বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি গাছের জন্য অনেক উপকারী। বৃষ্টির পানিতে যেমন থাকে পটাশিয়াম তেমনি থাকে সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফেট ও নাইট্রেট আয়ন। তাছাড়া এই বৃষ্টির পানিতে রয়েছে নাইট্রোজেন যা গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য সুনিশ্চিত করে। এক পশলা বৃষ্টির পর ছাদ বা বারান্দার গাছগুলোকে অন্যরকম লাগে। চির সবুজ একান্তই সতেজ নির্মল লাগে যা চোখে দৃষ্টি নন্দিত মনে হয়। হ্যাঁ এই বৃষ্টির পানি আপনার ট্যাপের পানির চেয়ে অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ যার জন্যে বর্ষাকালে গাছের পাতাগুলো আরো চির সজীব আরোও সবুজ মনে হয়। তবে এই অতিরিক্ত বৃষ্টি গাছের জন্য অনেক ক্ষতিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষাকালে গাছের এই ক্ষতিকর দিক এবং কিভাবে সমাধান করা যায় ও গাছের ফলন বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হল।
১) গাছকে ছায়ায় রাখা
বর্ষাকালের অতিবৃষ্টি কিছু কিছু গাছের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনে। ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট সদস্যদের গাছ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না তাই এদের খোলা আকাশের নিচে না রাখাই ভালো। এই জাতীয় গাছগুলোকে ছায়ার মধ্যে বা ঘরের মধ্যে রাখা উচিত।
২) পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গাছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যেকোনো ঘরোয়া গাছের জন্য এমন টব বা পাত্র বাছাই করা দরকার যেটায় পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনমত ছিদ্র থাকে। আর ইদানীং বড় বড় ড্রাম ব্যবহার করা হয় তাই এই ড্রামগুলোতে যেন নির্দিষ্ট পরিমাণ ছিদ্র থাকে তা খেয়াল রাখা জরুরি।
যদি বৃষ্টির পরও টবে পানি জমা দেখা যায় তাহলে টব একদিকে কাত করে পানি ফেলে দিতে হবে। আর মাটি না শুকালে একটু খুচিয়ে দিতে হবে যাতে সম্পূর্ণ মাটি শুকিয়ে যায়। আর যদি গাছের মাটি শুকানোর ব্যবস্থা না থাকে তাহলে ঝড় বৃষ্টির সময় ঘরে এনে রাখাই উত্তম। এখন বর্ষাকালে যে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয় তার অন্যতম একটি কারণ টবে পানি জমা। তাই নিয়মিত গাছের টবগুলি দেখা দরকার যেন পানি জমে না থাকে।
৩) গাছে পানি না দেয়া
সবার কাছেই একটা দ্বিধান্বিত প্রশ্ন হলো বর্ষা মৌসুমে গাছে কি পানি দেয়া উচিত? এর উত্তর হলো না। অতি বৃষ্টির ফলে গাছে পানির ঘাটতি পূরণ হয়।
তাই গাছের মাটি না শুকানো পর্যন্ত পানি দেয়া উচিত নয়। একটা কথা মাথায় রাখা উচিত পানির অভাবে গাছ মরে না কিন্তু পানির পরিমাণ বেশি হলে গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪) টবে মাটি দিয়ে ভরাট করা
গ্রীষ্মের সময়ে আমরা যেমন টবের মাটি কয়েক ইঞ্চি নিচ পর্যন্ত ভরাট করি কিন্তু বর্ষাকালে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টবে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়া উচিত যাতে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
৫) মাটি তৈরি
অতিবৃষ্টির সময়ে অবশ্যই এমন ধরণের মাটি নির্বাচন করতে হবে যাতে মাটি খুব দ্রুত পানি শুষে নিতে পারে। আর তাই এর জন্য এঁটেল মাটি ব্যবহার করা উপযোগী।
মাটি তৈরির ক্ষেত্রে মাটির সাথে সার মেশানোর সাথে সাথে বালু ও নুড়িপাথর বেশি পরিমাণে মিশিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোকোডাস্ট বা পার্লাইট মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
৬) গাছের টব সরিয়ে দেয়া
অনেক সময় পিপড়া বা অন্যান্য ছোট ছোট পোকা টবের নিচে বাসা তৈরি করে। এসব পোকামাকড় গাছের অনেক ক্ষতি করে। তাই গাছের টব সরিয়ে নিয়ে পোকামাকড় ধ্বংস করতে হবে।
৭) সার
বর্ষাকালে সার প্রয়োগ না করাই ভালো। কেননা বৃষ্টির পানিতে যে পরিমাণে নাইট্রোজেন বা অন্যান্য উপাদান থাকে তা গাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। তাই সার দেয়া উচিত নয়। যদি একান্তই সার দেয়া দরকার মনে হয় তাহলে জৈব সার দিতে হবে। অন্য কোনো রাসায়নিক সার না দেয়াই ভালো।
৮) কীটনাশক
সারের মতোই বর্ষাকালে কীটনাশক ব্যবহার না করাই ভালো। তবে পোকামাকড় নিধনে জৈব কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত। ৫ মিলি লিটার নিমের তেল, ১০ ফোঁটা সাবান পানি ও পানি মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করে দিতে হবে।
গাছে যদি মুকুল ধরে তখন কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত তাতে অন্যান্য মুকুল বা পাতায় পোকা আক্রমণ করার আশংকা কমে যায়। (৯) ফানজিসাইড বর্ষাকালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রতি ৭ দিন অন্তর অন্তর ফানজিসাইড স্প্রে করা। কারন এই বর্ষায় বৃষ্টির পানি জমে ছত্রাক হয়ে থাকে ফলে গাছের ডাল পালা নষ্ট হয়ে যায়। তাই হাতের কাছে যেকোন ফানজিসাইড স্প্রে করে দেয়া উচিত।
৯) খুটি দেয়া
ঝড় বৃষ্টি হলে অনেক সময় গাছ বিশেষ করে চারা গাছ একদিকে হেলে যায়। তাই গাছের অবস্থান ঠিক রাখার জন্যে গাছের সাথে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
১০) কেঁচোর উপদ্রব
মাঝে মাঝে দেখা যায় গাছের মাটিতে অনেক কেঁচো। এতে ঘাবড়ানোর কোনো কারন নেই। কেননা কেঁচোকে প্রকৃতির লাঙল বলা হয়। এই কেঁচো মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে থাকে।
১১) মরা ডাল-পালা কেটে ফেলা
গাছের মরা ডাল পাতা, বা মরা ফুল, ফল কেটে ফেলা উচিত।
অবাঞ্চনীয় কান্ড বা পাতা থাকলে গাছকে যেমন অসুন্দর লাগে তেমনি গাছে খাদ্য বা পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
- খোলা লোমকূপজনিত সমস্যা সমাধানে দৈনন্দিন সবজি - May 4, 2020
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় বাগানের কার্যকারিতা - April 22, 2020
- বাসা-বাড়ি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার উপায় - April 12, 2020
খুব গুরুত্বপূর্ণ টিপস। জেনে উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ।