প্রচুর পরিমাণে পানি ও আশঁ যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এবং হজমে সাহায্য করে।
ব্যবহার
শসা প্রধানত সালাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও একে সবজি হিসেবে বিভিন্ন তরকারি যেমন চিংড়ি বা ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে রান্না করা হয়ে থাকে। অনেক দেশে একে আচার বানিয়ে সংরক্ষণ করে থাকে। আর বিভিন্ন ফাষ্টফুড বার্গার, স্যান্ডউইচে শসার স্লাইস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এছাড়া মেয়েরা ঘরোয়া রূপচর্চায় মুখের প্যাক অথবা টোনার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কমাতে শসার এক পিস স্লাইস যথেষ্ট।
জাত
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু জাতের শসার চাষ হচ্ছে এর মধ্যে বিদেশী জাতের অধিকাংশই হাইব্রিড। বিএডিসি বারোমাসি ও পটিয়া জায়ান্ট নামে ২টি স্থানীয় জাত উতপাদন করে থাকে।এছাড়াও বাংলাদেশী কয়েকটি বেসরকারী সবজি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই অনেকগুলো বিশুদ্ধ জাতও হাইব্রিড শসার জাত বাজার জাত করেছে। বিভিন্ন জাতের শসার চাষ স্থানীয়ভাবে আমাদের দেশে হয়ে থাকে।যেমন-গ্রীন কিং,গ্রীন ফিল্ড, হিমেল, সান্টং -৪, বারোমাসি , পটিয়া, শিলা, আলাভী, বীরশ্রেষ্ঠ, শীতল, পান্ডা, ভেনাস,মায়াল মাতসুরি, বাশখালী, মধুমতি, নওগা গ্রীন, লাকী ৭ ইত্যাদি। বর্তমানে আমাদের দেশে হাইব্রিড জাতের অনেক শসা বাজারে পাওয়া যায়।
উপযুক্ত সময়
প্রধানত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে শসার চাষ হয়ে থাকে।
চাষ পদ্ধতি
শসা মূলত দো-আঁশ মাটির জন্য উপযোগী।
ক) যেকোনো ভালো নার্সারি থেকে ভালো মানের শসার বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর বীজকে পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
খ) মাটির টব বা মাঝারি আকৃতির পাত্র ছিদ্র করে নিতে হবে যাতে ভালো করে পানি নিষ্কাশিত হয়। মাঝারি আকৃতির টবে প্রায় ১০ টি চারা রোপণ করা যায়।
গ) পরে মাটির সাথে পচা গোবর মিশিয়ে নিতে হবে।
ঘ) মাটিতে বীজের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ গর্ত করে বীজ রোপণ করে দিতে হবে। বিকালের দিকে রোপণ করলে ভাল তাহলে এতে চারা মারা যাওয়ার চান্স কমে যায়।
ঙ) পরে মাটি চাপা দিয়ে পানি দিয়ে দিতে হবে। এর উপরে প্লাষ্টিকের কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি না পরে।
যত্ন-আত্তি
ক) শসা পানির প্রতি ভীষণ সংবেদনশীল। তাই মাটিতে পানির পরিমাণ কম হলেই পানি দিতে হবে।
খ) প্রয়োজনে শসা গাছের চারপাশে বাউনি/চাটাই দেয়া হয়।
গ) নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
ঘ) শসা গাছের মাটি খুড়িয়ে দিতে হবে।
ঘ) শসা গাছে সময়মত সার দিতে হবে।
ঙ) শসা রোগবালাই এর আশ্রয়দাতা তাই প্রয়োজনে গাছে কীটনাশক দিতে হবে।
চ) গাছ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মাচা তৈরী করে দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
সাধারণত গাছ লাগানোর ৩-৪ মাস পরে ফসল সংগ্রহ করা হয়। শসা চাকু দিয়ে কেটে সংগ্রহ করতে হয়।
আরও পড়ুনঃ ১০ টি উপকারি বহুবর্ষজীবি ঔষধি গাছ
- খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি - May 4, 2020
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় বাগানের কার্যকারিতা - April 22, 2020
- বাসা-বাড়ি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় - April 12, 2020