আজকাল আমরা সবাই কমবেশি ইনসোমনিয়ায় ভুগে থাকি। অসংখ্য রাত পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে হয়ত আমরা তার প্রভাবটাও বুঝতে পারছি, যেটি কিনা দিন দিন আমাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এই ইনসোমনিয়ার কারণ হতে পারে দুঃশ্চিন্তা, সারাদিনের কাজের ধকল। হতে পারে আপনার চারপাশের দূষিত বায়ু এমনকি বাতাসে জন্মানো মোল্ডস থেকেও।
Eartheasy রিপোর্টে বলা হয়েছে,
“আবদ্ধ ঘরে যেসব উপাদানে আমাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায় তার মধ্যে রয়েছে, ফরমাল্ডিহাইড, উদ্বায়ী জৈব উপাদান, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কীটনাশক, ফেনল এবং রেডনস। এসব দূষক “সিক বিল্ডিং সিনড্রোম” নামের এক রোগের উদ্ভব ঘটায় যেটি থেকে এলার্জি, মাথাব্যথা, স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, ক্যানসার, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
১৯৮৯ সালে নাসার এক বিখ্যাত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, “ঘরোয়া উদ্ভিদ বাতাস থেকে ক্যান্সার সৃষ্টকারী উদ্বায়ী জৈব উপাদানগুলো শুষে নিতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে একটি রিসার্চে দেখা যায় যে, টবের মাটিতে জন্মানো ক্ষুদ্র জীবগুলোও বাতাস থেকে দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলতে সাহায্য করছে।”
এসব গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন যে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করতে ঘরোয়া উদ্ভিদের বিকল্প নেই।
তাই আজকে আমরা এমনই ১২ টি ঘরোয়া উদ্ভিদ(Indoor Plants) সম্পর্কে জানব যা আমাদের ঘরের বাতাসকে বিশুদ্ধ করে এবং ধকলমুক্ত হয়ে প্রশান্তির ঘুম এনে দিতে সাহায্য করবে।
অ্যালোভেরা(Aloe Vera)
অ্যালোভেরার সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। হয়ত শখের বশে আমরা এটি বারান্দা কিংবা ছাদের কার্নিশে লাগিয়েছি। এটিকে বলা হয় “চিরযৌবনের উদ্ভিদ”। সৌন্দর্য চর্চায় সাহায্যের পাশাপাশি এ গাছ আমাদের ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এলোভেরার গুণাগুণ জানতে পড়ুন।
ইংলিশ আইভি(English Ivy)
ইংলিশ আইভি খুব সহজে জন্মালেও এটি বিষাক্ত বলে বাচ্চা এবং পোষা প্রাণি থেকে দূরে রাখাই শ্রেয়।
এলার্জি কিংবা এ্যাজমার সমস্যা থাকলে এটি সারাতে এবং সাথে ঘুমকে উদ্দীপ্ত করে। এটি ৯৪% বায়ুবাহিত রোগ আর ৭৮% বায়ুবাহিত মোল্ড মাত্র ১২ ঘন্টায় ধ্বংস করে দিতে পারে।
গোল্ডেন পোথোস(Golden Pothos)
গোল্ডেন পোথোস একটি বিশেষ বায়ুশোধনকারী উদ্ভিদ। এটির পাতাও হালকা বিষাক্ত হয়ে থাকে বলে এটিকে বাচ্চা এবং পশুপাখি থেকে দূরে রাখা শ্রেয়। ১১ টি সহজে পরিচর্যাযোগ্য ঘরোয়া উদ্ভিদ জানতে পড়ুন।
গার্ডেনিয়া(Gardenia)
সাদা ফুলের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর এই গাছটি ঘুম এবং প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে।
জেসমিন(Jasmine)
জেসমিনের সুন্দর ঘ্রান আপনার সারাদিনের ক্লান্তিকে দূরে রেখে আপনাকে এনে দিবে প্রশান্তির ঘুম। এমনকি এটির ঘ্রান আপনার শরীরের কার্যক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
ল্যাভেন্ডার(Lavender)
ল্যাভেন্ডারের সুন্দর ঘ্রান আপনার হৃদস্পন্দনকে শান্ত করে আপনাকে স্ফূর্ত হতে সাহায্য করে। এটি বাচ্চাদের কান্না থেকে দূরে রেখে বাচ্চা এবং মা উভয়কে প্রশান্তি দেয়।
ব্যাম্বু পাম(Bamboo Palm)
ব্যাম্বু পাম বাতাসের বিষাক্ত পদার্থকে পরিশোধিত করে আপনাকে গভীর ঘুম এনে দিবে।
জার্বেরা ডেইজি(Gerbera Daisy)
জার্বেরা ডেইজি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এটি আপনাকে এ্যালার্জি ও অ্যাপেনিয়া থেকে দূরে রাখবে।
এটির রয়েছে লাল, হলুদ, গোলাপী ফুল যা আপনার মনকে শান্তির ছোঁয়া এনে দিতে পারে।
স্পাইডার প্ল্যান্ট(Spider Plant)
স্পাইডার প্ল্যান্ট বায়ুশোধনকারী সবচেয়ে শক্তিশালী উদ্ভিদ যা কিনা আপনার ঘরের বাতাস থেকে ৯০% ক্যান্সার সৃষ্টকারী জীবানু ধ্বংস করে এবং গরের অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ায়।
স্নেক প্ল্যান্ট(Snake Plant)
স্নেক প্ল্যান্ট কার্বন ডাই অক্সাইড বিশদ পরিমানে শোষণ করে রুমের অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়। যা আপনাকে গভীর ঘুম এনে দিতে সাহায্য করে। স্নেক প্ল্যান্টের উপকারিতা জানুন।
পীস লিলি(Peace Lily)
এই সুন্দর প্ল্যান্টটি আপনার ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ফরমাল্ডিহাইডস দূর করে বাতাসকে প্রাকৃতিকভাবে পরিশুদ্ধ করে।
এটি ঘরের আর্দ্রতা বাড়িয়ে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
এসব খুব অবাক করা কাজ মনে হলে বাস্তবেই এই গাছগুলো এভাবেই আমাদের শরীর, মন ও স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখা দরকার।
সেগুলো হলো-
১. সপ্তাহে একবার হলেও গাছগলোর পাতা মোছা যাতে অক্সিজেন চলাচলে অসুবিধা না হয়।
২. সবসময় বিষাক্ত গাছগুলো সাবধানে রাখা যাতে আপনার পরিবারের কারো কোনো ক্ষতি না হয়।
৩. অবশ্যই এ সকল উদ্ভিদ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021
Thanks a lot.