চুল হলো সৌন্দর্য্যের প্রতীক। আর তা যদি হয় ঘন চুল তাহলে তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। তাই নিজেকে অন্য সবার মাঝে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে চুলের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। আমাদের দেশের আবহাওয়ার বর্তমান যে অবস্থা তাতে তো চুলকে সুস্থ রাখতে পারাটাই একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ! ঘরে থাকলেও চুল হতে পারে রুক্ষ। রুক্ষ ও জট ধরা চুলে আগা ফাটার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া অতি রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার, অত্যাধুনিক স্টাইলে চুল কাটা, চুলে অতিরিক্ত হিট প্রয়োগ – এ সব আমাদের স্টাইল ও ফ্যাশনে সাহায্য করলেও চুলের ক্ষতি করে। চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে বাঁধা সৃষ্টি করে ফলে প্রচুর চুল পড়তে থাকে। আবার অনেকের চুল পড়ে পাতলাও হয়ে যাচ্ছে। তাই আজ দেয়া হলো বেশ কিছু উপাদানের নাম ও ব্যবহার যেগুলোর দাম আপনার নাগালের মধ্যেই আছে এবং সেই সাথে নেই কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
চুলের যত্নে কিছু টিপস
ক) সকালে ঘুম থেকে উঠেই চুল আঁচড়াতে হবে। নাহলে চুলের জট থেকেই যাবে। আর এই জটবাঁধা চুল আছড়ালেই চুল কাটতে শুরু করে।
খ) নিয়মিত চুল ধুয়ে নিতে হবে। যাদের নর্মাল চুল তারা একদিন পর পর চুল ধুয়ে নিতে পারে । যাদের তৈলাক্ত চুল তাদের প্রতিদিন চুল ধুয়ে নিতে হবে।
গ) ভেজা চুল আঁচড়ানো যাবে না। ভেজা চুল নরম থাকে তাই নরম তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুছতে হবে।
ঘ) চুল নরম ও মসৃণ থাকে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
ঙ) অনেকেই চুলে তেল ব্যবহার করে না। শ্যাম্পুর পাশাপাশি চুলে তেল দিতে হবে। শুষ্ক চুলে প্রাণ ফেরাতে, চুলের ঝড়ে পড়া রুখতে ও চুলকে রেশমী ও মসৃণ করতে তেলের বিকল্প নেই।
তাছাড়া আরো কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা চুলের যত্ন নিতে অনেকটাই সাহায্য করে।
অ্যালোভেরার পেস্ট
ত্বক ও চুল পরিচর্যায় অ্যালোভেরা একটি অন্যতম উপাদান। অ্যালোভেরা ৪ টেবিল চামচ, দই ৩ টেবিল চামচ, তেল ২ টেবিল চামচ। সবগুলো উপাদান মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিন। ১/২ ঘণ্টার পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনার চুল খুব দ্রুত ঝলমলে সিল্কি করবে।
গরম তেল
চুলের পুষ্টি যোগাতে তেলের ব্যবহার অপরিসীম। গরম তেল চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলকে করে উজ্জ্বল। ২ টেবিল চামচ বাদাম তেল, অলিভ অয়েল, জোজোবা অয়েল, নারকেল তেল নিয়ে একটি পাত্রে গরম করে নিন। হালকা গরম হলে এটি নামিয়ে মাথায় ভাল করে ম্যাসাজ করুন। গরম জলে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মাথা পেচিঁয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মধু
মধু আপনার চুলের পুষ্টির একটি মূল্যবান উৎস। চাইলে শুধু মধুও ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে মধু। তবে চুলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মধু খুবই আঠালো, সে জন্য খুব অল্প পরিমাণে (৪-৫ চামচ এর বেশি না) মধু নিয়ে, তা মাথার তালুতে ব্যবহার করুন। তারপর চুল আটকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। খেয়াল রাখুন যেন প্রতিটি চুলের গোড়ায় একটু হলেও মধু পৌঁছায়। সবশেষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধু চুলকে ঘন এবং বাউন্সি করে।
ডিমের সাদা অংশ
চুলের রুক্ষতা কাটাতে ডিম খুব উপকারী। এটি চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে। ১ টি ডিমের সাদা অংশের সাথে ৩ টেবিল চামচ জল দিয়ে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ভাল করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
হেনা বা মেহেদি
হেনা বা মেহেদি হেনা চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে ভলিউম করে। চায়ের লিকার, ডিম, লেবুর রস, টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে নিন হেনা পাউডার। ঘণ্টা খানিক এভাবেই রেখে দিন। তারপরে ব্রাশ এর সাহায্যে পুরো চুলে লাগান। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজ এবং কারিপাতার মিশ্রণ
কারি পাতা চুলকে নানাভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলের শক্তি বৃদ্ধি করে, অকালপক্বতা কমায় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। তাই তো পেঁয়াজ ও কারিপাতা একসঙ্গে স্কাল্পে লাগালে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কারিপাতা তাজা অবস্থায় বেঁটে নিন। এরপর দুই টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস কারিপাতা বাঁটার মধ্যে দিন। মিশ্রণটি চুলে ও স্কাল্পে লাগান। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
দইয়ের হেয়ারপ্যাক
দইয়ের সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে একটা ঘন প্যাক তৈরী করে স্ক্যাল্পে ও চুলে লাগিয়ে আধঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ২ বার করলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।
এভাবেই নিয়মিত ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিলেই চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্বোল ও চুলের গোড়া শক্ত হয়ে চুলের বৃদ্ধি হবে।
- স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে গোশত সংরক্ষণের উপায় - July 21, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ২ - July 18, 2021
- পেঁয়াজের রোগ-বালাই ও এর দমন ব্যবস্থা – পর্ব ১ - July 18, 2021
চুল বেশি পরিমানে পরলে করনীয় কি?